বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান তুলসি গ্যাবার্ডের মন্তব্যে বাংলাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কয়েকজন উপদেষ্টাও একইসাথে মন্তব্য করেছেন। বাংলাদেশের সরকার প্রধান প্রফেসর ইউনূসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, সাথে ডিএনআই তুলসি গ্যাবার্ড যেখানে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিপীড়ন ও হত্যার অভিযোগ করেছেন এবং দেশে ইসলামী সন্ত্রাসীদের হুমকি, একটি ইসলামি খলিফাকে শাসন ও শাসন করার” “মতাদর্শ ও উদ্দেশ্য” এর মধ্যে “মূল” রয়েছে। বিবৃতিটি বিভ্রান্তিকর এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও সুনামের জন্য ক্ষতিকর, এমন একটি জাতি যাদের ইসলামের ঐতিহ্যগত অনুশীলন বিখ্যাত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং শান্তিপূর্ণ এবং এটি চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয় গ্যাবার্ডের মন্তব্য কোনো প্রমাণ বা সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে নয়। তারা একটি বিস্তৃত এবং অযৌক্তিক মন্তব্য করেছেন। বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও চরমপন্থার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছে, তবে আইন প্রয়োগ ও সামাজিক সংস্কার এবং অন্যান্য সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই সমস্যাগুলি মোকাবেলা করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে অংশীদারিত্বে কাজ করেছে।
বাংলাদেশকে একটি “ইসলামী খেলাফতের” ধারণার সাথে ভিত্তিহীনভাবে সংযুক্ত করা অগণিত বাংলাদেশী এবং তাদের বন্ধু এবং বিশ্বব্যাপী অংশীদারদের কঠোর পরিশ্রমকে ক্ষুন্ন করে যারা শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং অগ্রগতির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ যে কোনো ধরনের “ইসলামী খেলাফতের” সাথে দেশটিকে যুক্ত করার যে কোনো প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা করে।
প্রসঙ্গত সোমবার ভারতের এনডিটিভি ওয়ার্ল্ডকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিষয়ক প্রধান তুলসি গ্যাবার্ড বলেন, বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র। তার কাছে প্রশ্ন রাখা হয়, ভারতের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী বাংলাদেশ এবং এই উপমহাদেশে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। দেখা দিয়েছে ভয়াবহ সহিংসতা। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলারও অনেক রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এসব স্থানের পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কি উদ্বিগ্ন? শুধু রাজনৈতিক নয় সব ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতার প্রয়োজন কিনা? জবাবে তুলসি বলেন, ‘অবশ্যই। দীর্ঘদিন ধরে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান এবং অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নিষ্পেষণ, হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতন অব্যাহত আছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের কাছে উদ্বেগের কেন্দ্রে আছে এ বিষয়টি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা প্রধানদের একটি সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতের নয়াদিল্লিতে সফরে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিষয়ক প্রধান তুলসি গ্যাবার্ড।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধান তুলসি গ্যাবার্ড যে মন্তব্য করেছেন, সেটিকে গুরুতর বলেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। গতকাল মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
এদিকে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ড যে মন্তব্য করেছেন তাতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বহুপাক্ষিক বা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে প্রভাব পড়বে না। দেশের অর্থনীতি খাদের কিনারায় চলে গিয়েছিল, সেখান থেকে টেনে তোলার চেষ্টা করছি। এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের দিকে অনেকেই তাকিয়ে আছে। কিছু ভুল-ত্রটি থাকলেও অবস্থা সন্তোষজনক। মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা এ কথা বলেন।