বন্দরের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক গুলি করে হত্যার ঘটনার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ গতকাল মঙ্গলবার সব টহল ও থানা ইউনিটকে বেতার (ওয়ারলেস) মাধ্যমে একটি মৌখিক নির্দেশ দিয়েছেন- অস্ত্রধারী বা সশস্ত্র সন্ত্রাসীকে দেখলেই সাবমেশিন গান (এসএমজি) থেকে ব্রাশফায়ার করা হবে। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ১টার মধ্যে তিনি কয়েক দফায় একই নির্দেশনা দেন বলে সিএমপির বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, পাহাড়ি এলাকা থেকে আসা সশস্ত্র মহৃপদের কারণে নগরে এই ধরনের ঘটনাগুলো ঘটছে। এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে কমিশনার ওই কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা জানতে চেয়েছেন তিনি-যেখানে স্পষ্ট করা হয়েছে, নির্দেশনা নিরস্ত্র সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে নয়; শুধুমাত্র অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিএমপির চার জোনের অন্তত পাঁচজন কর্মকর্তা এ আদেশের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। কমিশনার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “শটগান হবে না, চায়না রাইফেলও বাদ-এখন এসএমজি ব্রাশফায়ার মুডে থাকবে। দেখামাত্র ব্রাশফায়ার নিরস্ত্র জনসাধারণের জন্য নয়। যার হাতে অস্ত্র নেই, তার ওপর তো আর এসএমজি ব্যবহার করব না।”
কমিশনার জানিয়েছেন, নগরে ঢুকে কেউ প্রকাশ্য দিবালোকে খুন করলে তা বরণীয় নয়; এমন ঘটনার প্রতিবাদসূচক ব্যবস্থা নেওয়াই তাঁর লক্ষ্য। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, দলের ছোট ধরনের মিছিল বা নিরস্ত্র জনসমাবেশের ওপর এই ব্যবস্থার অপব্যাখ্যা হওয়া যাবে না-আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলের মতো নিরস্ত্র কর্মসূচি যেখানে এমন আদেশ প্রয়োগ হবে না এবং ঐ ধরনের লোককে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
এছাড়া তিনি কিছু সন্ত্রাসী দল ও পরিচিত সন্ত্রাসীদের নামও উল্লেখ করে বলেছেন, যারা কথায় কথায় মানুষ বলে মারে-তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে। টহল টিমগুলোকে এসএমজি ছাড়াও শিশা শটগান, দুইটি গ্যাস গান ও টিম ইনচার্জদের জন্য ৯ মিমি পিস্তল বহনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্থায়ী চেকপোস্ট সাতটি থেকে বাড়িয়ে ১৩টিতে উন্নীত করার নির্দেশও দিয়েছেন কমিশনার। তিনি পুলিশ সদস্যদের জন্য দণ্ডবিধির ধারাগুলি (৯৬ থেকে ১০৬) স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, আত্মরক্ষার ব্যক্তিগত অধিকার সব পুলিশ কর্মকর্তারই আছে এবং তৎপরতার দায়ভার তিনি নিজে বহন করবেন।
স্মরণযোগ্য-আগে ১৩ আগস্ট আওয়ামী লীগের এক মিছিলের সময় বন্দর থানার এক পুলিশ কর্মকর্তাকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনায় কমিশনার সাক্ষাৎকারে তখনও গুলির নির্দেশনা দিয়েছিলেন। বর্তমানে প্রদত্ত নতুন নির্দেশনাকে ঘিরে পুলিশের ভেতরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, নির্দেশ থাকলেও মাঠের অবস্থার বিবেচনায় কাজ করতে হয়; অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু বা পরে আইনগত জটিলতার আশঙ্কা থেকেই সবাই জরুরি অবস্থায় খুব সাবধানে কাজ করে।