জুলাই-আগষ্ট গণ আন্দোলনের সময় পুলিশের থানা ও ফাঁড়ি থেকে লুট হওয়া বিভিন্ন ধরনের ১৩৭৫টি আগ্নেয়াস্ত্রের হদিস মিলছেনা। একইসাথে লুট হওয়া ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৪৯ রাউন্ড গোলাবারুদেরও কোন খবর নেই। প্রতিদিনই লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রসহ গোলাবারুদের খোঁজে চলছে দেশব্যাপী অভিযান। এ অভিযানে এখন পর্যন্ত লুট হওয়া ৫৭৫৩ টি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে ৪৩৭৮টি উদ্ধার করা হয়েছে। লুট হওয়া ৬ লাখ ৫১ হাজার ৮২০ রাউন্ড গোলাবারুদের মধ্যে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯৭১ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে।
বিগত ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সময় লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদের খোঁজে টানা অভিযান চলছে জানিয়ে পুলিশ সদর দপ্তর সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা গতকাল রোববার দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিয়মিত উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছেন। এছাড়া সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নিয়েও যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। মাঝখানে বেশ কিছুদিন ‘ অপারেশন ডেভিল হান্ট’ পরিচালনা করা হয়। এসব অভিযানে অস্ত্র উদ্ধার অভিযান জোরদার ছিল। এখনও চলছে জানিয়ে সুত্রগুলো জানায়, ধারনা করা হচ্ছে লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র- গোলাবারুদগুলো খালে বিলে পানিতে ফেলে দেয়ার কারনে হদিস মিলছেনা। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ এখন বিভিন্ন হাত হয়ে ছোট বড় অপরাধীদের হাতে থাকতে পারে। ফলে এসব অপরাধমূলক কর্মকা-ে ব্যবহৃত হতে পারে। তারা জানান, সীমানা পেরিয়েও এসব আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ অন্যদের হাতে চলে যেতে পারে। বিক্রি ও সন্ত্রাসী গ্রুপের হাতবদলের মাধ্যমে।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যে (২০ এপ্রিল পর্যন্ত) জানা যায়, লুট হওয়া ১১০৬টি ৭.৬২*৩৯ মি.মি. চায়না রাইফেলের মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ৯৯১টি। এখন পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি ১১৫টি। ১২ টি ৭.৬২*৩৯ মি.মি. রাইফেল-টি ৮ (বিডি) এর মধ্যে উদ্ধার ১১টি, বাকী এখনও ১টি, ২৫১টি ৭.৬২*৩৯ মি.মি. এসএমজি-টি ৫৬ (চায়না) এর মধ্যে উদ্ধার ২২১টি, বাকী ৩০টি, ৩৪টি ৭.৬২*৩৯ মি.মি. এলএমজি-টি ৫৬ (চায়না) এর মধ্যে উদ্ধার ৩১টি বাকী ৩টি, ৫৩৯টি ৭.৬২*২৫ মি.মি. পিস্তল-টি ৫৪ (চায়না) এর মধ্যে উদ্ধার ৩২৪টি বাকী ২১৫টি, ১০৯২টি ৯*১৯ মি.মি. পিস্তল‘র মধ্যে উদ্ধার ৬২৮টি বাকী ৪৬৪, ৩৩টি ৯*১৯ মি.মি. এসএমজি/এসএমটির সবকটিই উদ্ধার, ২০৭৯টি ১২ বোর শটগান‘র মধ্যে উদ্ধার ১৬৭৮টি বাকী ৪০৫, ৫৮৯টি ৩৮ মি.মি. গ্যাস গান (সিঙ্গেল শট) এর মধ্যে উদ্ধার ৪৫৬টি বাকী ১৩৩টি, ১৫টি ৩৮ মি.মি. টিয়ার গ্যাস লাঞ্চার (সিক্স শট) এর মধ্যে উদ্ধার ৮টি বাকী ৭টি, ৩টি ২৬ মি.মি. সিগন্যাল পিস্তল‘র মধ্যে উদ্ধার ১টি বাকী ২টি। সর্বমোট লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র‘র সংখ্যা ৫৭৫৩টি, উদ্ধার হয়েছে ৪৩৭৮টি। এখনও উদ্ধার হয়নি ১৩৭৫টি। লুট হওয়া গোলাবারুদের
মধ্যে বিভিন্ন বোরের গুলি ৬১২৯৮২ রাউন্ড। উদ্ধার হয়েছে ৩৬৮৪৬১ রাউন্ড। উদ্ধার হয়নি ২৪৪৫২১ রাউন্ড। ৩১২১২ টি বিভিন্ন ধরনের টিয়ার শেলের মধ্যে ১৯৮০৩ টি উদ্ধার হয়েছে। ১১৪০৯টি উদ্ধার হয়নি। বিভিন্ন ধরণের টিয়ার গ্যাস গ্রেনেড ১৪৭৫ টির মধ্যে ১১৯৫ উদ্ধার হয়েছে। বাকী রয়েছে ২৮০টি। সাউন্ড গ্রেনেড ৪৭৪৬ টি লুট হয়েছে। এর মধ্যে উদ্ধার ৩৫৭৪টি, বাকী আছে ১১৭২টি। কালার স্মোক গ্রেনেড ২৭২টির মধ্যে উদ্ধার ২৩২টি, বাকী এখনও ৪০টি। সেভেন/মাল্টিপল ব্যাং স্টান গ্রেনেড লুট হয়েছে ৫৫টি, উদ্ধার হয়েছে ১৮টি। বাকী এখনও ৩৭টি। ফ্ল্যাশ ব্যাং/৬ ব্যাং গ্রেনেড লুট হয় ৯০০টি, উদ্ধার হয়েছে ৬২৬টি, এখনও বাকী ২৭৪টি। হ্যান্ড হেল্ড টিয়ার গ্যাস স্প্রে (ক্যানিস্টার) ১৭৮টির মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ৬২টি, বাকী ১১৬টি এখনও উদ্ধার হয়নি। সর্বমোট গোলাবারুদ ৬৫১৮২০ রাউন্ডের মধ্যে ৩৯৩৯৭১ উদ্ধার হয়েছে। বাকী ২৫৭৮৪৯ রাউন্ড গোলাবারুদ এখনো উদ্ধার হয়নি।
পুলিশ সদর দপ্তর সুত্র জানায়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার প্রায় এক মাস পর ৪ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার লুট করা অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের জন্য দেশব্যাপী যৌথ অভিযান শুরু করে। এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে লুটপাট করা আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে, বাকিগুলো খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এর মধ্যেই গত ৬ মার্চ, চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সান্টু বলেন যে ৩ মার্চ সাতকানিয়ায় জনতার মারধরের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা একটি আগ্নেয়াস্ত্র ছিল চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অধীনে কোতোয়ালি থানা থেকে লুট করা একটি অস্ত্র। ৩ মার্চ, সাতকানিয়া উপজেলার এওছিয়া ইউনিয়নের চাঁনখোলা চুড়ামণি গ্রামে ডাকাত সন্দেহে জনতা দুই ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই ঘটনায় আরও পাঁচজন গুলীবিদ্ধ হন।
এর আগে গত ৩১ জানুয়ারী, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার শামসপুর এলাকার মহাসড়কের একটি সার্ভিস লেনে এক তরুণীর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে, পুলিশ ভোলার ইলিশা এলাকা থেকে নিহতের প্রেমিক তৌহিদ শেখ তন্ময়কে গ্রেফতার করে এবং জানতে পারে যে ঢাকার ওয়ারী থানা থেকে লুট করা একটি পিস্তল হত্যাকা-ে ব্যবহৃত হয়েছিল।