বাংলাদেশ
আগামীর বাংলাদেশ হবে বৈষম্যমুক্ত ন্যায় ও ইনসাফের--ডা. শফিকুর রহমান
আগামীর বাংলাদেশ গঠনে প্রয়োজনে আগের থেকেও আরো বেশি ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে এবং সকল বৈষম্য, অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
Printed Edition

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আগামীর বাংলাদেশ হবে বৈষম্যমুক্ত ন্যায় ও ইনসাফের। যেখানে মানুষ স্বাধীন ভাবে তার মত প্রকাশের অধিকার পাবে। প্রত্যেকে তার ন্যায্য অধিকার যথাযথভাবে ভোগ করবে। তিনি বলেন আমাদেরকে অন্যায়ভাবে নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছিলো। দেশব্যাপী আমাদের নেতাকর্মীদেরকে অমানবিকভাবে দিনের পর দিন নির্যাতন করা হয়েছে, শহীদ করা হয়েছে। মুসলিম দেশে স্বাভাবিক ধর্ম-কর্ম পালন করাও মানুষের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়েছিলো। শহীদদের রক্তের ফোঁটা ও মজলুমের চোখের জলের বিনিময়ে জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচার মুক্ত হয়ে আমরা এক নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। এই দেশকে এখন সকলে মিলে গড়তে হবে। কোন বিভেদ-বিভাজন তৈরি করে এই অগ্রযাত্রাকে থামতে দেয়া যাাবে না। তিনি আগামীর বাংলাদেশ গঠনে প্রয়োজনে আগের থেকেও আরো বেশি ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে এবং সকল বৈষম্য, অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, সবকিছুর ফায়সালা আমাদের হাতে নেই। কিন্তু যোগ্যতার সবটুকু দিয়ে সত্যকে ধারণ করে সত্যের পক্ষে চেষ্টা চালাতে হবে। আবেগ এবং বিবেকের সংমিশ্রণে চলতে হবে। সংযত আবেগই শক্তি।
তিনি গতকাল রোববার দুপুরে নগরীর একটি ইনডোর মাঠে সিলেট জেলা জামায়াত আয়োজিত সদস্য (রুকন) সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
সিলেট জেলা আমীর ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য মাওলানা হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তর আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক ফজলুর রহমান। জেলা সেক্রেটারি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জয়নাল আবেদীনের পরিচালনায় সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও সিলেট জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও সিলেট জেলা নায়েবে আমীর হাফেজ আনওয়ার হোসাইন খান, জেলার সাবেক নায়েবে আমীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান, জেলা সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা মাশুক আহমদ, জেলা মজলিসে শূরা ও কর্মপরিষদ সদস্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা লোকমান আহমদ, জেলা মজলিসে শূরা ও কর্মপরিষদ সদস্য উপাধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ ফয়জুল্লাহ বাহার, জেলা শূরা ও কর্মপরিষদ সদস্য ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ আল-হোসাইন প্রমুখ।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, দেশের প্রতিটি সেক্টরে সৎ ও যোগ্য লোকদের নেতৃত্বে বসাতে হবে। সমাজ ও রাষ্ট্রের বৃহত্তর কল্যাণে সকল নেতিবাচক কার্যক্রম পরিহার করতে হবে।
জেলা আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান সভাপতির বক্তব্যে বলেন, কুরআন আমাদের জীবন বিধান। এর সাথে সকলের সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে হবে। ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল স্তরে কুরআনকে প্রতিষ্ঠা করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আজকের তরুণ শিক্ষার্থীরাই আগামীর মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে। তাদেরকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাক্ষেত্রে উৎসাহিত করাই আজকের উপকরণ বিতরণের মূল উদ্দেশ্য। শিক্ষার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত মানবতার আলোকে উজ্জীবিত হওয়া। সন্তানদের সেভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে মানুষ তাদের জন্য মন থেকে দোয়া করে। আমরা যে মানবিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি। আজকের শিশুরাই সেই স্বপ্ন পূরণ করবে। আমাদের সিলেট লেখাপড়ার দিক থেকে ক্রমশ পিছিয়ে, বিদেশমুখী হয়ে পড়েছি। এ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। শিক্ষার্থীদের সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে উৎসাহিত করতে হবে।
তিনি গতকাল রোববার বিকেলে সিলেট মহানগর জামায়াতের উদ্যোগে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও সিলেট মহানগর আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে, মহানগর সেক্রেটারি মোহাম্মদ শাহজাহান আলীর পরিচালনায় শিক্ষা উপকরণ বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক জালালাবাদ সম্পাদক মুকতাবিস-উন-নূর, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সুলতান আহমদ, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও আলেমে দ্বীন অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সালাম আল মাদানী এবং জামায়াতের সিলেট অঞ্চল টীম সদস্য হাফিজ আব্দুল হাই হারুন।
আমীরে জামায়াত বলেন, আল্লাহ পাক মানবতার মুক্তিদূত মহানবী (সাঃ) কে মানবতার শিক্ষক হিসেবে প্রেরণ করেছিলেন। এদিক থেকে ইসলামে শিক্ষাকে অত্যাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মা-বাবা ও শিক্ষকদের সামনে গেলে সকলেই দুর্বল হয়ে যায়। শিশুকালে আমাদেরকে যারা শিক্ষা দিয়েছেন তারা আমাদের অন্যতম অভিভাবক। তাই মানুষ গড়ার কারিগর সম্মানিত শিক্ষকদের শ্রদ্ধা ও যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে হবে।
নগরীর দরগাগেইটস্থ কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের শহীদ সুলেমান হলে অনুষ্ঠিত বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- সিলেট মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর ড. নুরুল ইসলাম বাবুল, সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুর রব, জাহেদুর রহমান চৌধুরী ও মাওলানা ইসলাম উদ্দিন, জামায়াত নেতা রফিকুল ইসলাম মজুমদার, ড. মাওলানা এএইচএম সোলায়মান, সিলেট মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি শাহীন আহমেদ ও শাহজালাল বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রশিবির সভাপতি তারেক মনোয়ার প্রমুখ। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন হাফিজ ইমরান খান। ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী মাজেদ মাহফুজ ও রাশেদুল হাসান রাসেল প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণীপেশার প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে নগরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ ও নগদ অর্থ উপহার তুলে দেয়া হয়।
সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন- প্রচলিত শিক্ষার সাথে নৈতিকতার সমন্বয় হলে আদর্শবান ভালো মানুষ গড়ে উঠবে। সেদিকে আমাদের অভিভাবক ও শিক্ষকদের গুরুত্ব দেয়া উচিত।