দেশে কোভিড সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কায় মেট্রোরেলের যাত্রীদের মাস্ক পরার অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড Íডিএমটিসিএল। সোমবার ডিএমটিসিএলের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনা সংক্রমণ এড়াতে মেট্রোরেলের যাত্রীদের মাস্ক পরার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে।

ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে করোনাভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার খবরে সোমবার নতুন সতর্কতা জারি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভারত এবং ভাইরাস ছড়ানো অন্যান্য দেশে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি ঝুঁকি মোকাবেলায় সব স্থল ও বিমানবন্দরে হেলথ স্ক্রিনিং ও নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে সেখানে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হঠাৎ করেই বেড়েছে। স্বাস্থ্য বাতায়নের ১৬২৬৩ নম্বরে করোনাবিষয়ক কলের সংখ্যা হঠাৎ করেই বেড়েছে। এ নম্বরে ফোন করে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত যেকোনো পরামর্শ পাওয়া যায়। গত বৃহস্পতিবার দেশে করোনায় একজনের মৃত্যু হয়। আশঙ্কাজনক না হলেও দেশে এ রোগের প্রকোপ বাড়ছে।

২০২২ সাল থেকে দেশে করোনা সংক্রমণ কমতে শুরু করে। পরের বছর থেকে করোনা রোগী শনাক্তের হার নেমে আসে প্রায় শূন্যের কোঠায়। ফলে মাস্ক পরার যে বাধ্যবাধকতা, তাও সে সময় তুলে নেওয়া হয়েছিল। তবে সম্প্রতি দেশে আবারও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

পাঁচ বছর আগে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রথম চীনে ছড়ানো করোনাভাইরাস দুই মাস পর ছড়িয়েছিল বাংলাদেশেও। এরপর নানা উদ্বেগ আর আতঙ্কের মধ্যে মাস্ক পরাসহ ধাপে ধাপে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হয় টানা তিন বছর। সেসময় লকডাউনে জনশূন্য হয় নগর, শহর। অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজের কার্যক্রম চলে অনলাইনে। চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়ে মানুষ। সীমান্ত সংযোগ ও বিমানবন্দরে চলে কঠোর কড়াকড়ি, স্থগিত রাখা হয় আকাশ যোগাযোগ। বিশ্বব্যাপী সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, ডলারের দাম বাড়ে, বেড়ে যায় নিত্যপণ্যের দামও। সেইসঙ্গে হাসপাতালগুলো ভরে যায় কোভিড রোগীতে, ঘটে প্রাণহানি। বছর তিনেক এ অবস্থা চলার পর কোভিডের সংক্রমণ কমতে থাকলে ধীরে ধীরে সব স্বাভাবিক হতে শুরু করে।

সম্প্রতি সেই ভাইরাসের নতুন ধরন ‘এনবি.১.৮.১’ এর সংক্রমণ বাড়ার খবর মিলছে। ভারতের কেরালা, গুজরাট, পশ্চিমবঙ্গ ও দিল্লিকে এখন ‘সংক্রমণের হটস্পট’ ধরা হচ্ছে। দেশটিতে এক দিনেই মৃত্যু হয়েছে ছয়জনের। এ অবস্থার মধ্যে বাংলাদেশেও কোভিড আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবার ঢাকায় একজনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বাংলাদেশে দেড় বছরের মধ্যে কোভিডে মৃত্যুর প্রথম ঘটনা সেটি।

সংক্রমণ যেন না বাড়ে, সেজন্য জনসমাগমে মাস্ক পরতে জনসাধারণের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

২০২০ সালে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর দেশে ১ কোটি ৫৭ লাখ ২৬ হাজার ২২৪টি নমুনা পরীক্ষা করে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৩৯ জন রোগী শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয় ২৯ হাজার ৫০০ জনের। ২০২৪ সালে এই রোগে কেউ মারা যাননি। ২০২৩ সালে ৩৭ জন, ২০২২ সালে ১৩৬৮ জন রোগী মারা যান।

কোভিডে সবচেয়ে বেশি ২০ হাজার ৫১৩ জনের মৃত্যু হয় ২০২১ সালে। আর মহামারীর প্রথম বছর ২০২০ সালে কেড়েছিল ৭ হাজার ৫৫৯ জনের প্রাণ।

ভারতে ছড়িয়ে পড়া এই ধরন বাংলাদেশে যে আসবে না, এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। বরং ঝুঁকি আছে যথেষ্ট-এমনটাই মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল। তাঁর কথা, এ জন্য করোনা প্রতিরোধে প্রস্তুতি দরকার।

চট্টগ্রামে নতুন করে ৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত

চট্টগ্রাম ব্যুরো : ঢাকার পর এবার চট্টগ্রামেও নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। চলতি বছর চট্টগ্রামে এটাই প্রথম করোনা সংক্রমণের ঘটনা। গত দুই দিনে শহরের তিনজন বাসিন্দার শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন দুইজন নারী ও একজন পুরুষ। তবে তারা কোন ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত হয়েছেন, তা এখনও নিশ্চিত নয় বলে জানিয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সোমবার চট্টগ্রামের মা ও শিশু হাসপাতালে ২৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় দুইজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে একজন ৭৫ বছর বয়সী পুরুষ ও অপরজন ৫৫ বছর বয়সী নারী।

এরপর মঙ্গলবার শহরের একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ৪৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩০ বছর বয়সী এক নারীর শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। আক্রান্ত তিনজনই নগর এলাকার বাসিন্দা।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সোমবার দুইজন এবং মঙ্গলবার একজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তরা শারীরিকভাবে মোটামুটি ভালো আছেন এবং আমাদের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। শনাক্ত দুইজন ইতোমধ্যে বাড়ি ফিরে গেছেন।”

তিনি আরও জানান, “নতুন করে সংক্রমণ ঠেকাতে আমাদের সবধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। যদিও কিছু কিটের ঘাটতি রয়েছে, তবে আশা করছি শনিবারের মধ্যেই তা পূরণ হবে। এ ছাড়া আমাদের হাতে প্রায় ৮০ হাজার ডোজ করোনা টিকা মজুদ রয়েছে।”

উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে করোনাভাইরাসের একটি নতুন ধরন ছড়িয়ে পড়ছে। ভারতের এনবি ১.৮.১ নামে পরিচিত এই ভ্যারিয়েন্টটি বাংলাদেশেও শনাক্ত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডঐঙ) গত ২৩ মে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এনবি ১.৮.১ ভ্যারিয়েন্টটি তুলনামূলক বেশি সংক্রামক এবং দ্রুত বিস্তার লাভ করছে।