কুনমিং চক্ষু হাসপাতাল চীনের ইউনান প্রদেশের একটি বেসরকারি চক্ষু হাসপাতাল। বাংলাদেশের জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের সাশ্রয়ী মূল্যে চিকিৎসা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে হাসপাতালটি।

কুনমিং চক্ষু হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ঝাং মিন বলেন, 'আপনাদের দেশে জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের চোখের চিকিৎসা নিয়ে আপনার উদ্বেগ থাকতে পারে। আমাদের হাসপাতাল সাশ্রয়ী খরচে তাদের জন্য মানসম্পন্ন চোখের চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে।'

শুক্রবার (৮ আগস্ট) হাসপাতাল পরিদর্শনকারী বাংলাদেশি সাংবাদিকদের একটি দলের সঙ্গে আলাপকালে ঝাং মিন এই মন্তব্য করেন।

কুনমিং হাসপাতালের প্রস্তাব ও জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসায় সহায়তা করার এবং চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে চিকিৎসা সহযোগিতা জোরদারের ইঙ্গিত দেয়।

প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, যদিও এটি একটি বেসরকারি হাসপাতাল, এটি কম খরচে খুব ভালো চিকিৎসা এবং পরিষেবা দেয়। 'চোখের চিকিৎসার জন্য আমাদের হাসপাতালটি ইউনানের সেরা হাসপাতালগুলোর মধ্যে একটি।'

তিনি বলেন, তারা গুরুতর চোখের সমস্যা এবং আঘাতপ্রাপ্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। এছাড়াও কর্নিয়া প্রতিস্থাপনসহ বড় ধরনের অস্ত্রোপচার করা হয় আমাদের হাসপাতালে।

ঝাং বলেন, দক্ষ চিকিৎসক, চিকিৎসা কর্মী এবং অত্যন্ত উন্নত সরঞ্জামসহ উন্নতমানের চক্ষু সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে আমাদের হাসপাতাল ২৮ বছর ধরে কাজ করছে।

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের চিকিৎসকরা বিদেশি রোগীদের চিকিৎসায় অভিজ্ঞ এবং তারা সাবলীলভাবে ইংরেজি বলতে পারেন। তাই, বাংলাদেশি রোগীদের ভাষার বাধা নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই।'

ঝাং আরও বলেন, কুনমিং চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ইচ্ছুক বাংলাদেশিরা তাদের চোখের সমস্যা সম্পর্কে বিস্তারিত ইমেল পাঠিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। 'আমরা আপনাদের পরে প্রতিক্রিয়া জানাব।'

তিনি বলেন, ভারত, রাশিয়া, কোরিয়া, জাপান এবং কিছু প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা গুরুতর চোখের সমস্যায় আক্রান্ত রোগীরা সবসময়ই তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন।

চীন সরকার চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে ২৩ সদস্যের গণমাধ্যমকর্মীদের একটি প্রতিনিধিদলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

এর আগে, প্রতিনিধিদলটি কুনমিংয়ের জাপান-বিরোধী যুদ্ধ স্মারক হল পরিদর্শন করে। এটি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান, যা ইউনান জনগণের লড়াইয়ের চিত্রকে তুলে ধরে।

সফররত গণমাধ্যমকর্মীরা চীনের একটি শীর্ষস্থানীয় ভ্যাকসিন কোম্পানি ওয়ালভ্যাক্স বায়োটেকনোলজি কোম্পানি লিমিটেড পরিদর্শন করেন। এটি মানুষকে মারাত্মক রোগ থেকে রক্ষা করার জন্য নিরাপদ এবং কার্যকর ভ্যাকসিন তৈরি ও সরবরাহ করে থাকে।

পরে, প্রতিনিধিদলটি কুনমিং টংরেন হাসপাতাল পরিদর্শন করে, যা বাংলাদেশি রোগীদের জন্য নির্ধারিত চীনের পাঁচটি চিকিৎসা সুবিধার মধ্যে এটি একটি।

সফরকালে, তারা হাসপাতালের বিভিন্ন ইউনিট এবং বিভাগ পরিদর্শন করেন এবং সরবরাহ করা পরিষেবার পরিসর সম্পর্কে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন।

প্রতিনিধিদলটি ইউনান এথনিক ভিলেজ পরিদর্শনের মাধ্যমে তাদের কর্মসূচি শেষ করে। এটি এমন একটি থিক পার্ক যা ইউনান প্রদেশে বসবাসকারী ২৫টি সংখ্যালঘু জাতিগত গোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য এবং ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্ব করে।

বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বাংলাদেশি সাংবাদিকরা কুনমিং মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম অনুমোদিত হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। এসময় প্রাদেশিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং স্থানীয় সরকারি হাসপাতালের প্রধানদের সঙ্গে কথাও বলেন তারা।

বৈঠককালে চীনের ইউনান প্রদেশের কর্মকর্তারা চিকিৎসার জন্য চীনে আসা বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য উচ্চমানের এবং সহজে স্বাস্থ্যসেবা দিতে পূর্ণ সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন।

চীন সরকারের আমন্ত্রণে বাংলাদেশি গণমাধ্যম প্রতিনিধিদল বুধবার চার দিনের সফরে ইউনানে পৌঁছেছে।