বরিশলি অফিস: রাজধানীর উত্তরার মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৭ম শ্রেণির ছাত্র সামীর আহমেদের জানাযা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামাল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত জানাযায় ইমামতি করেন বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন ও খন্তাখালি দাখিল মাদরাসার অবসরপ্রাপ্ত সহ-সুপার হাফেজ মাওলানা আব্দুল জাব্বার।

জানাযায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বরিশাল জেলা আমীর ও বরিশাল-৪ (মেহেন্দিগঞ্জ-হিজলা-কাজিরহাট) আসনে জাতীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী অধ্যাপক মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল জব্বার, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলনা শহিদুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান মুক্তা, উপজেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মেহেন্দিগঞ্জ পৌর আমীর মাওলানা আামানুল্লাহ বাকের, চাঁনপুর ইউনিয়ন আমীর মাওলানা রিয়াজ উদ্দিন প্রমুখ। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং শিক্ষাবিদগণ উপস্থিত ছিলেন।

জানাযা শেষে সামীরকে দাফন করা হয় তার নানা বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে। সামীরের পৈতৃক নিবাস ছিল মেহেন্দিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রুকুন্দি গ্রামে। তবে নদীভাঙনে তার বাড়ি বিলীন হয়ে যাওয়ায় পরিবারটি রাজধানীর উত্তরায় বসবাস করছিল। সামিরের বাবা রেজাউল করিম শামীম একজন ব্যবসায়ী এবং মা রেশমা বেগম মেহেন্দিগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। সামির এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে ছোট। তার নানা মরহুম মোস্তফা কামাল ছিলেন চানপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান।

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর : রাজধানী উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণ হারানো তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সায়মা আক্তারের (৯) মৃত্যুতে গাজীপুরের বির্প্লবর্তা গ্রামে চলছে শোকের মাতম। শিশু কন্যার লাশ দাফনের পর পুরো গ্রাম এক হৃদয়বিদারক পরিবেশে স্তব্ধ হয়ে আছে।

নিহত সায়মা গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সালনা এলাকার বির্প্লবর্তা গ্রামের বাসিন্দা শাহ আলম ও রিনা বেগমের একমাত্র কন্যা। তার বড় ভাই সাব্বির হোসেন এবার একই স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেছে। ছোট্ট সায়মার দাফন হয়েছে তাদের বাড়ির আঙিনায়, দাদা-দাদির কবরের পাশে। সকাল ১১টায় জানাযা নামাজ শেষে কান্না আর হাহাকারের মাঝে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

মা রিনা বেগম অস্ফুট কণ্ঠে কাতর স্বরে বলছিলেন, “আমার সায়মার স্বপ্ন ছিলো বড় হয়ে ডাক্তার হবে, মানুষের সেবা করবে। প্রতিদিন আমি ওকে স্কুলে নিয়ে যেতাম, কাল এক ভাই নিয়ে গিয়েছিলো। যাওয়ার সময় বলেছিল— ‘মা, টা টা।’ এরপর আমার মেয়ের মুখ আমি আর দেখি নাই।”

সায়মার বাবা শাহ আলম কাঁপা কণ্ঠে বলেন, “রাতে অনেক খোঁজাখুঁজির পর জানতে পারি সিএমএইচে লাশ আছে। গিয়ে দেখি— আমার মেয়ে সায়মা, কানের দুল দেখে চিনলাম। গতরাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছিলো... আর কোনোদিন সে আমাকে জড়িয়ে ঘুমাবে না। আমার স্বপ্ন ছিলো ওকে ডাক্তার বানাবো। এখন সব স্বপ্ন ধুলোয় মিশে গেলো।”

লক্ষ্মীপুর সংবাদদাতা: মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সায়ান ইউসুফ (১৪)। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে সায়ানের লাশ লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলার বশিকপুরের গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। বেলা ৩টায় বশিকপুরের গ্রামের বাড়িতে জানাযা শেষে সায়ানের লাশ দাফন করা হয়।

নিহত সায়ান বশিকপুর গ্রামের পাল বাড়ির সন্তান। তার বাবা এএফএম ইউসুফ মাইলস্টোন কলেজ শাখার রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও মা শামীমা শাম্মী মাইলস্টোন স্কুল শাখার রসায়নের শিক্ষক। তারা উত্তরা ১০ নাম্বার সেক্টরে ভাড়া থাকতেন বলে জানা গেছে।

এদিকে সায়ানের শোকে তার দাদি কামরুন নাহার সহ আত্মীয় স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। চেষ্টা করেও কেউ তাদের কান্না থামাতে পারছেন না। শেষবারের মতো তাকে দেখতে আশপাশের মানুষ ও স্বজনরা বাড়িতে এসে ভিড় করছেন। তার মৃত্যুতে গ্রামের বাড়িতে শোকের মাতম চলছে।

গতকাল (২১ জুলাই) দুপুর ১টার পর একটি প্রশিক্ষণ বিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে গিয়ে পড়ে এবং বিধ্বস্ত হয়। সঙ্গে সঙ্গে বিমান ও স্কুল ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। যে ভবনে এটি বিধ্বস্ত হয় সেখানে বহু স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থী ছিল, যাদের বেশির ভাগই হতাহত হয়েছে। এ তালিকায় ছিল সায়ান। তাকে উদ্ধার করে নেওয়া জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ৩টার দিকে মারা যায় এ কিশোর।

এছাড়াও একই দুর্ঘটনায় লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পার্বতীনগর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের রহিমবক্স হাজী বাড়ির আব্দুস সামাদের ছেলে আফনান ফায়াজও মারা যায়। তাকে সকালে ঢাকায় দাফন করা হয়েছে বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে। আফনানও সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল।

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) সংবাদদাতা : কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে দাফন সম্পন্ন হয়েছে রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল এ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্থের ঘটনায় নিহত রজনী ইসলামের। উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাদীপুর কবরস্থানে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টায় তার দাফন সম্পন্ন হয়। এরআগে মঙ্গলবার ভোরে সাদীপুর গ্রামের (শ^শুর বাড়ি) নিজ বাড়ীতে রজনী ইসলামের লাশ নিয়ে আসা হলে সেখানে এক হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটে ও শোকের ছায়া নেমে আসে গ্রামে। নিহত রজনী ইসলামের ৩ সন্তানের মধ্যে ছোট মেয়ে ঝুমঝুম ইসলাম পঞ্চম শ্রেণীতে ও মেজ ছেলে রোহান ইসলাম ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল এ্যান্ড কলেজে। বড়ছেলে রুবাই ইসলাম এবছর এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। রজনী ইসলাম তার মেয়েকে নিতে স্কুলে গিয়েছিলেন উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল এ্যান্ড কলেজে। এসময় বিধ্বস্থ বিমানের লোহার টুকরো রজনী ইসলামের মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে গুরুতর আহত তাকে উদ্ধার করে সিএমএইচে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তবে তার মেয়ে ঝুমঝুম ইসলাম স্কুল ছুটি হওয়ার পরপরই ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ায় দুর্ঘটনা থেকে সে প্রাণে বেঁচে গেছে বলে জানিয়েছেন তার বাবা জহুরুল ইসলাম।

নিহত রজনী দৌলতপুর উপজেলার সাদীপুর গ্রামের জহুরুল ইসলামের স্ত্রী। ব্যবসা সূত্রে তিনি পরিবার সহ ঢাকার উত্তরায় বসবাস করতেন।

উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনায় নিহত দুই শিক্ষার্থীর টাঙ্গাইলের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম

সখিপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা : উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত দুই শিক্ষার্থীর বাড়ি টাঙ্গাইলে চলছে শোকের মাতম। গত সোমবার তাদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে স্বজনদের আহাজারিতে জেলার মির্জাপুর ও সখিপুরের আকাশ ভারী হয়ে ওঠে।

বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে জেলার সখিপুর উপজেলার হতেয়া কেরানিপাড়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের শিশু কন্যা তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মেহেনাজ আক্তার হুমাইরা। তার মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পরলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার বাবা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক।

নিহতদের মধ্যে আরেকজনের নাম তানভীর আহমেদ (১৪)। সে মির্জাপুর উপজেলার ওয়ার্শি ইউনিয়নের নগরভাত গ্রাম গ্রামের রুবেল মিয়ার ছেলে। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী নিহত তানভীরের চাচাতো ভাই সজিব বলেন, চাচা-চাচি সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার জন্য মাইলস্টোন কলেজে ভর্তি করেছিলেন। সজিব জানান, তানভীরের স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। সে লক্ষ্য নিয়ে প্রচুর লেখাপড়া করতো। ছুটিতে যখন গ্রামে আসতো তখনও পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকতো।

তিনি আরও জানান, ‘তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পরলে গ্রামে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। স্বজনদের কান্নায় চারপাশের বাতাস ভারী হয়ে উঠে।