শাহনেওয়াজ জিল্লু, কক্সবাজার দক্ষিণ : কক্সবাজারে টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উখিয়া আশ্রয়শিবিরের কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। ভারি বর্ষণের কারণে পাহাড়ের ঢালুতে অতিঝুঁকিতে বসবাস করছে তারা। রোহিঙ্গাদের আশ্রয়শিবিরে শেড গুলোতে ঢুকে পড়েছে বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলের পানি। নতুন করে শঙ্কা তৈরি করেছে বৃষ্টির সাথে বজ্রপাত। যা রীতিমতো ভয়ের কারণ হয়ে পড়েছে।
এরই মধ্যে বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে উখিয়া রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে মাটির দেয়াল চাপাপড়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে এক শিশু। বজ্রপাতে আহত হয়েছে একই পরিবারের ৫ সদস্য।
নিহত মোহাম্মদ আয়াছ (২০) ক্যাম্প-২ ইস্ট ডি-৩ ব্লকের বাসিন্দা আবুল ফয়েজের ছেলে। আহত শিশুর নাম কামাল উদ্দিন (১২)। শিশুটি একই ব্লকের বাসিন্দা জামাল উদ্দিনের ছেলে। তারা নতুন করে বাংলাদেশ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা। নিহত আয়াছ তার বোনের বাড়িতে অস্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছিল। সম্প্রতি উখিয়া ২ ইস্ট ক্যাম্পের ডি-৩ ব্লকে নিজ শেল্টারে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে শিবিরে নিজেদের তৈরি মাটির দেয়াল হঠাৎ বসতঘরে ধসে পড়ে। এতে মোহাম্মদ আয়াছ ও কামাল উদ্দিন গুরুতর আহত হন। আশেপাশের রোহিঙ্গাদের সহায়তায় দ্রুত তাদের বিডিআরসিএস-পিএইচসি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কামাল উদ্দিন সুস্থ হয়ে উঠলেও মোহাম্মদ আয়াছকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
রোহিঙ্গারা জানান- হতাহত দুইজনই মোহাম্মদ আয়াছের বোনের বাড়িতে অস্থায়ীভাবে অবস্থান করছিল। তারা সম্প্রতি আগত একটি পরিবারের সদস্য, যারা এখনো নিবন্ধন ইউনিট থেকে বায়োমেট্রিক কার্ড সংগ্রহ করতে পারেনি।
উখিয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আরিফ হোসাইন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দেয়াল চাপা পড়ে মোহাম্মদ আয়াছ নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে কামাল উদ্দিন নামের ১২ বছর বয়সী এক শিশু। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সাধারণ রোহিঙ্গারা।
এছাড়াও গত রবিবার (১ জুন) রাত ৯ টার দিকে বজ্রপাতে গুরুতর আহত হয়েছে ২০ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্লক-৮ এর একই পরিবারের ৫ জন। তারা হলেন আনোয়ার বেগম (৪৭), জিয়াউর রহমান (২১), আয়েশা বিবি (১৫), সোনাউল্লাহ (২৮) ও হুসনে আরা (২৪)।
বজ্রপাতে আহতদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে ২০ নম্বর ক্যাম্পস্থ এনজিও সংস্থা ফ্রেন্ডশীপ পরিচালিত একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন- টানা কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি অনেকটা বিপর্যস্ত। দেয়াল চাপা পড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত এক শিশু। বজ্রপাতে আহত হয়েছে ৫ জন।
তিনি আরো বলেন- ক্ষতিগ্রস্ত ক্যাম্প গুলোতে সংশ্লিষ্ট ক্যাম্প ইনচার্জ ও সেবাদানকারী সংস্থাগুলো পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করছে। পাহাড়ে ঢালুতে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। রোহিঙ্গাদের সর্তক করা হয়েছে।
উল্লেখ্য- বর্ষা মৌসুম শুরু হতেই আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গারা প্রবল বর্ষণ, পাহাড়ী ঢলে বন্যা ও বজ্রপাতের মতো ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।