মোঃ শামীম হোসেন (সাভার সংবাদদাতা) : তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের পদচারনায় মুখর হয়ে থাকত স্থানটি। সেই জায়গা এখন পরিত্যক্ত। সাভারে রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩৬ শ্রমিক হতাহতের ঘটনার এক যুগপূর্তি হলো। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও মামলার বিচার সম্পন্ন হয়নি। ক্ষতিগ্রস্তদের দেয়া হয়নি যথাযথ ক্ষতিপূরণ।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু করে দিনব্যাপী বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ নানা পেশাজীবী মানুষ আসেন। দিনটি তাঁদের কাছে ভীষণ যন্ত্রণা আর কষ্টের। ২০১৩ সালের এই দিনে সাভার বাসস্ট্যান্ডে রানা প্লাজা ধসে নিহত হন ১ হাজার ১৩৬ জন। আহত হন অনেকে। রানা প্লাজা ধসের ১২ বছর। ওই দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং আহত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা, ক্ষতিপূরণসহ নানা দাবিতে সকাল সাড়ে সাতটার পর থেকে ধসে পরা রানা প্লাজার পরিত্যক্ত জায়গার সামনের দিকের একটি অংশে জড়ো হয়ে নিহত শ্রমিকদের স্বজন, আহত শ্রমিক ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে ওই জায়গায় অস্থায়ী প্রতিবাদ-প্রতিরোধ শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তাঁরা।

শ্রদ্ধা জানাতে আসেন জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা কর্মীরা। দুপুরে অস্থায়ী বেদীতে শ্রদ্ধা জানানো শেষে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, বাংলাদেশে রানা প্লাজার মতো যে বিভীষিকাময় ঘটনা ঘটেছে, এই ঘটনা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, গোটা পৃথিবীতে শ্রম বিপর্যয়ের যত উদাহরণ আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে নৃশংস এবং ধ্বংসাত্মক হিসেবে পৃথিবীর ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে।

কিন্তু এর পরেও বাংলাদেশের শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মস্থল এখনো পর্যন্ত নিশ্চিত করা সম্ভব হয়ে ওঠে নাই। শ্রমিকদের জন্য যে নিরাপদ কর্মস্থলের ব্যবস্থা করা গেল না, সেটির জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী বাংলাদেশের দুর্বৃত্তায়িত, নষ্ট ও পচে যাওয়া রাজনীতি।

শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও নানা দাবি জানান। বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খাইরুল মামুন বলেন, রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় এখনো আহত ও নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা হয়নি। রানা প্লাজার আহত শ্রমিকেরা চিকিৎসার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কনভেনশন ১২১ অনুসারে নিহত ও আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে। ওই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার করতে হবে।

বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি অরবিন্দ ব্যাপারী বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসের ১২ বছরে দোষীদের বিচার দেখতে পাইনি। আগের সরকার বিচারের আশ্বাস দিয়েছিল; কিন্তু বিচার হয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের দাবি, দোষীদের দ্রুত বিচার করতে হবে। শ্রমিকদের ন্যয্য দাবিগুলো পূরণ করতে হবে।’

বহুল আলোচিত রানা প্লাজা ধসে এক যুগ পূর্তিতে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আনন্দোলন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল-গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, গার্মেন্টস শ্রমিক জোট বাংলাদেশ, গার্মেন্টস শ্রমিক টেক্সটাইল ফেডারেশন, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রসহ নানা শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ নিহত ব্যক্তিদের স্বজন ও আহত শ্রমিকেরা অস্থায়ী বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।

এদিকে ১ যুগ পেরিয়ে গেলেও বিচার কাজ শেষ হয়নি। আদালত সূত্রে জানা যায়, এ মামলার ৫৯৪ জন সাক্ষীর মধ্যে এতদিনে মাত্র ৯০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। বিচারের দীর্ঘসূত্রিতায় নিহতের পরিবার ও আহতরা ন্যায়বিচার পাবেন কিনা তা নিয়ে সন্দিহান হয়ে পরেছেন।

সংশ্লিষ্ট শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবি, ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও তাদের পরিবারগুলোকে এতো বছরেও ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি। আহতদের কোন ধরনের পুনর্বাসন করা হয়নি। শ্রমিকদের ভেতরে বড় অংশ কাজে ফিরতে না পারায় অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন করছেন। যদিও বিজিএমইএ এবং প্রশাসন জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন বাবদ সব ধরনের সহায়তাই দেয়া হয়েছে।

সাভারের প্রাণ কেন্দ্র সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে ২০১৩ সালের ২৪শে এপ্রিল রানা প্লাজার আটতলা এ ভবনটি সকাল ৯টার কিছু আগে ধসে পড়ে। আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন-আইএলও এর হিসাব মতে ওই ঘটনায় ১ হাজার ১৩২ ব্যক্তি নিহত হন। তবে বিজিএমইএ’র হিসাব মতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছিল ১ হাজার ১৩৬ জনে।

যাদের বেশিরভাগই ছিলেন পোশাক শ্রমিক। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে। আহত অবস্থায় উদ্ধার হন আরও প্রায় আড়াই হাজার। যাদের অনেককেই পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। এই ঘটনাটিকে বিশ্বের সবচে বড় এবং ভয়াবহতম ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্র্যাজেডি’ হিসেবে আখ্যায়িত হয়ে আসছে। যার প্রভাবে বিশ্বের উন্নত দেশসমূহ ওই সময় বাংলাদেশে শ্রমিকদের কর্ম পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন। এ দুর্ঘটনাটি অবলম্বন করে দেশে বিদেশে সিনেমা প্রামণ্য চিত্র এবং নাটক ইত্যাদি নির্মিত হয়েছে।

রানা প্লাজা যেভাবে ধসে পড়ে

ঘটনার আগের দিন ২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টায় সাভারের রানা প্লাজা ভবনের তৃতীয় তলায় পিলার ও দেয়ালে ফাটল দেখা দেয়। খবর পেয়ে প্রসাশনের কর্তাব্যক্তি ও বিজিএমইএর কর্মকর্তারা রানা প্লাজা ভবনে আসেন। গার্মেন্টস মালিকদের পরামর্শ দেন, বুয়েটের ভবন বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করা পর্যন্ত সব কার্যক্রম বন্ধ রাখতে। সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদনও অনুরূপ বিষয় উল্লেখ করা হয়।

কিন্তু পাঁচ গার্মেন্টস মালিক এবং তাদের লোকজন জরুরি কাজের অর্ডার ও নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে পরদিন ২৪ এপ্রিল শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বাধ্য করেন। এর সঙ্গে যোগ দিয়ে ভবন মালিক সোহেল রানা বলেন, ‘আগামী ১০০ বছরেও রানা প্লাজা ভেঙে পড়বে না। গার্মেন্ট মালিক ও ভবন মালিকদের সাথে একই ভাবে সুর মিলিয়েছিলেন তৎকালীন সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কবির হোসেন সরদার। যার ফলে পরবর্তীতে তাকে চাকরি হারাতে হয়েছে।

বাণিজ্যিক এ ভবনে পাঁচটি পোশাক কারখানায় বসানো হয়েছিল বৈদ্যুতিক ভারী জেনারেটর, ভারী সুইং মেশিন। মালিকপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা না করে পরদিন পাঁচটি পোশাক কারখানা চালু করে। ঘটনার দিন সকাল ৯টায় রানা প্লাজায় হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়। তখন একসঙ্গে পোশাক কারখানাগুলো তিনটি জেনারেটর চালু করে। ঠিক তখনই রানা প্লাজা ভবন বিকট শব্দ করে ধসে পড়ে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়।

এলাকাবাসীর বক্তব্য অভিশপ্ত ভবন

রানা প্লাজা ধসের বিষয়ে স্থানীয় মজিদপুর এলাকার একাধিক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করে জানান রানা প্লাজা ছিল একটি অভিশপ্ত ভবন। তারা জানান, রানা প্লাজার জায়গা ক্রয় করার সময়ে সোহেল রানার বাবা আব্দুল খালেক একাধিক ব্যক্তিকে ঠকিয়ে এবং কিছু অংশ জোরপূর্বক দখলে নেয়। ভবন নির্মানের শুরুর দিকে পৌর এলাকার ব্যাংক কলোনীর যুবক আব্দুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করা হয় এ ভবনের নীচ তলায়। ডিইপিজেডের একটি কারখানায় গাড়ি সরবরাহ নিয়ে আব্দুলের সাথে তৎকালীন ছাত্রলীগ সভাপতি ফয়সালের দ্বন্দ্ব ছিল।

অভিযোগ আছে ফয়সাল রানার সহযোগিতায় মিরপুর থেকে খুনি ভাড়া করে আবদুলকে গুলী করে হত্যা করে। এ হত্যা মামলায় ফয়সাল প্রধান আসামী। ভবনের ক্রেন ছিড়ে নিহত শ্রমিক স্বপনের পরিবারকে কোন প্রকার ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি এবং তার পরিবারকে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে হুমকি দিয়েছিল সোহেল রানা।

এছাড়া ভবনের পার্কিং এরিয়াতে রানার অফিসে বসে নিয়মিত মাদক সেবনসহ নারী নিয়ে ফূর্তিতে মশগুল থাকতো ভবন মালিক। যা অনেকটা প্রকাশ্য ছিল। এ জন্য এলাকাবাসী অনেক আগে থেকেই রানা প্লাজাকে অভিশপ্ত ভবন হিসেবে আখ্যায়িত করতো।

দীর্ঘদিনেও মামলার অগ্রগতি নেই

রানা প্লাজা ধসে হতাহতের ঘটনায় সব মিলিয়ে ১৪টি মামলা দায়ের হওয়ার কথা জানিয়েছেন আইনজীবীরা। এরমধ্যে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরই ১১টি মামলা দায়ের করে।

এছাড়া রয়েছে, অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে পুলিশের হত্যা মামলা, ইমারত নির্মাণ আইন না মেনে ভবন নির্মাণ করায় রাজউকের করা মামলা এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলা। এরমধ্যে কেবল দুদকের দায়ের করা দুটি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। সম্পদের হিসাব দাখিল না করা সংক্রান্ত নন-সাবমিশন মামলায় ২০১৭ সালের ২৯শে অগাস্ট প্রধান আসামী সোহেল রানার তিন বছর কারাদ-ের আদেশ দিয়েছিল ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালত। ওই মামলায় তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদ- দেওয়া হয়।

এদিকে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে দুদকের দায়ের করা মামলায় ২০১৮ সালের ২৯শে মার্চ রানার মা মর্জিনা বেগমের ছয় বছরের বিনাশ্রম কারাদ- দেওয়া হয়। সেই সাথে তার প্রায় সাত কোটি টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে আদালত। বাকি মামলাগুলোর বিচার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

আইনজীবীরা জানিয়েছেন, হত্যা মামলার কয়েকজন আসামি অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে আপিল করায় বার বার পিছিয়েছে সাক্ষ্যগ্রহণ। হত্যা ও ইমারত আইনের মামলা দুটি ২০১৩ সালে দায়ের হলেও বিচারের জন্য প্রস্তুত হয় তিন বছর পর। ২০১৬ সালের ১৮ই জুলাই ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালত হত্যা মামলায় ৪১ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। এরমধ্যে শুধু সোহেল রানা কারাগারে আছেন, ৩০ জন জামিনে আছেন এবং ৭ জন পলাতক, মারা গেছেন তিন জন।

এরমধ্যে দুই আসামীর পক্ষে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় দীর্ঘদিন সাক্ষ্যগ্রহণ থেমে ছিল। পরবর্তীতে খারিজ হলে বিচার প্রক্রিয়া আবার শুরু হয়। ২০১৬ সালের ১৪ই জুন ইমারত বিধিমালা না মেনে ভবন নির্মাণের মামলার চার্জশিট দাখিল হয়। সিআইডি তদন্ত শেষে ১৮ জনকে আসামী করে অভিযোগপত্র দাখিল করে।

তাতে বলা হয়, ঘটনার আগেরদিন ভবনটির তৃতীয় তলার পিলার ও দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছিল। সিআইডির অভিযোগপত্রে বলা হয়, মালিকপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা না করে পরদিন অর্থাৎ ২৪শে এপ্রিল পাঁচটি পোশাক কারখানা চালু করে। ওইদিন সকাল ৯টায় হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে একসঙ্গে কয়েকটি জেনারেটর চালু করা হয়। এর পরপরই কাপন ধরে ভবনটি ধসে পড়ে।

মামলায় ১৩৫ জনকে সাক্ষী করা হলেও চার্জ গঠনের আদেশের বিরুদ্ধে কয়েকজন আসামী রিভিশন আবেদন করায় মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ হচ্ছে না। ঢাকার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি বিচারাধীন আছে।

অপরদিকে দায়িত্ব পালনে অবহেলা, শ্রমিকদের নিরাপত্তা বিধানে ব্যর্থতা বা সরকারি কর্মকর্তাদের পরিদর্শনে ব্যর্থতাসহ বেশ কটি অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের ১১টি মামলা শ্রম আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

সরকারি ও দেশী বিদেশী একাধিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা রানা প্লাজা ভবন ধসের পর বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের কাজ করেছে। তারা হতাহত পরিবারগুলোকে আর্থিক, মনোসামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক সাপোর্ট দিয়েছেন। তাদের পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের মধ্যে প্রায় ৫৫ শতাংশ এখনো কর্মহীন আছেন। তাদের মধ্যে ৮৯ শতাংশ গত পাঁচ থেকে আট বছর ধরে কর্মহীন। আর সাড়ে পাঁচ শতাংশ শ্রমিক গত তিন থেকে চার বছর ধরে কর্মহীন। বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের শারীরিক অবস্থা নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শিলা বেগম ওই দুর্ঘটনায় মেরুদ-ে আঘাত পেয়ে পঙ্গুত্ব বরন করেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন এখন আরও নানা ধরণের শারীরিক জটিলতায় এক প্রকার মৃত্যুর প্রহর গুনছেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, আমি বিধবা মানুষ, আমার একমাত্র মেয়েটাকে মানুষ করতে রানা প্লাজায় কাজ নিসিলাম, ওই কাজ আমাকে পঙ্গু করে দিল। আমার এখনও খাঁচা পরে চলতে হয়। শরীরে টিউমার হয়েছে টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে পারি না। সমাজের ১০ জনের কাছে হাতে পেতে চলতে হচ্ছে। মাঝে মাঝে মনে হয় ওইদিন মরে গেলেই ভালো হতো।

দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিক মাহমুদুল হাসান রিদয় বলেন আমি এ পর্যন্ত সুস্থ হতে পারিনি। অন্যের সহায়তায় চলতে হচ্ছে। তিনি বলেন, হতাহত শ্রমিকদের আইএলও’র কনভেনশন মেনে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি। যদিও পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা দেশের শ্রম আইন অনুযায়ী সবাইকে ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন।