মনিরামপুর (যশোর) সংবাদদাতা : যশোরের রাজারহাট-চুকনগর সড়কে মাত্র ৭ দিনের ব্যবধানে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৬ জন। সড়কের বেহাল দশা, নির্মাণে ত্রুটি, কর্তৃপক্ষের চরম গাফিলতি এবং জনসচেতনতার অভাবই এই ধারাবাহিক প্রাণহানির মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন, সবাই স্বীকার করছেন যে, এই সমস্যাগুলো মনিরামপুরের প্রধান সড়কের জন্য দীর্ঘদিনের অভিশাপ।

সম্প্রতি মনিরামপুর সরকারি কলেজের দক্ষিণ পাশে এক মর্মান্তিক বাস দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন জয়পুর গ্রামের নাজমুল হোসেন ও গাইবান্ধার রতন মিয়া। এই ঘটনায় আরও তিনজন গুরুতর আহত হন।

এর পাঁচদিন পর, সম্প্রতি যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের চালকিডাঙা নামক স্থানে যাত্রীবাহী বাসের চাপায় মোটরসাইকেল চালক আবু তাহের (২৩) নিহত হন।

সবশেষ, ১৪ জুলাই সকালে যশোর-মনিরামপুর সড়কের মনিরামপুর তেল পাম্পের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে আরেকটি দ্রুতগামী ট্রাকের ধাক্কায় ট্রাকচালক রাজু (৩২) এবং হেলপার এরফান (২৮) নিহত হন। তারা দুজনেই সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার বাসিন্দা। এই ৫টি মৃত্যুর ঘটনায় মনিরামপুরের সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে।

মূল সমস্যার গভীরে মনিরামপুর পৌর এলাকার মধ্য দিয়ে যাওয়া মূল সড়কের অবস্থা ভয়াবহ। এই অংশের কংক্রিটের ঢালাই উঠে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে, যা বৃষ্টির দিনে ছোটখাটো ডোবার আকার ধারণ করে। সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগ মাঝে মাঝে দায়সারাভাবে কিছু সংস্কার কাজ করলেও, এর মান অত্যন্ত নিম্ন। স্থানীয়দের অভিযোগ, একদিন যেতে না যেতেই রাস্তা পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে। এছাড়াও, সড়কের দুই ধারে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকা এবং প্রয়োজনীয় গাইড ওয়াল বা সড়কের সীমানা চিহ্নিতকারী রঙিন খুঁটির অভাব প্রায় প্রতিদিনই মালবাহী ট্রাক খাদে পড়ার প্রধান কারণ।

সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে মনিরামপুর পৌর এলাকার মধ্যভাগে সড়কের প্রস্থ নিয়ে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তৎকালীন রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে যেখানে রাস্তার প্রস্থ ৩৮ ফুট হওয়ার কথা ছিল, সেখানে তা মাত্র ২২ ফুটে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। এটি শুধু দুর্ঘটনার ঝুঁকিই বাড়াচ্ছে না, প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শহরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি করছে। মনিরামপুর শহর পার হতে গড়ে ১৫ থেকে ৩০ মিনিট সময় নষ্ট হচ্ছে, যা স্থানীয় অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।