চট্টগ্রাম নগরীতে টানা তুমুল বর্ষণের মধ্যে আবারও নালায় পড়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নগরীর হালিশহর থানার আনন্দিপুর এলাকার একটি নালা থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত শিশুর নাম হুমায়রা আক্তার (বয়স আনুমানিক ৩ থেকে সাড়ে ৩ বছর)। সে স্থানীয় একটি কলোনিতে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করত। তার পিতা আব্দুর রহমান একটি ক্যাবল সংযোগ প্রতিষ্ঠানে লাইনম্যান হিসেবে কর্মরত।

হালিশহর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইমন দত্ত জানান, শিশুটি নালায় পড়ে নিখোঁজ হওয়ার খবরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় পরে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, বৃষ্টির মধ্যে কিছু কিশোর নালার পাশে ফুটবল খেলছিল। খেলার সময় বল নালায় পড়ে গেলে শিশুটি সেটি আনতে গিয়ে পানির স্রোতে তলিয়ে যায় এবং পাশের আরেকটি ড্রেনে আটকে পড়ে। সেখান থেকেই উদ্ধার করা হয় তার নিথর দেহ।

চট্টগ্রাম নগরীতে মঙ্গলবার সকাল থেকে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। রাতভর অঝোর বৃষ্টির পর বুধবার দুপুরের পর থেকে মুষলধারে বৃষ্টি অব্যাহত ছিল। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬০ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা ‘অতি ভারী বর্ষণ’ হিসেবে বিবেচিত। আবহাওয়াবিদ মো. ইসমাইল ভূঁইয়ার মতে, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর কারণে এ ধরনের বৃষ্টিপাত আরও দুই দিন অব্যাহত থাকতে পারে।

এর আগে, চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল নগরীর চকবাজারের হিজড়া খাল সংলগ্ন নালায় একটি অটোরিকশা পড়ে ছয় মাস বয়সী এক শিশু প্রাণ হারায়। পরে প্রায় ১৪ ঘণ্টা পর শিশুটির লাশ উদ্ধার হয় চাক্তাই খাল থেকে। এই ঘটনাগুলো জনমনে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। পূর্ববর্তী দুর্ঘটনাগুলোর পর নগরীর খাল ও নালাগুলো নিরাপদ করতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বাঁশের বেড়া দেওয়ার ঘোষণা দিলেও কার্যকর কোনো স্থায়ী উদ্যোগ দৃশ্যমান হয়নি।

উল্লেখ্য, গত ছয় বছরে চট্টগ্রাম নগরীতে খাল ও নালায় পড়ে অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২০২০ সালে ২ জন, ২০২১ সালে ৫ জন, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে ৩ জন করে এবং ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত ২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। নগরবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।