রংপুর নগরীর সিও বাজার এলাকায় রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের পাশে গতকাল ১৯ জুলাই শনিবার দুপুরে এলপিজি ফিলিং স্টেশনে ভয়াবহ ট্যাংক বিস্ফোরণে সেলিম রেজা (৪৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে ১৩ জনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েক জনের অবস্থা আশংঙ্কাজনক। নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের সর্দার রুমের ইনচার্জ সেলিম মিয়া।

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানিয়েছে, গত সপ্তাহে রংপুর নগরীর সিও বাজার এলপিজি অটো গ্যাস এন্ড কনভার্সন সেন্টারে গ্যাস লিকেজ হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে। গতকাল ১৯ জুলাই শনিবার সকাল থেকে ফিলিং স্টেশন কর্তৃপক্ষ গ্যাসের ট্যাংক মেরামত করছিল। বেলা ১২টার দিকে ওয়েল্ডিংয়ের সময় হঠাৎ করে ট্যাংকের ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে করে গ্যাস ট্যাংকটি ছিন্নভিন্ন হয়ে উড়ে পাশর্^বর্তী কাউন্টারের কাছে গিয়ে কাছে পড়ে। এতে করে কাউন্টারসহ ফিলিং স্টেশনে থাকা প্রায় ১৩টি কার ও এ্যাম্বুলেন্স, রাস্তায় চলাচল করা যাত্রীবাহী বাস ও পাশর্^বর্তী বাড়ির টিনের চাল, বহুতল ভবনের থাই-জানালা ভেঙ্গে চুর্ন বিচুর্ন হয়ে যায়। বিস্ফোরণের ফলে ট্যাংকের উপরে থাকা পাকা অবকাঠামো গুড়িয়ে যায় এবং কিছু লোহার এ্যাঙ্গেল পাশর্^বর্তী বিজিবি রংপুর রিজিয়ন সদর দপ্তরের গাছে গিয়ে ছিটকে পড়ে। গ্যাস ট্যাংক বিস্ফোরনের পরপরই মানুষ আতংঙ্কিত হয়ে দ্বিগিদিক ছোটাছুটি শুরু করে। আশপাশের লোকজন ছুটে এসে এলপিজি ফিলিং স্টেশনে পড়ে থাকা আহতদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ কাজী আতাউর রহমান জানান, গ্যাস ট্যাংক বিস্ফোরনের ঘটনায় আহত অজ্ঞাত কিশোর (১৬), ছালেক শাহ (৬৫), তারাজুল (৪৫), আলমগীর (২২), সোহেল (৩৭), বিপুল (৫২), রফিক (৩৫), সোহাগ (২৭), বকুল (২৪), মজিবর (৪৫), অজ্ঞাত পুরুষ, সাদমান (১৮) ও রোজীকে (৫০) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগ, চক্ষু বিভাগ, সার্জারী বিভাগ (পুরুষ ও মহিলা), নাক, কান, গলা বিভাগ ও নিউরো সার্জারী বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশংঙ্কাজনক। এদিকে উৎসুক মানুষের কারণে রংপুরÑঢাকা মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তাদের তৎপরতায় জানজট কাটিয়ে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এলাকাবাসী জানান, হঠাৎ বিকট শব্দ হলে ঝাকুনীতে আমার ঘুমে ভেঙ্গে যায়। পরিবারের সদস্যরাও আতংঙ্কিত হয়ে পড়ে। আমার বাসার টিনের চাল, টিভি, ফ্রিজ ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে। সেই সাথে এলাকায় আতংঙ্ক বিরাজ করছে। পথচারী আমিনুল ইসলাম জানান, পাশের দোকানে চা খাওয়ারা সময় বিকট শব্দে বিস্ফোরণে কারণে সবাই আতংঙ্কিত হয়ে পড়ে।

রংপুর ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক বাদশা মাসউদ আলম বলেন, ১২ টা ১০ মিনিটে সংবাদ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। এসময় আহতদের হাসপাতালে নেয়া হয় এবং অগ্নিকান্ডও নিভে গেছে। আন্ডার গ্রাউন্ডে থাকা একটি এলপিজি ট্যাংক মেরামত চলছিল। কোন প্রকার চাপের কারণে তা বিস্ফোরণ হতে পারে। গত সপ্তাহে আমরা এই ফিলিং স্টেশনে গ্যাস লিকেজের ঘটনায় এসেছিলাম।

রংপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, সিও বাজারের এলপিজি অটো গ্যাস সেন্টারে মেরামতের কাজ চলাকালে হঠাৎ গ্যাস ট্যাংকে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ট্যাংক ও যন্ত্রপাতি ছিটকে পড়ে। আশপাশে রাখা অন্তত ২০টি অ্যাম্বুলেন্স ও মাইক্রোবাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কে চলাচলকারী দুটি বাস আঘাত প্রাপ্ত হয়।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, এলপিজি ফিলিং স্টেশনে ভয়াবহ ট্যাংক বিস্ফোরণে সেলিম রেজা (৪৫) নামে এক ব্যক্তির হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে।