গাজীপুরের টঙ্গীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে অন্তত সাতটি তুলার গুদাম। শনিবার (৮ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে টঙ্গী পশ্চিম থানার মিলগেট এলাকার শ্রমিক মালিকানাধীন নিউ মন্নু ফাইন কটন মিলের ভেতরে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দাহ্য পদার্থে ভরা গুদামগুলোতে মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়লে আগুন নিয়ন্ত্রণে টঙ্গী, উত্তরা ও গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট যোগ দেয়। টানা দুই ঘণ্টার প্রচেষ্টায় তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রথমে আব্দুল মান্নান মিয়ার মালিকানাধীন একটি গুদামে আগুন লাগে। মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের বাবুল মিয়া, আব্দুস সাত্তার চৌধুরী, শহীদুল ইসলাম, শাহীন ও জহিরুল ইসলামের মালিকানাধীন গুদামগুলোতে। আগুনের ভয়াবহতায় আশপাশের এলাকা ঘন ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, আতঙ্কে পড়ে যায় স্থানীয়রা।
টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন মাস্টার শাহিন আলম বলেন, তুলা দাহ্য পদার্থ হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়দের সহায়তায় আমাদের সদস্যরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হন। তবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও আগুন লাগার কারণ তদন্তের পর জানা যাবে।
শনিবার বেলা ২টার দিকে ঘটনাস্থলে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক, কাজী নজমুজ্জামান বলেন, খবর পাওয়ার চার মিনিটের মধ্যেই আমাদের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। পরে উত্তরা ও গাজীপুর থেকে আরও চারটি ইউনিট যোগ দেয়। সাতটি ইউনিটের সমন্বিত প্রচেষ্টায় পাশের ছয়তলা গার্মেন্টস ভবনসহ একাধিক স্থাপনা রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। তিনি আরও জানান, আশপাশে পানির কোনো উৎস না থাকায় আগুন নেভাতে ব্যাপক সমস্যা হয়, পরে গাজীপুর সিটি করপোরেশন পানির গাড়ি পাঠিয়ে সহযোগিতা করে। ঘটনাস্থলের কোনো গুদামের অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থা ছিল না এবং তারা ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদনও নেয়নি বলে জানান তিনি।
এদিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান গাজীপুর-৬ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ড. হাফিজুর রহমান। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের খোঁজখবর নেন ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের সঙ্গে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে অংশ নেন। তিনি বলেন, মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়ানোই প্রকৃত মানবিকতা ও ঈমানের দাবি। এই দুর্যোগে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছে—এটাই আমাদের সামাজিক দায়িত্ববোধের প্রতিফলন।
তিনি আরও বলেন, ফায়ার সার্ভিসকে আধুনিকায়ন করতে হবে, শহরের দখলকৃত পুকুরগুলো উদ্ধার করে আগুন নির্বাপনে পানির স্থায়ী উৎস তৈরি করা জরুরি। পাশাপাশি ব্যবসায়িক এলাকায় নিরাপত্তা ও অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের উদ্যোগ বাড়াতে হবে।
এসময় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রাষ্ট্রায়ত্ত মন্নু টেক্সটাইল মিলসের উপদেষ্টা ও গাজীপুর-৬ আসনের বিএনপি মনোনয়ন প্রত্যাশী বশির উদ্দিন। তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে প্রশাসনের প্রতি দ্রুত পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করার আহ্বান জানান।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় আড়াই দশক আগে রাষ্ট্রায়ত্ত মন্নু টেক্সটাইল মিলস শ্রমিক মালিকানায় হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে শ্রমিকরা হস্তান্তরের শর্ত ভঙ্গ করে মিলের অবকাঠামো, খোলা জায়গা ও ভবনগুলো গুদাম হিসেবে ভাড়া দিয়ে মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করতে থাকে। আওয়ামী শ্রমিকলীগ নেতারা বর্তমানে মিলটি পরিচালনা করলেও এর উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছেন সাবেক সাংসদ, জাহিদ আহসান রাসেল এবং শ্রমিকদল নেতা সালাহ উদ্দিন সরকার।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রশাসনিক উদাসীনতায় এসব অবৈধ গুদাম বছরের পর বছর ধরে টিকে আছে। কোনো অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় আজকের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তারা ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে স্থায়ী অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা, প্রশাসনিক নজরদারি ও গুদামগুলোর বৈধতা যাচাইয়ের দাবি জানিয়েছেন।