DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশ

চট্টগ্রামে সেমিনারে এটিএম মা’ছুম

‘সৎ মানবিক সমাজ গড়ে তুলতে হলে কুরআন-সুন্নাহর কাছে আসতে হবে’

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম বলেছেন, সম্পদশালীদের সম্পদের পরিপূর্ণ ফায়দা পেতে চাইলে ইসলামকে প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। তাহলেই যাকাতের পরিপূর্ণ ফায়দা পাওয়া যাবে।

চট্টগ্রাম ব্যুরো
Printed Edition

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম বলেছেন, সম্পদশালীদের সম্পদের পরিপূর্ণ ফায়দা পেতে চাইলে ইসলামকে প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। তাহলেই যাকাতের পরিপূর্ণ ফায়দা পাওয়া যাবে। যাকাত দিলাম কিন্তু ইসলামের অন্যান্য মৌলিক বিধান পালন করলাম না এই আংশিক ইসলাম দিয়ে সমাজের সমস্যা সমাধান হবে না, ব্যক্তিরও মুক্তি আসবে না। তাই একটি সৎ, মানবিক সমাজ গড়ে তুলতে হলে কুরআন-সুন্নাহর কাছে আসতে হবে, এছাড়া কোনো বিকল্প নেই। রোববার চট্টগ্রাম নগরীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট হলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরী আয়োজিত ‘বাংলাদেশে যাকাত-ওশর আদায় ও বণ্টন: অব্যবস্থাপনা ও কার্যকর কর্মপন্থা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, মানুষের রচিত আইনকানুনের কারণে যে বৈষম্য, জুলুম, শোষণ সৃষ্টি হয়েছে এগুলো থেকে সমাজকে বের করে এনে সুন্দর স্বাচ্ছন্দ্য জীবন এবং ভারসাম্যপূর্ণ অর্থব্যবস্থা নিশ্চিত করে যাকাত। সে কারণে যাকাত ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। বাংলাদেশে যত ধনী আছে তারা যদি যাকাত দেয় তাহলে আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশে একজনও দরিদ্র থাকবে না। সবাই যাকাতদাতা হয়ে যাবে এত পরিমাণ যাকাত সংগ্রহ করা যায়। কিন্তু আমাদের সমাজ যাকাতকে বর্জন করে গণতান্ত্রিক পুঁজিবাদি, তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তাচেতনার উপর গড়ে উঠার কারণে সমাজের মানুষের শোষণ বঞ্চনা দূর হচ্ছে না। যাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা চালু না হলে এটা দূর করা সম্ভবও হবে না।

তিনি আরও বলেন, আজকে সারাদেশে বৈষম্যের একটা স্লোগান উঠেছে সব জায়গায় দুর্নীতি, বৈষম্য, সীমাহীন বঞ্চনা। এগুলোর মূল কারণ যাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা চালু নেই। এটি চালু হলে মানুষ ভিতর থেকেও পবিত্র হত, মানুষ মানুষের ক্ষতি, শোষণ করত না। সুদি অর্থব্যবস্থা আমাদের দেশে চালু থাকার কারণে দিন দিন মানুষ স্বার্থপর হচ্ছে। বাংলাদেশকে বৈষম্যমুক্ত, শোষণ, দুর্নীতি, লুটপাট বন্ধ করতে হলে সম্পূর্ণ ইসলামী জীবন আদর্শকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এক্ষেত্রে যাকাত একটি দিক মাত্র।

প্রফেসর ড. আবু বকর রফিক আহমদ বলেন, যাকাতের আসল উদ্দেশ্য দারিদ্র বিমোচন করা। যাকাত একটি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। যাকাতের জন্য একটি রিসার্চ ইনিস্টিউট করতে হবে। দেশে যাকাত আদায়ের যে ব্যবস্থা আছে তাতে কাজ হচ্ছে না। একটি ইনিস্টিউট করে আলেম-ওলামাদের মাধ্যমে যাকাত আদায় ও সুষ্ঠু বন্টন নীতি করা যাবে। যাকাতের সম্পর্কে দেশের মানুষ পরিচিত হলেও ওশরের সাথে পরিচিত নেই। যাকাত একটি ধর্মীয় দায়িত্ব। রাষ্ট্রের নির্ধারিত যাকাতের কোন খাত না থাকায় যাকাতের যে উদ্দেশ্য দারিদ্র বিমোচন- তা সফল হচ্ছে না। এখন সময় এসেছে রাষ্ট্রীয়ভাবে যাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা চালু করার। এ জন্য আমাদের প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে।

আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের আরবি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান বলেন, যাকাত ও ওশর আদায়ের ব্যাপারে কুরআন ও হাদিসে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে। যাকাত দিলে সম্পদ কমবে না। যাকাত দিলে সম্পদ পবিত্র হয় এবং বৃদ্ধি পায়।

চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের নায়েবে আমীর ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ বলেন, রাষ্ট্র যতক্ষণ পর্যন্ত যাকাত আদায়ের উদ্যোগ না নিবেন ততক্ষণ পর্যন্ত যাকাতের প্রকৃত কল্যাণ জাতি ভোগ করতে পারবে না। আর রাষ্ট্র ইসলামী রাষ্ট্র না হলে এই উদ্যোগ কেউ নিবেন না। তাই আমাদের ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের চেষ্টা করতে হবে। সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে যারা যাকাত সংক্রান্ত নিয়ম-নীতি জানেন না বলে তাদের যাকাত সঠিকভাবে আদায় হচ্ছে না। আজকের এই উদ্যোগ তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

নগর জামায়াতের নায়েবে আমীর মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, যাকাত ও ওশরের হক যথাযথ ভাবে আদায় করতে হলে সর্বপ্রথম রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

অধ্যক্ষ মাওলানা খাইরুল বাশার বলেন, বর্তমান সমাজে যেসব ভাইয়েরা যাকাত ও ওশর দেন তাদের এই আয়োজন বা প্রবন্ধটি পাথেয় হিসেবে কাজ দিবে। সরকারি উদ্যোগে যাকাত বন্টনের যে খাত রয়েছে তাতে যদি নীতি নৈতিকতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের দায়িত্ব না দেয়া হয় তাহলে এর উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। যাকাত ও ওশরের আলোচনা সমাজে ব্যাপক বৃদ্ধি করতে পারলে সমাজের লোকেরা উপকৃত হবে।

সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর ড. আহমদ আলী বলেন, যাকাত হচ্ছে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সমস্যার একটি সুন্দর সমাধান। এর সাহায্যে দারিদ্র ও ক্ষুধামুক্ত সমাজ গঠিত হয়। ইসলামী রাষ্ট্রের বায়তুল মালের আয়ের উৎস হিসেবে যাকাত একটা স্থায়ী অর্থনৈতিক উৎস। লোকদেরকে অভাব ও দারিদ্র থেকে মুক্তকরণ এবং তাদের অর্থনৈতিক প্রয়োজন পরিপূরণের জন্য এটা ব্যয়িত হয়। তদুপরি সামাজিক সামষ্টিক সহযোগিতা গড়ে তোলার জন্য এটাই হচ্ছে মুসলমানদের প্রধান অবলম্বন। এটা সমাজের বেকার লোকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থাপক এবং গরীব, এতিম, বিধবা ও অক্ষম লোকদের পুনর্বাসন ও সাহায্য করার জন্য একটা বড় মাধ্যম। তদুপরি আকস্মিকভাবে বিপদে পড়া লোকেরা নিজেদের জীবন-জীবিকার নিরাপত্তা লাভ করতে পারে যাকাত ব্যবস্থার দরুন।

সভাপতির বক্তব্যে শাহজাহান চৌধুরী বলেন, আজকে আমরা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যাকাত-ওশর আদায় ও বিলি বণ্টনের উপর একটি স্বচ্ছ ধারণা নিতে পারবো যা মেনে চলতে পারলে আমাদের এই দুর্নীতি ও লুটপাট পরবর্তী সুন্দর একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবো। বিগত আওয়ামী সরকার লুটপাট, চাঁদাবাজি, খুন রাহাজানির মাধ্যমে দেশকে যেভাবে ম্যাসাকার বানিয়েছে তার থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় রাষ্ট্রে যাকাত ভিত্তিক অর্থব্যবস্থা চালু করা।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর শাহজাহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও চট্টগ্রাম মহানগরী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন এর সঞ্চালনায় সেমিনারে প্রবন্ধের উপর বক্তব্য রাখেন এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মুহাম্মদ উল্লাহ, এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ফয়সাল মোহাম্মদ ইউনুস, নগর সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান।

এতে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যাপক নুরুল আমিন চৌধুরী ও মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী, ছাত্রশিবির নগর দক্ষিণ শাখার সভাপতি মুহাম্মদ ইব্রাহিম, নগর ওলামা বিভাগের সেক্রেটারি মাওলানা মমতাজুর রহমান, নগর কর্মপরিষদ সদস্য ডা. সিদ্দিকুর রহমান, আবু বকর সিদ্দিক, আমির হোছাইন, অধ্যক্ষ মাওলানা জাকের হোসাইন, প্রফেসর মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ, হামেদ হাসান এলাহী প্রমুখ। সেমিনারে ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেন পারাবার ও পাঞ্জেরী শিল্পী গোষ্ঠী।