সম্প্রতি বিভিন্ন মিডিয়ায় এবং সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বিদেশ গমনের সঙ্গে ডা. কর্নেল (অব.) জেহাদ খানকে জড়িয়ে যেসব কথা বলা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন তিনি। আজ সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি এ দাবি করেন। পাশাপাশি তিনি এসব অপপ্রচারের নিন্দা করেছেন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন: আমি চরম ক্ষোভ ও বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, নাজমুস সাকিব নামের এক ব্যক্তিসহ বিভিন্ন ফেসবুক আইডি ও পেজ থেকে আমার বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ মনগড়া, বিভ্রান্তিকর এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। যেখানে কল্পনাভিত্তিক দাবি করা হচ্ছে যে, আমি নাকি সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বিদেশ গমনের অনুমতির জন্য রাষ্ট্রের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ‘ধরনা দিয়েছি’ এবং একটি ‘সেফ এক্সিট প্ল্যানের’ মূল পরিকল্পনাকারী!

অপপ্রচারের বিষয়ে আমি স্পষ্ট করে জানাচ্ছি-

১. আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, আমার জীবনে কখনো আমি ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিনি, বা তার সাথে কোনোদিন কথাও হয়নি। তারসঙ্গে আমার কোনো পরিচয়, যোগাযোগ বা রাজনৈতিক সম্পর্কও নেই।

২. আমি কারও বিদেশ গমনের সুপারিশ করিনি, করতেও পারি না। আমি রাষ্ট্রের কোনো দায়িত্বে নেই, রাজনৈতিক প্রশাসনের সঙ্গেও জড়িত নই। আমার পেশা চিকিৎসক। আমি সাধারণ একজন নাগরিক মাত্র। ইমিগ্রেশন পুলিশের কোনো কর্মকর্তা, বিশেষ করে ডিআইজি মোয়াজ্জেম হোসেনের সঙ্গে আমার কোনো প্রকার যোগাযোগ নেই। তার কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও আমি যুক্ত নই। বরং, প্রশাসন এবং গোয়েন্দা সংস্থায় থাকা ফ্যাসিবাদের সমর্থকদের মাধ্যমেই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় তিনি দেশ ছেড়েছেন। আর পরিকল্পিতভাবে তাদের ভূমিকা আড়াল করতেই আমাকে টেনে আনা হচ্ছে। সুতরাং, এ বিষয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার না করে সেফ এক্সিটে দায়ী সরকারে থাকা স্বৈরাচারের দোসরদের জবাবদিহিতায় আনা হোক।

একই সঙ্গে দাবি করছি—যারা আমার বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছেন ও মিথ্যা-বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছেন, তারা যদি এতটাই নিশ্চিত হন যে আমি কোনো ‘ধরনা দিয়েছি’, ‘সুপারিশ করেছি’, কিংবা কারও সঙ্গে ‘সেফ এক্সিট’ পরিকল্পনা করেছি—তাহলে তার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ, ফোনালাপ, সাক্ষাৎ, নথি বা ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করুন। আমি নিশ্চিত—এমন কোনো প্রমাণ তারা কখনোই দেখাতে পারবেন না, কারণ এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি, এটি নিছক কল্পনা।

৩. শুধু ভিন্নমত পোষণ করায় আমি আমার কর্মজীবনে বহুবার অবিচার ও হেনস্তার শিকার হয়েছি। চাকরি জীবনে আমার ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি পাওয়ার কথা থাকলেও জামায়াত সংশ্লিষ্টতার কারণে আমাকে সেই পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। এমনকি অবসরের পূর্বে আমার আরেকটি অনারারি গ্রেড যুক্ত হওয়ার কথা ছিলো, সেটিও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর গুড বুকে না থাকায় পাওয়া হয়নি। শুধু পদ-পদবি সংক্রান্ত বিষয়ই নয়, একজন চিকিৎসক হিসেবে চিকিৎসা সেবা পেশায় বিতর্কিত করতে নানা সময়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে বিভিন্ন রকমের অপচেষ্টা করা হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে—আমি ভুয়া ডাক্তার, আমি এনজিওগ্রাম পারি না। এমনকি এক পর্যায়ে আমাকে ভিডিও করে প্রমাণ দিতে হয়েছে যে, আমি এনজিওগ্রামে দক্ষ চিকিৎসক। এগুলো করা হয়েছে শুধুমাত্র ‘জামায়াতপন্থী’ হয়েও চিকিৎসক হিসেবে আমার খ্যাতি লাভের কারণে।

৪. ২০২৪ সালের জুলাইয়ের রাজনৈতিক সংকটকালে, যখন ধানমন্ডি ২৭-এ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়, তখন ইবনে সিনা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আমি পেশাদারিত্বের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে আহতদের চিকিৎসা দিয়েছি। অনেককেই গোপনে আশ্রয় দিয়েছি, যাতে তারা সুরক্ষা এবং চিকিৎসা পায়। এর ফলে আমি নিজেও সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার হয়রানি, নজরদারি এবং সরাসরি হুমকির মুখে পড়েছিলাম।

৫. আমি হঠাৎ করেই জামায়াতে ইসলামীতে আসা লোক নই। ১৯৮৮ সালে আমি যখন ইন্টার্ন চিকিৎসক ছিলাম, তখনই আমি জামায়াতের রোকন হই। এরপর সেনাবাহিনীতে থাকাকালীন সময়ে চাকরিবিধি অনুযায়ী সংগঠনের কাজ থেকে বিরত থাকলেও অবসর নেওয়ার পরই ২০১৪ সালে আবারও পুরোদমে কাজ শুরু করি। পারিবারিকভাবে আব্দুল হামিদ আমাদের আত্মীয় হলেও আমার পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে অধিকাংশই জামায়াত সমর্থক। এমনিক মরহুম অধ্যাপক গোলাম আজম, শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সাহেবও পারিবারিকভাবে আমাদের আত্মীয়। সুতরাং, শুধুমাত্র ব্যক্তি আব্দুল হামিদের জন্য আমার পরিবারকে বিবেচনা করা ভুল সিদ্ধান্ত।

এই ধরণের বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন কেবল আমাকে নয়, আমার পরিবার, সহকর্মী ও দীর্ঘদিনের চিকিৎসা জীবনের সুনামকে কলুষিত করার অপচেষ্টা। আমি এই ধরনের মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছি। সত্যের মুখোমুখি হবার সাহস না থাকলে, মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে চরিত্র হনন বন্ধ করার অপ্রচারের সাথে জড়িতদের আহবান জানাচ্ছি।