ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এয়ার কার্গো কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় ১২ ঘণ্টা ধরে জ্বলতে থাকা আগুনে পুড়ে গেছে বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো শাখায় থাকা হাজার হাজার কোটি টাকার মালামাল। বিমানবন্দরের এই শাখায় রাখা ছিল বিদেশ থেকে আমদানি করা পোশাক, ইলেকট্রনিকস পণ্য ও রাসায়নিকসহ বিভিন্ন পণ্য। এছাড়া দেশের আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রমে ১০০ কোটি ডলারেরও বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

তবে সরাসরি ক্ষতির সঠিক পরিমাণ এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। এ ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

বিজিএমইএ জানিয়েছে, ক্ষতির পরিমাণ ১ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যেতে পারে। এখন থেকে শুক্র ও শনিবার আমদানি পণ্য ছাড় করা যাবে। ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পণ্য ছাড় করা যাবে। বিকল্প হিসেবে থার্ড টার্মিনালে আমদানি করা পণ্য রাখা হবে।

ইন্টারন্যাশনাল এয়ার এক্সপ্রেস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের সভাপতি কবির আহমেদ খান বলেন, ‘প্রত্যক্ষ ক্ষতির পরিমাণ অনুমান করা এখনও সম্ভব নয়। তবে আমদানি ও রপ্তানির উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উভয় ধরণের সামগ্রিক প্রভাব ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।’

শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুর আনুমানিক ২টা ১৫ মিনিটের দিকে বিমানবন্দরের কার্গো এলাকায় আকস্মিকভাবে আগুন লাগে। খবর পেয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে একে একে ঘটনাস্থলে আসে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট। পাশাপাশি বিমান বাহিনী ও নৌ-বাহিনীর সদস্যরাও আগুন নিয়ন্ত্রণে নামে। তাদের সহযোগিতায় আসে পুলিশ, র্যা ব, আনসার ও সেনাবাহিনী।

বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেটের পাশেই ছিল এই আমদানি কার্গো শাখা। ঠিক কোথায় থেকে আগুনের সূত্রপাত তা এখনো জানা না গেলেও সেখানে কুরিয়ার সার্ভিসের গোডাউন, ফার্মাসিউটিক্যাল ও ভ্যারাইটিজ পণ্যের গোডাউন, কুল রুম, ডেঞ্জারাস গুডসের (বিস্ফোরক দ্রব্য) গোডাউন, আমদানি করা মোবাইলের গোডাউন ও বিজিএমইর গোডাউন ছিল।

আগুনে আমদানি করা সব পণ্য পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর। তামিম এক্সপ্রেস লিমিটেড নামের একটি কুরিয়ার কোম্পানির পরিচালক সুলতান আহমেদ বলেন, সকালেই তার কোম্পানির আড়াই টন মালামাল নেমেছে কার্গো শাখায়। শনিবার অর্ধদিবস কার্যক্রম চলায় কোনো মালামালই তিনি বের করতে পারেননি। সব পুড়ে শেষ হয়ে গেছে।

কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে এই কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। এই কমিটিকে দ্রুততম সময়ে অগ্নিকাণ্ডের সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। পাশাপাশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কি আকস্মিক দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা, এ ব্যাপারেও উদ্বেগ প্রকাশ করে আতঙ্কগ্রস্ত যাত্রী ও সাধারণ মানুষের প্রতি গভীর সহমর্মিতা এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের প্রতিও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন তিনি।

এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষার বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে এবং দেশকে অস্থিতিশীল করতেই ফ্যাসিস্টদের দোসররা জোরালোভাবে নানাধরণের সহিংস কর্মকাণ্ড শুরু করেছে।

দেশে একাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, সম্প্রতি দেশে কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এবং আজ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো সেকশনে আগুন লাগার ঘটনাও একইসূত্রে গাঁথা। এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত বলে জনগণ বিশ্বাস করে।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নাশকতার প্রমাণ পেলে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে সম্প্রতি সংঘটিত একাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জনমনে যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার তা গভীরভাবে অবগত। আমরা সব নাগরিককে আশ্বস্ত করতে চাই— নিরাপত্তা সংস্থাগুলো প্রতিটি ঘটনা গভীরভাবে তদন্ত করছে এবং মানুষের জীবন ও সম্পদ সুরক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে।

এতে আরও বলা হয়, নাশকতা বা অগ্নিসংযোগের কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে সরকার তাৎক্ষণিক ও দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে। কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বা উসকানির মাধ্যমে জনজীবন ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করার সুযোগ দেওয়া হবে না।