যশোরের বাঘারপাড়ায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ আরও দুইজন যাত্রী। রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে উপজেলার ভাঙুড়া বাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি পুরো এলাকায় শোকের ছায়া ফেলেছে।

নিহতরা হলেন—নড়াইলের লোহাগড়া থানাধীন লাহুড়িয়া তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) নিক্কন আঢ্য (যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার পুকুরিয়া গ্রামের সন্তান), যশোর সদরের বসুন্দিয়া এলাকার বাসিন্দা আক্তার হোসেন (পিতা আহমদ আলী) এবং যশোর শহরতলীর ভেকুটিয়া এলাকার আব্দুল মজিদের ছেলে আবু জাফর।

হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নড়াইল-যশোর মহাসড়কের ভাঙুড়া বাজার এলাকায় একটি বাঁশবোঝাই ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। এ সময় ঢাকা থেকে যশোরগামী ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ নামের একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকের পেছনে জোরে ধাক্কা দেয়। ধাক্কার ফলে ট্রাকের বাঁশের অগ্রভাগ বাসের সামনের অংশ ভেদ করে ভেতরে ঢুকে যায়। এতে মুহূর্তেই ভেতরে থাকা যাত্রী ও চালকের আসনের আশপাশে তীব্র হতাহতের ঘটনা ঘটে।

দুর্ঘটনার পর স্থানীয়রা দ্রুত উদ্ধার কাজে অংশ নেন। তারা ঘটনাস্থলেই যাত্রী আক্তার হোসেনকে মৃত অবস্থায় পান। গুরুতর আহত পুলিশ কর্মকর্তা এসআই নিক্কন আঢ্য ও যাত্রী আবু জাফরকে দ্রুত যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে আবু জাফরকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। অপরদিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় এসআই নিক্কন আঢ্যকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু পথিমধ্যেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তিনজন মানুষের মৃত্যুতে স্বজনদের মাঝে চলছে শোকের মাতম। নিহত এসআই নিক্কন আঢ্য ছিলেন এক নিবেদিতপ্রাণ পুলিশ কর্মকর্তা, সহকর্মীরা তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক নেতা আবু জাফরের মৃত্যু রাজনৈতিক অঙ্গনেও শোকের সঞ্চার করেছে। সাধারণ যাত্রী আক্তার হোসেনের অকাল মৃত্যু তার পরিবারকে নিঃস্ব করে দিয়েছে।

তুলারামপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সেকেন্দার আলী বলেন, দাঁড়িয়ে থাকা বাঁশবোঝাই ট্রাকে বাসের ধাক্কায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে বাস ও ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রতিনিয়ত মহাসড়কে এ ধরনের দুর্ঘটনা মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাস্তার পাশে বা চলমান লেনে ভারী যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকা যেমন বিপজ্জনক, তেমনি বেপরোয়া বাস চালনাও মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ভাঙুড়া বাজারের এ দুর্ঘটনা আবারও প্রমাণ করলো যে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে এভাবে পরিবার হারাবে তাদের প্রিয়জন।

এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহত তিনজনের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছে স্থানীয় জনগণ ও বিভিন্ন সংগঠন। একই সঙ্গে তারা দুর্ঘটনা এড়াতে সড়ক পরিবহনে আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।