গভীর নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় জেলাসমুহ প্লাবিত হয়েছে। গভীর নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, হাতিয়া, সন্দ্বীপ, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ২-৪ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়। এতে জেলাসমুহের বাসিন্দারা ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েন।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে সাগরদ্বীপ ও খেপুপাড়ার নিকট দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে দমকা ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়।
বরিশাল থেকে জানানো হয়েছে আবহাওয়া বৈরী থাকায় গতকাল সকাল থেকে বরিশাল নৌ টার্মিনাল থেকে অভ্যন্তরীণ রুটের সকল ছোট লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়। নৌ- বন্দরের কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেলিম রেজা বলেন, বরিশাল নৌ-বন্দর থেকে ১৬টি রুটে ছোট লঞ্চ ও ঢাকা চল রুটের বড় লঞ্চগুলোর চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই আদেশ বহাল থাকবে। বরিশাল নদীবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের কারণে বৈরি আবহাওয়া সৃষ্টি হওয়ায় নৌ-বন্দরকে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে সকাল আটটা থেকে অভ্যন্তরীণ রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে বরিশাল থেকে ভোলা, মেহেন্দিগঞ্জ, হিজলা, বাকেরগঞ্জসহ অভ্যন্তরীণ অন্তত আটটি রুটের নৌ চলাচল বন্ধ আছে।
বরিশাল আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালে ৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বাতাসের গতিবেগ ছিল সর্বোচ্চ ১৫ কিলোমিটার ও সর্বনিম্ন ১০ কিলোমিটার। আবহাওয়া অফিস আরও বলছে, অমাবস্যা ও গভীর নিম্নচাপের ফলে উপকূলীয় জেলা বরিশালসহ চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, হাতিয়া, সন্দ্বীপ, বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং জেলাগুলোর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর স্বাভাবিকের চেয়ে ২ থেকে ৪ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
এদিকে নিম্নচাপের ফলে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বরিশালে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হচ্ছে যার ফলে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে,দোকানপাট বেশিরভাগই বন্ধ আছে। নগরীর বেশিরভাগ রাস্তাঘাটেই পানি জমতে শুরু করে, বরিশাল শহরের বর্ধিত অংশ হিসেবে পরিচিত নগরীর নিম্নাঞ্চলে পানি জমার কারণে সেখানকার খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে যায়।
খুলনা ব্যুরো : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় এর প্রভাবে খুলনায় বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বইছে। নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়েছে। এদিন খুলনায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পাশাপাশি বইছে ঝড়ো বাতাস। স্বাভাবিক জোয়ারের তুলনায় আড়াই থেকে তিন ফুট উচ্চতার জলোচ্ছাসে প্লাবিত হয়েছে বিশ্ব এতিহ্য সুন্দরবন। সুন্দরবনের দুবলার চরে স্বাভাবিকের তুলনায় তিন ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আর সুন্দরবনের করমজলে পানি বেড়েছে আড়াই ফুট। এতে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অব¯’ানরত গভীর নিম্নচাপটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে সাগরদ্বীপ ও খেপুপাড়ার কাছ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে আজ সন্ধ্যা নাগাদ উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে এবং ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে পারে।
নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে দমকা/ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। বর্তমানে গভীর নিম্নচাপের কারণে কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বো”চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। গভীর নিম্নচাপের কারণে কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। এদিকে নদ-নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় খুলনার উপকূল অঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ¯’ানীয়রা। বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার খর্নিয়া সাপ্তাহিক পশুর হাটে গরু নিয়ে আসা ব্যাপারীরা। দিনভর অপেক্ষা করেও মেলেনি ক্রেতা।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. মিজানুর রহমান বলেন, নিম্নচাপের প্রভাবে খুলনায় দিনভর বৃষ্টি ও বৈরি আবহাওয়া বিরাজ করেছে। বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খুলনায় ৭.৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর ¯’ানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
মংলা এলাকাতে বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এর ফলে মোংলা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। লঘুচাপের প্রভাবে বুধবার ভোর থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ায় মোংলা বন্দরে অবস্থানরত দেশি-বিদেশি ১০টি বাণিজ্যিক জাহাজের সারসহ বিভিন্ন পণ্য খালাস ও বোঝাই কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া পশুর নদীর জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে সুন্দরবনের কিছু নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। আপাতত লঘুচাপটি নিন্মচাপে রুপ নেওয়ায় আগামী তিনদিন হালকা ও ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানায় মোংলা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ হারুন অর রশিদ।
নোয়াখালীর হাতিয়ার বেডি সাইড এলাকায় ও গভীর নিম্ন চাপের ফলে প্লাবিত হয়েছে এবং নিঝুম দ্বীপ সহ হাতিয়া উপজেলার বেডির বাইরে চার থেকে পাঁচ ফুট জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আলাউদ্দিন সংগ্রামকে জানান, হাতিয়ার নলের থেকে সাগরিকা ম্যানেজার মো হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ সংগ্রামকে জানান,তাদের অফিস জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় এবং বেড়ার অংশ ভাসিয়ে নিয়ে যায়। হাতিয়ার বাজারে দশটা আডত জোয়ার ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন খুলনা থেকে আবদুর রাজ্জাক রানা, বরিশাল থেকে বায়জীদ বোস্তামী, নোয়াখালী থেকে বোরহান উদ্দিন ও মংলা থেকে মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান)