শফিকুল ইসলাম, গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ): চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর রেলস্টেশনের ব্যস্ত প্ল্যাটফর্মে প্রতিদিন দেখা যায় এক পরিশ্রমী মানুষের নীরব সংগ্রাম। হাতে বাদামের বাটি, পাশে ছোট্ট ঝুড়ি, আর মুখে একটুখানি মলিন হাসি—এই দৃশ্য যেন বলে, ‘জীবন মানেই লড়াই’। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি চীনাবাদাম বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। জীবনের রোদ-বৃষ্টি, ঝড়-ঝঞ্ঝা পেরিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসেন রেলস্টেশনের কোণে। কিন্তু এক দশক আগে জীবনের এক কঠিন অধ্যায় শুরু হয়। হঠাৎ তিনি প্যারালাইজড হয়ে পড়েন—শরীরের এক পাশ অবশ হয়ে যায়। দীর্ঘ চিকিৎসার কারণে বন্ধ হয়ে যায় তাঁর ব্যবসা। তখন সংসারে নেমে আসে চরম দুঃসময়। অনেক কষ্টে সুস্থ হয়ে আবারও ফিরে আসেন নিজের পুরনো জায়গায়—রেলস্টেশনে বাদাম বিক্রিতে। এখনো প্রতিদিনের মতো ট্রেনের সিটি বাজলে তিনি বলেন, ‘বাদাম নেন ভাই, গরম গরম বাদাম!’ এই ডাকে লুকিয়ে আছে তাঁর বেঁচে থাকার সাহস, জীবনের জেদ।
অভাবের সংসারে অবিচল মানুষটি তাঁর সংসারে আছেন এক ছেলে ও দুই মেয়ে। জীবনের কষ্টের মধ্যেও এক ছেলে ও এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন নিজের উপার্জিত টাকায়। বাকি মেয়েটিও লেখাপড়া করছে তাঁর কষ্টের টাকায়। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘এত বছর বাদাম বিক্রি করছি, অথচ বয়স্ক ভাতা বা প্রতিবন্ধী ভাতা কেউ দেয়নি। অভাবে দিন কাটাই, কিন্তু কাজ বন্ধ করিনি।’ তাঁর মুখের সেই ক্লান্ত অথচ দৃঢ় হাসি যেন সমাজের কাছে এক বার্তা—মানুষ যত কষ্টেই থাকুক, সম্মানজনক জীবনের জন্য পরিশ্রমের বিকল্প নেই।
মানবিক দৃষ্টির আহ্বান: রেলস্টেশনের যাত্রীদের কাছে তিনি হয়তো এক সাধারণ বিক্রেতা। কিন্তু তাঁর জীবনের গল্প আমাদের সমাজের অবহেলিত প্রান্তের বাস্তবতা তুলে ধরে। একজন পরিশ্রমী, অসুস্থ, অথচ আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন মানুষ এখনো সরকারি কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না-এ এক নির্মম সত্য। সমাজের সচেতন মানুষ ও প্রশাসনের দৃষ্টি যদি তাঁর দিকে পড়ে, তবে হয়তো এই প্রবীণ বিক্রেতার জীবনে কিছুটা স্বস্তি ফিরবে।