একটি অগ্নি দুর্ঘটনা, অকালীন হতাহতের নিদারুন চিত্র। স্বজনদের গগনবিদারী বিলাপ, চারদিকে শোরগোল-হৈচৈ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে, নানা তোড়জোর আর আশার বাণী। একটা সময়ে এসে সব পক্ষই চুপ। যেখান থেকে ঘটনার সূত্রপাত, সেখানেই সব প্রক্রিয়ার সমাপ্তি। আর এভাবেই চলে আসছে যুগের পর যুগ। কোন পরিবর্তন হয় না। আবারও ঘটনা-দুর্ঘটনা, আবারও প্রাণহানি। এভাবে ঘটে চলেছে একের পর এক অগ্নি দুর্ঘটনা। শত শত মানুষ মরে, কিন্তু আবাসিক এলাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম সরে না।

২০১০ সালের জুনে রাজধানীর পুরান ঢাকার নিমতলীতে এক ভয়াবহ অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটে রাসায়নিকের কারনে। এতে ১২৪ টি তাজা প্রাণ অকালে ঝরে যায়। আহত হয়ে ওই ঘটনার স্বাক্ষী আজও অগণিতরা। এরপর ২০১৯ সালে পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় ঘটে আরও একটি বড়ো ধরনের অগ্নিকান্ড। এটিও হয় রাসায়নিকের কারণে। এ ঘটনায় মারা যান ৭১ জন। ২০২১ সালে বংশালে রাসায়নিকের কারণে অগ্নিকা-ে নিহত হন ৫ জন। ২০২২ সালে কামরাঙ্গীর চরে একই কারনে মারা যান দুই জন। সর্বশেষ মঙ্গলবারের ঘটনায় মিরপুরের রুপনগরে শিয়ালবাড়ীতে মারা যান ১৬ জন। এ নিয়ে গত ১৫ বছরে মারা গেছেন ২১৮ জন। আহতের সংখ্যাও কম নয়।

নিমতলীতে অগ্নিকা-ের পর রাসায়নিক গুদাম ও প্রতিষ্ঠান সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। তবে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটলেও রাসায়নিক ব্যবসায় শৃঙ্খলা ফেরেনি। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা বলা হলেও বাস্তবে তার অগ্রগতিও হতাশাব্যঞ্জক। পুরান ঢাকায় কোনো কারখানায় এ রকম দুর্ঘটনা ঘটার পর অভিযান চালিয়ে পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম উচ্ছেদের কার্যক্রম চালিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এক পর্যায়ে সংস্থাটির পক্ষ থেকে রাসায়নিক ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপরও দাহ্য রাসায়নিক ব্যবসা চলছে আবাসিক এলাকায়।

রাজধানীসহ সারা দেশের অনেক আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠেছে ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিকের গুদাম। প্রতিবার আগুন লাগার পর আবাসিক এলাকায় কেন রাসায়নিকের গুদাম- তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে। সরকার চাপে পড়ে এসব গুদাম সরানোর উদ্যাগ নেয়। কিন্তু সেই উদ্যোগ আর বাস্তবায়ন হয় না।

অভিযোগ রয়েছে, রাসায়নিকের ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের বেশির ভাগই প্রভাবশালী। এরা বিগত দিনে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক লেনেদেন করে রাসায়নিকের গুদাম সরানোর প্রক্রিয়া থামিয়ে রাখেন। সবচেয়ে বেশি রাসায়নিকের গুদাম পুরান ঢাকায়। এখানে বিভিন্ন অলিগলি ছাড়াও তেজগাঁও এবং মিরপুরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে রাসায়নিকের গুদাম। এগুলোতে ফসফেট, ক্লোরিন, ব্লিচিং পাউডারসহ বিভিন্ন রাসায়নিক ও দাহ্য পদার্থ মজুত করা হয়।

মিরপুরের আগুন নেভাতে আরও সময় লাগবে, বের হচ্ছে বিষাক্ত পানি ও গ্যাস

‎রূপনগরে রাসায়নিক গুদামের আগুন নেভাতে আরও সময় লাগবে। ভেতর থেকে এখন মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক পানি ও বিষাক্ত গ্যাস বেরিয়ে আসছে। ফলে এই মুহূর্তে ওই এলাকা বিপজ্জনক। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রূপনগর শিয়ালবাড়ি ঘটনাস্থলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের সহকারী পরিচালক কাজী নজমুজ্জামান।

কাজী নজমুজ্জামান বলেন, কেমিক্যাল গোডাউনের আগুন খুব ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। যার কারণে আমরা নিজেদের সেফটি বজায় রেখে কাজ করছি। এই আগুন নির্বাপণ করতে একটু সময় লাগবে। সকাল থেকে আমরা প্রত্যেকটা গ্রাউন্ড মনিটরে দুইটা করে ডেলিভারেজ দিয়ে পানি দিচ্ছি। মোট চারটা লাইনে পানি দিচ্ছি। সকাল থেকে একটু গন্ধ বেশি ছিল। কুয়াশা আকারেও পানি দিচ্ছি। পানির সঙ্গে কেমিক্যালটা মিশে যাচ্ছে। ভেতর থেকে যে পানি আসছে, এটা আমাদের মানবদেহের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। এলাকার জনগণকে এটা থেকে নিরাপদে থাকতে হবে।

ভেতরে প্রবেশের বিষয়ে নজমুজ্জামান বলেন, গুদামের ওখানে স্টিলের একটা গেট ছিল। আগুন লাগার পর থেকেই সেটা তালা মারা ছিল। এই তালা কেটে আমরা ভেতরে প্রবেশ করেছি। ভেতরে গ্রাউন্ড মনিটর সেট করে আসছি। সেখানে কুয়াশার মতো করে পানি দিচ্ছি, যাতে কেমিক্যালের বিক্রিয়া কমে যায় এবং এলাকার পরিবেশ নিরাপদ হয়।’

বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে যাওয়ার বিষয়ে কাজী নজমুজ্জামান বলেন, এই গ্যাস মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। নিজের নিরাপত্তার জন্য আমরা যেন সেফ পজিশনে চলে যাই। অন্ততপক্ষে অনেক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। রাসায়নিকের গুদামে লাশ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা গেট খুলে দেখেছি, কিন্তু আমরা সঠিকভাবে এখনো দেখতে পাইনি ভেতরে লাশ আছে কি না। আমাদের ধারণা, সেখানে লাশ থাকার সম্ভাবনা কম। কারণ, গেট বন্ধ ছিল। কী ধরনের কেমিক্যাল ও দ্রুত কাজ শেষ করার বিষয়ে তিনি বলেন, ব্লিচিং পাউডার, অ্যাসিড, সোডিয়াম-বায়ো-কার্বনেট, পটাশসহ আরও কিছু কেমিক্যাল ছিল। আগুন লেগে সব এক হয়ে গেছে। ভেতরে বিস্ফোরণ হচ্ছে। সময় না দিয়ে দ্রুত কাজ করতে গেলে বিপদের আশঙ্কা থাকে। আমাদের গ্রাউন্ড মনিটর সেখানে সেটআপ করে আসছি। আর বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এখানে কুয়াশা আকারে পানি দিয়ে এই বিক্রিয়া কমাতে হবে। আমরা সেভাবেই করছি। আমাদের আধুনিক গাড়ি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছি। এ মুহূর্তে এই এলাকা বিপজ্জনক। সবাই নিরাপদে থাকুন। কেমিক্যালের আগুন নেভাতে গেলে দ্রুত অ্যাকশনে যাওয়া যাবে না।

এদিকে, ফায়ার সার্ভিস জানায়, বাংলাদেশ কেমিকেল ইন্ডাস্ট্রি করপোরেশন (বিসিআইসি) সিনিয়র জিএম মনজুর রেজা নেতৃত্বে ৪ জনের টিম গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এই টিমে ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও জলবায়ু সহনশীলতা বিভাগের অধ্যাপক জিল্লুর রহমান, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সৈয়দ আহমেদ কবীরসহ ২ জন।

নিহত আরও ১০ লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন

অগ্নিকা-ে ১৬ জনের মৃত্যুর ঘটনায় আরও ১০টি লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। এঁদের ময়নাতদন্ত ছাড়াও ডিএনএ নমুনা নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত লাশগুলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্ত করেন ফরেনসিক মেডিসিনের প্রভাষক ডা. আয়েশা পারভীন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সিআইডির ফরেনসিকের ল্যাব পরীক্ষক শুভ জয় বৈদ্য।

শুভ জয় বৈদ্য বলেন, ১০টি লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এঁদের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য হাড় ও টিস্যু সংগ্রহ করা হয়েছে। বুধবার ছয়টি লাশের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ছাড়া লাশের দাবিদারদের মালিবাগ সিআইডি ল্যাবে গিয়ে নমুনা দিতে বলা হয়েছে।

এর আগে, লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন করেন রূপনগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মুখলেসুর রহমান লস্কর। তিনি বলেন, ১০টি লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে সাতজন অজ্ঞাত। যাঁদের বয়স আনুমানিক ২০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। অজ্ঞাতদের মধ্যে একজন নারী ও ছয়জন পুরুষ রয়েছেন। বাকিরা হলেন শরীয়তপুরের নড়িয়ার উপজেলার পূর্ব হালইসার গ্রামের মুছাই দেওয়ানের মেয়ে মুক্তা বেগম (৩০), সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার রাজাপুর গ্রামের রতন মিয়ার মেয়ে ফারজানা আক্তার (১৫) এবং নেত্রকোনা মদন উপজেলার পদমশ্রী গ্রামের সনু মিয়ার মেয়ে ফারজানা আক্তার (১৬)।

এসআই বলেন, এ ছাড়া দু-তিনটি লাশেরর একাধিক পরিবার দাবিদার পাওয়া গেছে। সব লাশ ও দাবিদারদের থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হবে। বুধবার ছয়টি লাশের ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ডিএনএ নমুনার প্রতিবেদন আসার পর স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে।

ফায়ার সার্ভিসের ৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন

আগুনের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস থেকে ৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে রয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেনেন্স) লে কর্ণেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড মো ইয়াছির আরাফাত খান, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ঢাকা জোন-২ এর উপসহকারী পরিচালক অতীশ চাকমাসহ ফায়ার সার্ভিসের আরও চার কর্মকর্তা।

সারা দেশে ৩৭ হাজার গুদাম

পুলিশ সূত্র জানায়, ঢাকাসহ সারা দেশে ৩৭ হাজার রাসায়নিক গোডাউন রয়েছে। তার মধ্যে ১৮ হাজার আছে খোদ বাসাবাড়িতেই। ফায়ার সার্ভিসসহ অনান্য সংস্থা ৮ হাজার ৮৫০টিরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ২০১০ সালে নিমতলীতে অগ্নিকা-ের পর দুর্ঘটনা রোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব ইকবাল খান চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত কমিটি কেমিক্যাল গুদাম অপসারণসহ ১৭ দফা নির্দেশনা দেয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই সুপারিশমালা ১৬ বছর ধরে ফাইলবন্দি। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে নিমতলীর ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে চকবাজারের চুড়িহাট্টায়। ওই সময় কিছু সুপারিশ করে ফায়ার সার্ভিস। এতে আগুনের জন্য ওয়াহেদ ম্যানশনের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থতলায় গুদামজাত করাকে দায়ী করা হয়েছে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ২৭ হাজার ৬২৪টি বিস্ফোরণ ও অগ্নিকা- ঘটেছিল। এতে ৭৯২ কোটি টাকার বেশি সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। মারা গেছে ১০২ জনের মতো। ২০২৪ সালে সারা দেশে ২৬ হাজার ৬৫৯টি বিস্ফোরণ ও অগ্নিকা- ঘটেছে। এসব আগুনে প্রাণ হারিয়েছেন ১৪০ জন, আহত হয়েছেন ৩৪১ জন। ২০২৫ সালের সাত মাসে ১৫৪ জন আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনায় মারা গেছেন। তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্যমতে, রাসায়নিক গোডাউন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করলেও দুর্ঘটনা এড়াতে হাতে নেওয়া হয়েছিল অনেক পদক্ষেপই। কিন্তু আলোর মুখ দেখেনি কোনোটিই।

বাসাবাড়িতে রাসায়নিক ঠাসা

পুরান ঢাকাসহ কয়েকটি এলাকায় খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, রাসায়নিক দোকানগুলোতে সারি সারি প্লাস্টিকের ড্রাম আর দাহ্য রাসায়নিক পদার্থে ঠাসা। কোনো কোনোটিতে আবার বস্তাভর্তি দাহ্য কেমিক্যাল। তার ঠিক ওপরই এলোমেলোভাবে ঝুলছে অসংখ্য বৈদ্যুতিক তার। দোকানের ওপরই রয়েছে বাসাবাড়ি। পুরান ঢাকার আরমানিটোলা, লালবাগ, কোতোয়ালি, বংশাল, চকবাজারসহ বেশিরভাগ এলাকার কেমিক্যাল দোকানগুলোর এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। আরমানিটোলা, বাবুবাজার, মিটফোর্ড, চকবাজার, লালবাগ, ইসলামপুর, চানখাঁরপুলসহ আশপাশ এলাকার আবাসিক ভবনে গড়ে উঠেছে ঝুঁকিপূর্ণ গুদামগুলো। এসব গুদাম ও কারখানার অধিকাংশেরই বৈধ কাগজপত্র ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমোদন নেই। এসব গুদামে রয়েছে গ্লিসারিন, সোডিয়াম অ্যানহাইড্রাস, সোডিয়াম থায়োসালফেট, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, মিথাইল ইথাইল কাইটন, থিনার, আইসোপ্রোইলসহ বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ। এগুলো আগুনের সংস্পর্শে এলে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। তদন্ত কমিটির সুপারিশগুলো বাস্তবায়নও সম্ভব হয়নি। ইসলামবাগেই আছে ছোট-বড় কয়েকশ কেমিক্যাল, পলিথিন ও প্লাস্টিক তৈরির কারখানা। ভবনের মালিকরা বেশি ভাড়া পাওয়ার লোভে বাসার পরিবর্তে গুদাম বা কারখানা হিসেবে ভাড়া দিচ্ছেন। অনেক স্থানে ভবন জুড়েই রয়েছে গুদাম। যেসব কারখানা সরাতে হবে, এর একটি তালিকাও করা হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির নির্দেশ উপেক্ষা করে বহাল তবিয়তে ব্যবসা কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ প্লাস্টিক ব্যবসায়ী সমিতির নেতা ও কেমিক্যাল ব্যবসায়ী পলাশ আহমেদ বলেন, পুরান ঢাকা থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিকর কেমিক্যাল দ্রুত সরানো দাবি জানাচ্ছি। আর না হয় মিরপুরের মতো ফের কোনো বড় ঘটনা ঘটুক, সেটা দেশের মানুষ দেখতে চায় না। আমরাও চাই না।

জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক কর্মকর্তা এবং অগ্নি ও দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ এ কে এম শাকিল নেওয়াজ গতকাল দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, দেশের অধিকাংশ এ ধরনের উৎপাদন বা বিপণন প্রতিষ্ঠান একটা মৃত্যুফাঁদ। আর এ ফাঁদ তৈরিতে দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান দায়ী। কারণ সাধারণত ব্যাংক, বিমা, সিটি করপোরেশন, রাজউক, কলকারখানা অধিদপ্তর, বিস্ফোরক অধিদপ্তর, শ্রম মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিসের মতো তদারকি প্রতিষ্ঠান ও ক্ষেত্র বিশেষে জেলা প্রসাশনের অনুমতি প্রাপ্তি সাপেক্ষে নানা ধাপ পেরিয়ে একটি উৎপাদন বা বিপণন প্রতিষ্ঠান খুলতে হয়। এখন যদি ধরে নেই মিরপুরের যে প্রতিষ্ঠানে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটল, তারা সব রকমের শর্ত পূরণ করেই কারখানা গড়ে তুলেছিল। এটাইতো আইনগত প্রক্রিয়া। তাহলে ১৬ জনের প্রাণ হারানোর ঘটনা একটি নিছক দুর্ঘটনা হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা কী দেখলাম?