বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, গবেষক ও বর্ষীয়ান সাংবাদিক এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের স্থায়ী সদস্য অধ্যাপক সিরাজুল হক গত ২৬ জুন বৃহস্পতিবার নিউইয়র্ক সময় সকাল ১১:১৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রাত ৯:১৫) কুইন্স হাসপাতালে ইন্তিকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

অধ্যাপক সিরাজুল হক ১৯৪৭ সালে বরিশাল জেলার ‘আবদা বিশর’ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালে তিনি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ¯œাতক (সম্মান)সহ এম.এ. ডিগ্রি লাভ করেন। অতপর বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপক ও অধ্যক্ষ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। অধ্যাপনা ছাড়াও পেশাগতভাবে তিনি একজন সাংবাদিক। ১৯৬৫ সালে সাপ্তাহিক ইয়াং পাকিস্তান-এ কাজ করার মধ্য দিয়ে তাঁর সাংবাদিকতার সূচনা ঘটে। পরবর্তীকালে তিনি দৈনিক আজাদ ও দৈনিক জনপদসহ অনেক পত্রিকায় বিভিন্ন দায়িত্বে বহাল ছিলেন। তিনি দৈনিক সংগ্রাম এর মফস্বল সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৩ সালের ডিসেম্বরে দৈনিক জনপদের বার্তা ও নির্বাহী সম্পাদকের পদ অলংকৃত করেন এর অব্যবহিত পরে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নিযুক্ত হন। অতঃপর ১৯৮৭ সালের ১৬ জানুয়ারি তেহরানে ইসলামিক প্রোপাগেশন অরগাইনজেশন এ বাংলা বিভাগের প্রধান হিসাবে যোগদান করেন। এছাড়া তিনি কিছুদিনের জন্য তেহরান টাইমস ও ইরান রেডিও তেহরানের সাথে (খ-কালীন) জড়িত ছিলেন। ১৯৯০ সালের ৩০ জুলাই চাকুরি ছেড়ে দিয়ে দেশে চলে আসেন। ১৯৯০ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২০ বছর তিনি ঢাকাস্থ ইরানি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মুখপত্র নিউজ লেটার-এর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

সিরাজুল হক মূলত গবেষক, প্রবন্ধকার, সমালোচক, অনুবাদক ও কবি। অনুবাদ ও মৌলিক রচনাসহ তাঁর প্রকাশিত গন্থের সংখ্যা ৩০টির অধিক। এছাড়া তিনি বাংলায় অনূদিত সহীহ আল-বুখারি, পারলৌকিক জীবন এবং ইসলামের দৃষ্টিতে কাদিয়ানী ও বাহাই মতবাদসহ কতিপয় গ্রন্থের সম্পাদনা করেন। তাঁর মৌলিক রচনা মুক্তির পথ প্রকাশিত হয় ১৯৭২ সালে। তাঁর আরও কয়েকটি প্রবন্ধ ও কবিতার বই প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। বহতা নদীর মতো তাঁর প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। সম্প্রতি প্রকাশিত তাঁর কাব্যগ্রন্থ হলো এসো বৃষ্টি ঝড়ের বেগে। জনাব সিরাজুল হক অধুনালুপ্ত মাসিক তাহজীব ও সাপ্তাহিক ইংরেজি ডধষভধলধৎ-এর সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথেও তিনি জড়িত রয়েছেন। তিনি বাংলা, ইংরেজি, আরবি, ফারসি, উর্দু, হিন্দি প্রভৃতি ভাষায় সুপ-িত। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

মৃত্যুকালে তিনি দুই কন্যা, দুই পুত্র, দুই জামাতা, দুই পুত্রবধু, নাতি-নাতনী, আত্মীয়-স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী ও শুভাকাঙ্খি রেখে গেছেন। আমরা তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনা করি।

তাঁর জানাজার নামাজ আজ রোববার বাদ আসর ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে এবং তাঁকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে।