ভারতের বিমান হামলায় ভেঙে চুরমার পাকিস্তানের মসজিদ ও বাড়িঘর

* পাঁচটি ভারতীয় রাফাল যুদ্ধবিমান গুলী করে ভূপাতিত করেছে পাকিস্তান

* হামলায় দু’দেশে নিহত ৪১, আহত শতাধিক

* ভারতকে পাল্টা জবাব দেওয়ার ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ পেল পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী

পরমাণু অস্ত্রধারী দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে। কাশ্মীরের পেহেলগাম ইস্যুতে উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তানের ভূখ-ে হামলা চালায় ভারত। ভারতের বিমান হামলায় ভেঙে চুরমান হয়েছে পাকিস্তানের মসজিদ ও বাড়ি-ঘর। পাল্টা হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানও। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ দাবি করেছেন, সীমান্ত আগ্রাসনের জবাবে পাকিস্তান বিমানবাহিনী ইতোমধ্যে পাঁচটি ভারতীয় রাফাল যুদ্ধবিমান গুলী করে ভূপাতিত করেছে। পাশাপাশি ভারতের ব্রিগেড সদরদপ্তরে পাল্টা হামলা চালিয়ে সেটি ধ্বংস করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সংঘাতের ইতিহাস আছে। এই ঘটনা একটি বিপজ্জনক অবস্থানে ঠেলে দিয়েছে। ইসলামাবাদ ভারতের হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। এদিকে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি (এনএসসি) বলেছে, আত্মরক্ষার স্বার্থে পাকিস্তান নিজেদের মতো করে, যেকোনো সময় ও যেকোনো পদ্ধতিতে পাল্টা জবাব দেওয়ার ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ পেল পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী। বিবিসি, জিও নিউজ, ডন, এনডিটিভি, সিএনএন, রয়টার্স জানিয়েছে, অপারেশন সিঁদুরে উচ্চ ও দীর্ঘ পাল্লার হামলা চালাতে সক্ষম এমন বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করেছে দিল্লি। এই অস্ত্রগুলোর মধ্যে স্কাল্প ক্রুজ মিসাইল, হেমার বোমা ও লোটারিং মিউনিশন (আত্মঘাতী ড্রোন) উল্লেখযোগ্য। এমন অবস্থায় আরও বৃহত্তর সংঘাতের আশঙ্কার মধ্যেই সীমান্তে ভারতীয় সেনাবাহিনী ‘সাদা পতাকা’ উড়িয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তান। গতকাল বুধবার ভোরে চালানো এই পাল্টাপাল্টি হামলায় দুই দেশে অন্তত ৪১ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছে শতাধিক। উত্তেজনা এখনো থেমে নেই। যেকোনো সময় আরও বড় পরিসরে হামলার শঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। চিরবৈরি দু’দেশের সংঘাতে এখন পর্যন্ত কী কী সমরাস্ত্রের ব্যবহার হলো, তা নিয়ে কৌতূহল অনেকের।

এদিকে হামলার জেরে পাকিস্তানের আকাশপথে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতের আকস্মিক মিসাইল হামলার কারণে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশগামী দুটি ফ্লাইট পাকিস্তানের আকাশ থেকে ফিরে গেছে। এর মধ্যে তুর্কি থেকে আসা তার্কিশ এয়ারলাইন্সের ঞক-৭১২ ফ্লাইটটি ওমানের মাসকটে অবতরণ করে এবং কুয়েত এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট পুনরায় কুয়েতে ফিরে যায়। পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, কোটলি, বাহাওলপুর, মুরিদকে, বাগ ও মুজাফফরাবাদসহ একাধিক শহরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ভারতের হামলাকে ‘কাপুরুষোচিত’ বলেছে পাকিস্তান। ভারত সরকার এক বিবৃতিতে জানায়, দেশটির সশস্ত্র বাহিনী ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে একটি সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছে। তাদের দাবি ‘এই অভিযানে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে অন্তত ৯টি সন্ত্রাসী ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী ভারতের আগ্রাসনের উপযুক্ত জবাব দিচ্ছে।

ভারতের হামলায় ভেঙে চুরমার পাকিস্তানের মসজিদ: পাকিস্তানে হামলা চালিয়েছে ভারত। গতকাল বুধবার ভোরে চালানো হয় এই হামলা। ভারতের বিমান হামলায় ভেঙে চুরমার হয়েছে পাকিস্তানের মসজিদ। পাকিস্তানও পাল্টা হামলা চালিয়েছে। ভারত পাকিস্তানের ছয়টি স্থানের ২৪ স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছেন দেশটির সেনা মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের ভাওয়ালপুরের আহমেদপুর শারকিয়া, মুরদিক, শিয়ালকোট এবং শকরগড় ও পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরের কোটলি ও মুজফ্ফরাবাদে এইসব হামলা হয়েছে।

পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ভারতের হামলার সময় স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এ সময় নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে আশপাশের পাহাড়গুলোর দিকে ছুটে যান তাঁরা। রয়টার্সকে স্থানীয় বাসিন্দারা এ কথা জানান। হামলার সময়ের পরিস্থিতি বর্ণনা করে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, চারপাশে বিস্ফোরণের শব্দ হচ্ছিল, ভূমি কেঁপে উঠছিল। তখন মসজিদের লাউড স্পিকারগুলোতে

এদিকে পাকিস্তানের মসজিদেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। পাকিস্তানের মুজাফ্ফরাবাদে বিলাল মসজিদের হামলা চালিয়েছে ভারত। হামলায় মসজিদটি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে পড়েছে এর মিনার। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মিডিয়া উইং আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আহমেদ শরীফ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মুজাফ্ফরাবাদের ডেপুটি কমিশনার মুদাচ্ছের ফারুক জানিয়েছেন, মসজিদটিতে হামলায় একজন নিহত হয়েছেন। জিও নিউজের খবরে বলা হয়, সবচেয়ে বড় হামলাটি হয়েছে পাঞ্জাব প্রদেশের বাহাওয়ালপুরের আহমেদপুর শারকিয়ায়। সেখানে একটি মসজিদের আঙিনায় ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একটি তিন বছরের শিশুও রয়েছে।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ আরো জানিয়েছে, কোটলিতে মসজিদ-ই-আব্বাস নামে একটি মসজিদকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ভারতীয় বাহিনী। ওই হামলায় ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরী এবং ১৮ বছর বয়সী এক যুবক নিহত হয়েছেন। পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ বলছে, ভারত পাকিস্তানের ছয়টি স্থানে ২৪টি হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্র জিও টিভিকে জানান, ভারতের হামলায় যেসব স্থাপনায় আঘাত হানা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে দুটি মসজিদও রয়েছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মোহাম্মদ আসিফ জিও টিভিকে বলেন, ভারত যেসব স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে, সেগুলো সম্পূর্ণভাবে বেসামরিক এলাকা কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর অবকাঠামো নয়। তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাসী শিবিরে হামলার যে দাবি ভারত করেছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

ঘটনার পরপরই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এক লাইনের বার্তায় বলেছেন, ‘বিশ্বকে সন্ত্রাসবাদের প্রতি জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে।’

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা-বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের রুট বদল: ভারত ও পাকিস্তানের মাঝে মধ্যে চলমান উত্তেজনার কারণে ইউরোপগামী অনেক ফ্লাইটের রুট পরিবর্তন বা বাতিল করেছে এশিয়ার একাধিক এয়ারলাইন্স। পাকিস্তান ও পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে ভারতের বিমান হামলার পর ইসলামাবাদ জানায়, তারা পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির প্রভাব পড়ছে আন্তর্জাতিক আকাশপথেও।

তাইওয়ানের ইভা এয়ার জানিয়েছে, নিরাপত্তাজনিত কারণে ভারত ও পাকিস্তানের সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল এড়িয়ে চলার জন্য নতুন করে রুট নির্ধারণ করছে ইউরোপগামী ও ইউরোপ ফেরত ফ্লাইটগুলো। বিমান সংস্থাটি আরও জানায়, ভিয়েনা থেকে ছেড়ে যাওয়া একটি ফ্লাইটকে সেখানেই ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে এবং তাইপেই থেকে মিলানগামী একটি ফ্লাইট ভিয়েনায় গিয়ে জ্বালানি নিয়ে গন্তব্যে রওনা দেবে। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে বুধবার উত্তর ভারতের একাধিক শহরে ফ্লাইট চলাচলে বিঘœ ঘটে। এদিন এয়ার ইন্ডিয়া, এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস ও স্পাইসজেট একাধিক ফ্লাইট বাতিল করে বা গন্তব্য পরিবর্তন করে।

বিশ্বে প্রথম রাফাল যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করল পাকিস্তান!: ভারত পেহেলগামে হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার সময় তাদের তিনটি দাসো রাফাল যুদ্ধবিমান ধ্বংসের দাবি করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ফ্রান্সের তৈরি এই যুদ্ধবিমানগুলো ফোর পয়েন্ট ফাইভ প্রজন্মের অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে ঠাসা। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) বলছে, বিশ্বে পাকিস্তানই প্রথম দেশ যারা কোনো রাফাল যুদ্ধবিমান ধ্বংস করল। এটি পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একটি বিরল কৃতিত্ব। গতকাল বুধবার পাকিস্তান ট্রিবিউন এ তথ্য জানায়।

পাকিস্তান বিমান বাহিনী বলছে, তারা এই কৃতিত্ব অর্জন করেছে তাদের কোনো জে-টেন সি (ঔ-১০ঈ) বা জেএফ সেভেন্টিন (ঔঋ-১৭) বিমান খোয়ানা ছাড়াই। অর্থাৎ ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংসের সময় পাকিস্তান বিমানবাহিনীর কোনো বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (ওঝচজ) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আহমেদ শরীফ নিশ্চিত বলেছেন, পাকিস্তান বিমান বাহিনী সফলভাবে ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে তিনটি রাফাল (জধভধষব) যুদ্ধবিমান, একটি মিগ-২১ (গরএ-২১) এবং একটি সুখোই সু-৩০ (ঝঁশযড়র ঝঁ-৩০)। তবে, ভারত সরকার এখনো রাফাল যুদ্ধবিমান হারানোর কোনো বিষয় নিশ্চিত করেনি। বর্তমানে পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ রয়েছে এবং উভয় দেশ উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানানো হচ্ছে।

কেন এই সংঘাত? কাশ্মীর কী?: মুসলিম-অধ্যুষিত কাশ্মীর অঞ্চল ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের একটি উত্তেজনাকর এলাকা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত বিভক্ত হয়ে স্বাধীনতা পাওয়ার পরপরই দুই দেশ কাশ্মীর দাবি করে এবং এর জন্য প্রথম যুদ্ধ করে। এই বিভক্ত অঞ্চলটি এখন বিশ্বের অন্যতম সামরিকীকৃত এলাকা। ভারত দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে, পাকিস্তান সীমান্ত পার হয়ে হামলার জন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় দেয়, যা ইসলামাবাদ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে। এপ্রিলের পেহেলগাম হত্যাকা-ে ভারতে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দেয়। এই ক্ষোভ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। পেহেলগামের হামলার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ভারত ইসলামাবাদকে দায়ী করে। উভয় দেশ পাল্টাপাল্টি ব্যবস্থা নেয়। যেমন দুটি দেশ একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক কমিয়ে আনে, নাগরিকদের জন্য ভিসা বাতিল করে এবং ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ পানিবণ্টন চুক্তি থেকে সরে আসে।

এই যুদ্ধে কী হতে পারে: কাশ্মীর নিয়ে আগের তিনটি যুদ্ধই রক্তক্ষয়ী ছিল। ১৯৯৯ সালের সর্বশেষ যুদ্ধে পাকিস্তানের এক হাজারের বেশি সৈন্য নিহত হয়েছিলেন। স্বল্প সময়ে সেটি একটি তীব্র সংঘাত ছিল। এর পর থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গেছে, যেখানে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ২০১৯ সালে ভারত একটি আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলার পর পাকিস্তানে বিমান হামলা চালায়। তবে এসব সংঘর্ষ পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে রূপ নেয়নি। উভয় দেশই এর ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন, ১৯৯৯ সালের পর থেকে দুই দেশই সামরিক শক্তি বাড়িয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে পারমাণবিক অস্ত্র।