বর্তমান সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা.এ জেডএম জাহিদ হোসেন বলেছেন, আওয়ামী লীগ যেমন মুক্তিযোদ্ধাকে দলীয়করণ করেছিল, তেমনি জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের যদি দলীয়করণ করেন, তাহলে তাদের অবমূল্যায়ন করা হবে। বিএনপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে বলেন, আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে জনগণের সামনে যান। জনগণ যেটি ভালো সেটি গ্রহন করবে, যাকে ভালো মনে করবেন না তাকে আস্তকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত করবে।

গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এক আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।

‘রাষ্ট্র নায়ক জিয়াউর রহমানের নেতৃত্ব ও বর্তমান বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন রুনু।

সরকারের উদ্দেশ্যে ডা. জাহিদ বলেন, ৫ আগস্টের পর জনগণ আপনাদের দায়িত্বে বসিয়েছে দেশে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ একটি জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করার জন্য। যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো নির্বাচনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন, বিচারালয়, প্রসাশন, নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন দেবেন। জনগণের ক্ষমতা, জনগণের মালিকানা জনগণকে ফিরিয়ে দেবেন। তিনি বলেন, আমরা আবারও বলতে চাই দ্রততম সময়ের মধ্যে জনগণের অধিকার জনগণকে ফেরত দেওয়ার মধ্যই আগামীর বাংলাদেশ গড়ার শক্তি নিহিত আছে।

তিনি বলেন, ৮ আগস্ট আপনাদের দয়িত্ব দেওয়ার পর থেকে প্রায় ১০ মাস হতে চললো। কয়েকদিন পর বর্ষপূর্তি হবে। এই অবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে আমাদের জানতে ইচ্ছা হয়- আপনারা আবু সাঈদ ও মুগ্ধর কথা বলেন। কিন্তু আমাদের সকল শহীদদের কথা বার বার বলতে হবে। কিন্তু শহীদদের যদি আপনারা আওয়ামী লীগের মতো দলীয়করণ করেন, তাহলে শহীদদের অবমূল্যায়ন করা হবে।

তারেক রহমান খুঁজলেই পাওয়া যায় না মন্তব্য করে জাহিদ হোসেন বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে কথা বলেছেন। আচ্ছা বলেন তো, আপনারা প্রতিদিন যুমনাতে যান.. যমুনা থেকে বের হওয়ার পরে আপনারা আপনাদের মতো কথা বলেন, আর প্রেস সচিব প্রেস সচিবের মতো ব্রিফিং করে। এটা মধ্যে কোনো দোষ নাই। দোষ কোথায়? তারেক রহমানের সাথে ড. মুহ্ম্মাদ ইউনুসের মিটিংয়ের পরে প্রেস ব্রিফিংটা কেনো? আপনারা করেন প্রতিদিন ওইটার দোষ নাই আর একটা বাংলা ভাষা বলতে চাই না.. ওটা বললে অনেকে ব্যাঙ্গ করবেন। আয়নায় চেয়ারাটা দেখবেন, তারেক রহমান শুধু একটি মানুষ নয়, তারেক রহমান এদেশের বৃহত্তম জনগোষ্ঠির প্রতীক।

জাহিদ বলেন, তারেক রহমান নিজের যোগ্যতা বলে আজকে দেশের শুধু বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে যারা বিশ্বাস করে তাদেরকে নয়, বিএনপিকে নয়, গণতন্ত্রকামী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে আজকে উনি নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত। তারেক রহমানকে নিয়ে আপনারা নিজেদের সাথে তুলনা করবেন মানুষ হাসে এবং আড়ালে আঁচলের তলায় মুখ লুকানো। কথা বলেন, আপনাদেরটা বলেন, কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু তারেক রহমানের সাথে ড. মুহাম্মদ ইউনুস কথা বলবেন কি বলবেন না আপনারা বলবেন, জাতি বিব্রত। আরে ভাই, জাতির হোল সেলার কি আপনারা নিয়েছেন? ১৮ কোটি মানুষের দায়-দায়িত্ব কে নিয়েছে? নির্বাচন হয়েছে? নির্বাচিত তিন‘শ প্রতিনিধি আছে যে, তারা নির্বাচিত প্রতিনিধি। তিনি বলেন, সবসময় জাতিকে নিয়ে টান দেবেন না। জাতিকে নিয়ে টান দিলে তাহলে কিন্তু হিসাব-কিতাব ভিন্ন হতে পারে।

তিনি বলেন, আমরা স্পষ্টভাষায় বলে দিতে চাই, নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের নেতা(তারেক রহমান) বলেছিলেন ডিসেম্বরে, তার পরবর্তিতে শুনলাম ফেব্রুয়ারিতে। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে জনগণের অধিকার জনগণকে ফেরত দেওয়ার মধ্যেই আগামীর বাংলাদেশ গড়ার শক্তি নিহিত আছে। কোনো অবস্থাতে এটিকে যদি প্রলম্বিত করার চেষ্টা করা হয় আর বিএনপিকে নিয়ে বারে বারে কথা বলার চেষ্টা করা হয়, আজকে অনেকে অনেক কথা বলেন। ভাই আমরা পেছনের দিকে তাঁকাতে চাই না, আমরা জিয়াউর রহমানের দল, আমরা খালেদা জিয়ার দল, আমাদের নেতা তারেক রহমানৃ আমরা ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করতে চাই।

বিএনপি বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রতি প্রশ্ন রেখে জাহিদ বলেন, আসেন, কথা বলেন, আগামী দিনে আপনার ম্যান্ডেট কি? আমাদের ম্যান্ডেট ৩১ দফা। আপনার ম্যান্ডেট কি? ওইগুলো নিয়ে আলোচনা করেন, জনগণের সামনে যান, জনগণ যেটি ভালো সেটি গ্রহন করবে, যাকে ভালো মনে করবেন না তাকে আস্তকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত করবে। জনগণের শক্তিতে কেনো বিশ্বাস করেন না? কেনো নিজেরা নিজেরা মনে করেন আপনারা কয়েকজন লোক যা বলবেন সেটিই বাস্তবায়ন হবে। জনগণকে তার ক্ষমতা প্রয়োগ করার সুযোগ দেন।

এনআরএফ’র আহ্বায়ক সৈয়দ আবদাল আহমেদের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক তাজমেরী এস এ ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডীন অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম, বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।