মহানবমীতে গতকাল বুধবার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার চতুর্থ দিন দেবীর বিদায়ক্ষণ শুরু হয়। আজ দশমীতে কৈলাসে (স্বামীর বাড়ি) ফিরে যাবেন দেবী দুর্গা। বিসর্জন দেওয়া হবে দেবী দুর্গাকে। শাস্ত্রবিদদের মতে, মহানবরাত্রিতে দেবী দুর্গার আরাধনার বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। তবে ভক্তদের কাছে এ দিনটি আনন্দ ও বেদনার মিলনক্ষণের প্রতীক। কারণ সারা বছর যে উৎসবের অপেক্ষা থাকে, তার বিদায়বার্তা শুরু হয় এই মহানবমী নিশিতেই। গতকাল নবমী তিথি শুরুই হয় সন্ধিপূজা দিয়ে। সন্ধিপূজা হয় অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট ও নবমীর সূচনার প্রথম ২৪ মিনিটজুড়ে। মূলত দেবী চামুন্ডার পূজা হয় এই সময়ে। ১০৮টি মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে ও ১০৮টি পদ্মফুল নিবেদন করা হয় দেবীর চরণে। আর ঠিক এই কারণে পূজার মন্ত্রেও সেই বিশেষত্ব উল্লেখ করা হয়েছে।
মহিষাসুর নিধনের সময় দেবী দুর্গা প্রচ- ক্রোধে কৃষ্ণবর্ণ রূপ ধারণ করেছিলেন। তাই পূজার এই আচারের সময় দেবীকে চামু-া রূপে পূজা করা হয়, অর্থাৎ যিনি চ- ও মু-ের বিনাশিনী। পূজার এই মুহূর্তটি আরও একটি কারণে স্মরণীয়। দেবী দুর্গার আশির্বাদ নিয়ে অযোধ্যার রাজা দশরথের পুত্র শ্রীরাম চন্দ্র এই মুহূর্তেই লঙ্কার রাজা রাক্ষস রাবণকে বধ করেছিলেন। মহানবমীর সন্ধ্যায় মহাআরতি, বলিদান, নবমী হোম এবং প্রসাদ বিতরণ করা হয়। প্রত্যেক মন্দিরে সন্ধ্যা উলুর ধ্বনি, শঙ্খ ধ্বনি, ঢাকের তালে তালে আরতি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
মহানবমীতে বলিদান ও নবমী হোমের রীতি রয়েছে। এদিন ১০৮টি নীলপদ্মে পূজা হয় দেবী দুর্গার। পূজা শেষে যথারীতি ছিল অঞ্জলি নিবেদন ও প্রসাদ বিতরণ। হিন্দু শাস্ত্র মতে মহানবরাত্রিতে দেবী দুর্গার আরাধনার অনেক গুরুত্ব রয়েছে। যদিও সারা বছর ধরে যে উৎসবের জন্য অপেক্ষা করা হয়, তার বিদায়ঘণ্টা বাজিয়ে দেয় এই নবমী নিশি। তাই নবমী নিশিকে সবাই ধরে রাখতে আকুতি জানায়। বাজতে থাকে একটাই সুর ‘ওরে নবমী-নিশি, না হইও রে অবসান’।
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাবেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। প্রতিমা বিসর্জনকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে বাড়তি পুলিশ ফোর্স ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মোতায়েন থাকবে। বিসর্জন উপলক্ষে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রসঙ্গে পুলিশ জানিয়েছে, ‘যেখানে বিসর্জন হবে সেখানে এরই মধ্যে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অধিক সংখ্যক পুলিশ ফোর্স ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নিয়োজিত থাকবে। এখন পর্যন্ত নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ার মতো কোনো আশঙ্কা নেই।’ বিসর্জনের সময় দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে নগরবাসীর প্রতি ডিএমপি কমিশনার বিশেষ অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘যারা সাঁতার জানেন না তাদের নৌকায় না ওঠা ভালো।’ এ ছাড়া যারা সাঁতার জানেন, তারাও যেন লাইফ জ্যাকেট পরে নৌকায় ওঠেন, যাতে কোনো বিপদ-আপদ না ঘটে।