দুর্ঘটনা
বাস চাপায় রিকশাচালক নিহত, অনিশ্চিত ৬ কন্যার ভবিষ্যৎ
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের দোহাজারীতে বাস চাপায় প্রাণ হারিয়েছেন নিরীহ রিকশাচালক রুহুল আমিন। তিনি রেখে গেছেন স্ত্রী ও ছয় অবুঝ কন্যাকে। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) সকালে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা শোকে স্তব্ধ করে দিয়েছে পুরো এলাকা।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের দোহাজারীতে বাস চাপায় প্রাণ হারিয়েছেন নিরীহ রিকশাচালক রুহুল আমিন। তিনি রেখে গেছেন স্ত্রী ও ছয় অবুঝ কন্যাকে। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) সকালে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা শোকে স্তব্ধ করে দিয়েছে পুরো এলাকা।
বাবার লাশ ঘিরে মেয়েদের বুকফাটা কান্না, মায়ের আর্তনাদ, প্রতিবেশীদের দীর্ঘশ্বাস—সব মিলিয়ে দোহাজারীর বাতাস যেন ভার হয়ে উঠেছে। বড় বোন উম্মে সুলতানার কোলে মাথা রেখে অঝোরে কাঁদছে ২৫ দিনের শিশুটি। যেন বুঝে গেছে, পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থলটি হারিয়ে গেছে চিরতরে।
একটি ছেলে সন্তানের আশায় বুক বেঁধেছিলেন রুহুল আমিন ও তার স্ত্রী। কিন্তু নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাসে একে একে কোল আলো করে আসে ছয় কন্যা। অভাব-অনটনের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়, তবুও মেয়েদের মুখে হাসি ফোটাতে অক্লান্ত পরিশ্রম করতেন রুহুল। ব্যাটারিচালিত রিকশা চালিয়ে যা আয় হতো, তা দিয়েই চলতো সংসার, মেয়েদের লেখাপড়া।
দোহাজারী পৌর সদরের জরাজীর্ণ, স্যাঁতসেঁতে দুই কামরার সেমিপাকা ঘরটিই ছিল তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই। আট সদস্যের পরিবারে গাদাগাদি করেই দিন কাটতো। রুহুল আমিনের স্বপ্ন ছিল, মেয়েরা লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হবে। কিন্তু ঘাতক বাস সেই স্বপ্নকে পিষে দিয়ে গেল চিরতরে।
বড় মেয়ে উম্মে সুলতানা, সবে পা রেখেছে কৈশোরে। গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ছে, চোখে তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন। দ্বিতীয় মেয়ে তাসফিয়া সুলতানা রিপা দোহাজারী জামিজুরী গার্লস হাই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। তৃতীয় মেয়ে আলিফা জামিজুরী মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণিতে আর চতুর্থ মেয়ে ওয়াকিয়া দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। আড়াই বছরের শিশু মা ফাতেমা আর মাত্র ২৫ দিন বয়সী কোলের বোনটি এখনও জানে না, কী হারিয়েছে তারা। অবুঝ চোখে কেবলই শূন্যতা।
রুহুল আমিনের ছোট ভাই রুহুল কাদের চোখের জল মুছতে মুছতে বললেন, “ভাইয়ের কত স্বপ্ন ছিল মেয়েদের নিয়ে! দুই-আড়াই বছর ধরে রিকশা চালিয়ে সংসারটা টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। বৃহস্পতিবার সকালে ভাড়ার জন্য বেরিয়েছিল, আর ফিরল না। ঘাতক বাসটা পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে মেরে ফেলল ওকে। এখন এই বাচ্চা মেয়েগুলোর কী হবে? কীভাবে ওরা বাঁচবে, পড়াশোনা করবে?”
স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম স্মৃতিচারণ করে বলেন, “রুহুল আমিন মানুষ হিসেবে খুবই ভালো ছিল। রাস্তায় কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেই রিকশায় তুলে নিত। ভাড়া নিয়ে কোনোদিন জোর করত না।”
খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন চন্দনাইশের উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দোহাজারী পৌর প্রশাসক ডিপ্লোমেসি চাকমা। পৌরসভার পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কিছু আর্থিক সাহায্য দিয়েছেন, আশ্বাস দিয়েছেন পাশে থাকার। কিন্তু তাতে কি এই অসহায় পরিবারটির সব দুঃখ ঘুচবে?
সামনে ঈদ। নতুন জামাকাপড়ের স্বপ্নে বিভোর ছিল ছোট ছোট মেয়েগুলো। কিন্তু বাবা যে আর নেই! কে কিনে দেবে তাদের ঈদের জামা? রুহুল আমিনের মৃত্যুতে শুধু একটি পরিবার নয়, পুরো দোহাজারী যেন শোকস্তব্ধ। এ শোক, এ ক্ষতি কি পূরণ হওয়ার?