প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘বীর ওসমান হাদী, তোমাকে আমরা বিদায় দিতে আসিনি এখানে। তুমি আমাদের বুকের ভেতরে আছ এবং চিরদিন বাংলাদেশ যত দিন আছে, তুমি সকল বাংলাদেশীর বুকের মধ্যে থাকবে। এটা কেউ সরাতে পারবে না।

গতকাল শনিবার দুপুরে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদীর জানাযার আগে দেওয়া বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা আজকে তোমাকে প্রিয় হাদী, বিদায় দিতে আসিনি। আমরা তোমার কাছে ওয়াদা করতে এসেছি, তুমি যা বলে গেছ, সেটি যেন আমরা পূরণ করতে পারি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘লাখ লাখ মানুষ আজ এখানে হাজির হয়েছেন। ঢেউয়ের মতো লোক আসছে। সারা বাংলাদেশজুড়ে কোটি কোটি মানুষ এই মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছে। সবাই তাকিয়ে আছে হাদীর কথা শোনার জন্য। বিদেশে যারা বাংলাদেশী আছেন, তারাও হাদীর কথা জানতে চান। দেশের মানুষ হাদীর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করেছে বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক ইউনূস। এটি যেন সবার মনে সব সময় জাগ্রত থাকে, সবাই যেন অনুসরণ করতে পারে বলেন তিনি।

হাদীর মানবপ্রেম, মানুষের সঙ্গে তার সহজ সম্পর্ক এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এসব গুণের জন্যই সবাই আজ তার প্রশংসা করছে। তিনি বলেন, ‘সেটা আমরা মনেপ্রাণে গ্রহণ করছি। এটা যেন আমাদের মনে সবসময় জাগ্রত থাকে, আমরা যেন সেটা অনুসরণ করতে পারি।’

বক্তব্যে বার বার হাদীর দেওয়া ‘মন্ত্র’-জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতার প্রথম পংক্তি ‘বল বীর, উন্নত মম শির!’ এর কথা উল্লেখ করেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি আরও বলেন, হাদী এমন এক মন্ত্র কানে দিয়ে গেছে, যা দেশের মানুষ কোনো দিন ভুলতে পারবে না। চিরদিন কানে বাজতে থাকবে। বড় মন্ত্র হিসেবে জাতির সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। হাদীর মন্ত্র ছিল, চির উন্নত মম শির। সেই শির কখনো নত হবে না। সেই মন্ত্র সব কাজে প্রমাণ করা হবে। বাংলাদেশ দুনিয়ার কাছে মাথা উঁচু করে চলবে, কারও কাছে মাথা নত করবে না। সেই মন্ত্র পূরণ করা হবে।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘প্রিয় হাদী, তুমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চেয়েছিলে এবং সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে নির্বাচন কীভাবে করতে হয়, তারও একটা প্রক্রিয়া জানিয়ে গেছ আমাদের। কীভাবে প্রচার-প্রচারণা কার্য চালাতে হয়, কীভাবে মানুষের কাছে যেতে হয়, কীভাবে মানুষকে কষ্ট না দিয়ে তার বক্তব্য প্রকাশ করতে হয়, কীভাবে বিনীতভাবে মানুষের কাছে আসতে হয়, সবকিছু তুমি শিক্ষা দিয়ে গেছ। আমরা এই শিক্ষা গ্রহণ করলাম। আমরা এই শিক্ষা চালু করতে চাই। আমরা সবাই যে আমাদের জীবনে, আমাদের রাজনীতিকে এই পর্যায়ে নিয়ে আসতে চাই, যাতে হাদী আমাদের জীবনে স্পষ্টভাবে জাগ্রত থাকে।’

অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, ‘হাদী তুমি হারিয়ে যাবে না, তুমি কোনো দিন, কেউ তোমাকে ভুলতে পারবে না। তুমি যুগ যুগ ধরে আমাদের সঙ্গে থাকবে। আমাদের তোমার মন্ত্র পুনঃ পুনঃ মনে করিয়ে দেবে। আমরা তোমাকে মনে করিয়ে দেব, চির উন্নত মম শির। আমরা সেই মন্ত্র নিয়ে আজকে সামনের পথে এগিয়ে যাব।

বক্তব্যের শেষে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আজ হাদীকে আল্লাহর হাতে আমানত রেখে গেলাম। আমরা সবসময় তার কথা স্মরণে রেখে জাতির অগ্রগতির পথে চলতে থাকব।