DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

দুর্ঘটনা

প্রশাসনের কাঠামো ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ

গোয়েন্দা নজরদারিতে আওয়ামীলীগ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ আমলারা

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ওপর চলছে কড়া গোয়েন্দা নজরদারি। বিশেষ করে, বিগদ সময়ে যারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়,

Printed Edition
Default Image - DS

কামাল উদ্দিন সুমন : পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ওপর চলছে কড়া গোয়েন্দা নজরদারি। বিশেষ করে, বিগদ সময়ে যারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, মন্ত্রীদের পিএস (ব্যক্তিগত সচিব) এবং বিভাগীয় কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের মধ্যে উদ্বেগ তুলনামূলক বেড়েছে। ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) থাকা কর্মকর্তারাও এই পর্যবেক্ষণের বাইরে নন। তাদের অনেকেই বাধ্যতামূলক অবসরের শঙ্কায় রয়েছেন।

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি) এবং সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা মূলত নজরদারিতে রয়েছেন। এসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ৬৫ জন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে বা ওএসডি করেছে।

সরকারি তথ্যানুসারে, চাকরির ২৫ বছর পূর্ণ হওয়া ২২ জন সাবেক ডিসিকে (বর্তমানে সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও উপসচিব) বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি, ৩৩ জন সাবেক ডিসিকে ওএসডি করা হয়েছে। এর আগে আরও ১২ জন সাবেক ডিসিকে ওএসডি করা হয়েছিল। কয়েকজন সচিবকেও একই ধরনের সিদ্ধান্তের আওতায় আনা হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের উপদেষ্টা কমিটি আরও অনেক কর্মকর্তার তালিকা তৈরি করেছে। যারা গত ১৭ বছরে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোতে কাজ করেছেন তারা এই তালিকাভুক্ত বলে জানা যায়। এমনকি গত তিন মেয়াদে আওয়ামী সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যদের পিএস হিসেবে কাজ করেছেন এমন অনেককে এরই মধ্যে ওএসডি করা হয়েছে। শিগগিরই তাদের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার।

বাংলাদেশ সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাবেক ডিসি, এসপি এবং সচিবদের ওএসডি করা ও বাধ্যতামূলক অবসরের সিদ্ধান্তের ফলে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও বিভিন্ন মন্ত্রীদের ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে কাজ করা কর্মকর্তারা বেশি উদ্বেগের মধ্যে আছেন।

অন্যদিকে, গত ১৭ বছর ধরে পদোন্নতি না পাওয়া বিএনপিপন্থি কর্মকর্তারা এখনও বঞ্চিত রয়েছেন। তবে, প্রশাসনের গতিশীলতা ফেরাতে পদোন্নতি ও বদলির বিষয়ে নতুন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

সরকারি সূত্র জানিয়েছে, যারা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ গড়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি অবসরে যাওয়া কর্মকর্তারাও নজরদারির বাইরে থাকছেন না।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের উপদেষ্টা কমিটি আরও অনেক কর্মকর্তার তালিকা তৈরি করেছে, যারা বিগত ১৭ বছরে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোতে কাজ করেছেন। এমনকি, আওয়ামী লীগের তিন মেয়াদে মন্ত্রিসভার সদস্যদের ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করা অনেককেই ইতোমধ্যে ওএসডি করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সরকার প্রশাসনের কাঠামো ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে। ডিসি, সচিব ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে নতুন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে। প্রশাসনের শূন্যপদ পূরণের জন্য নিয়মিত কর্মকর্তাদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

বিএনপি আমলে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিতদের জন্যও বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাবেক অর্থ সচিব জাকির আহমেদ খানকে প্রধান করে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে ব্যাকডেটেড পদোন্নতি ও আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১১৯ জন সচিব, ৫২৮ জন অতিরিক্ত সচিব, ৪১ জন গ্রেড-১ কর্মকর্তা, ৭২ জন যুগ্ম সচিব ও ৪ জন উপসচিব পদোন্নতি পেয়েছেন।

জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদেও বড় পরিবর্তন আসছে। বিসিএস ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হবে। বিতর্কিত কর্মকর্তাদের সরিয়ে নতুনদের দিয়ে প্রশাসন ঢেলে সাজানো হবে।

সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদেও পরিবর্তন আসতে চলেছে। বিসিএস ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হবে। বিতর্কিত কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিয়ে নতুনদের ফিটলিস্ট তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া প্রশাসনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব পদ খালি তা প্রশাসনের নিয়মিত কর্মকর্তাদের দিয়ে তা পূরণ করা হবে। আগের সরকারের আমলে গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের পর্যায়ক্রমে ওএসডি ও গুরুত্বহীন দপ্তরে পাঠানো হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনে যারা ডিসি হিসেবে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তদন্ত করছে। আমরা গোয়েন্দা সংস্থাকে পুরো তালিকা দিয়েছি এবং তাদের প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছরের কম, তারা ওএসডি হবেন, আর যাদের ২৫ বছরের বেশি, তারা বাধ্যতামূলক অবসরে যাবেন।"তিনি আরও বলেন, "২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী ডিসিদের মধ্য থেকে যাদের বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। অবসরে যাওয়ার পরও দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে ছাড় নেই। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলা দেওয়া হবে।

সরকার আশ্বস্ত করেছে, কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে অন্যায় বা পক্ষপাতমূলক আচরণ করা হবে না। তবে প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এদিকে, প্রশাসনে এমন অস্থিরতার মধ্যে বদলির পরবর্তী ধাপে আরও বড় পরিবর্তন আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।