পুলিশ সদস্যদের সরকারী দায়িত্ব পালন ও ব্যক্তিগত ভ্রমনকালে সড়ক ও নৌপথে মানতে হবে ২০ দফা নির্দেশনা। দায়িত্ব পালনকালে ব্যবহার করতে হবে ৮ ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জাম। গত ২৯ জুন পুলিশ সদর দফতরের ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট শাখা থেকে এই নির্দেশনা পুলিশের সব ইউনিটে পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সুত্রে এই নির্দেশনার খবর জানা গেছে।
সুত্রে জানা গেছে, বর্তমান সময়ে সড়কে অস্বাভাবিক যান চলাচল ও অসতর্কভাবে দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ সদস্যরা দূর্ঘটনায় পড়ছেন। এতে তারা আহত ও নিহত হচ্ছেন। এমন অবস্থা বিবেচনা করে সড়ক ও নৌপথে চলাচল এবং দায়িত্ব পালনকালে জীবনের ঝুঁকি এড়াতে সারাদেশে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের প্রতি ২০ দফা নির্দেশনা সম্বলিত একটি চিঠি জারি করে পুলিশ সদর দফতর। পুলিশের সব ইউনিটে পাঠানো ওই নির্দেশনা অবশ্যই পালনের জন্য বলা হয় চিঠিতে। ওই নির্দেশনায় যেকোন উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে কিংবা মব (উচ্ছৃংখল জনতার বিশৃঙ্খলা) পরিস্থিতি তৈরি হলে অবিলম্বে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এবং স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতা নিতে বলা হয়েছে। এছাড়া পুলিশ সদস্যদের বারন করা হয়েছে অতি উৎসাহী হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে না যেতে। পাশাপাশি শান্ত-স্বভাব, সংযত আচরণ এবং পরিস্থিতি মোকাবেলায় ধৈর্য ধারণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে নিষেধ করা হয়েছে সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া রাস্তায় চেকপোষ্টকালে একের অধিক গাড়ি না দাঁড় করাতে।
পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশনায় এসআই/সার্জেন্ট বা তদুর্ধ্ব কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে কমপক্ষে ৮-১০ জন সশস্ত্র পুলিশ নিয়ে চেকপোস্ট পরিচালনা করতে বলা হয়েছে। এছাড়া সচেতনতার সঙ্গে যানবাহনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ এবং অবশ্যই চালকের সঙ্গে আই কন্ট্যাক্ট করে গাড়ি থামানোর সংকেত দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চেকপোস্টে কোনভাবেই বেসরকারি ব্যক্তিকে সহায়তাকারী হিসাবে ব্যবহার না করতেও বলেছে। সড়কে পুলিশের দায়িত্ব পালনের সঙ্গে যুক্ত ঝুঁকিসমূহ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ডিউটিতে যাওয়ার পূর্বে প্রয়োজনীয় ব্রিফিং প্রদান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, ধাওয়া করে যানবাহন ধরার প্রবণতা পরিহার এবং সংবাদ আদান প্রদানের মাধ্যমে অপরাধের সঙ্গে জড়িত যানবাহন আটক করতে হবে। চেকপোস্ট পরিচালনার ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা প্রবণ ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিহার করতে হবে। সড়ক-মহাসড়কে চেকপোস্ট পরিচালনায় স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) অনুসরণ করতে হবে।
পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, ডিউটিতে বা ছুটিতে গমনের ক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যদের অবশ্যই সিসি নিতে হবে। এছাড়া সিসিতে যানবাহনের কথা উল্লেখ থাকতে হবে। দূরবর্তী স্থানে গমনের ক্ষেত্রে মোটরসাইকেল ব্যবহার করা যাবে না। মোটরসাইকেল ব্যবহারকারী প্রত্যেক পুলিশ সদস্যের বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে এবং মান সম্পন্ন (স্ট্যান্ডার্ড) হেলমেট ব্যবহার করতে হবে, কোন অবস্থাতেই দুইজনের বেশি মোটরসাইকেলে আরোহন করা যাবেনা; মোটরসাইকেলে টহল ডিউটিকালে অবশ্যই স্ট্যান্ডার্ড হেলমেট ও রিফ্লেক্টিং ভেস্ট পরিধান করতে হবে; সরকারি কাজে ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করতে হবে; নৌযানে চলাচল ও ডিউটির ক্ষেত্রে লাইফ জ্যাকেট পরিধান করতে হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, সড়ক-মহাসড়কে ডিউটির সময় নিজের জীবন ঝুঁকিতে না ফেলে এমন অবস্থানে দাঁড়াতে হবে যেখান থেকে যানবাহনকে স্পষ্টভাবে সংকেত দেওয়া যায়। অর্থাৎ রাস্তায় বা যানবাহন চলাচলের মাঝে না গিয়ে নিরাপদ স্থানে দাঁড়িয়ে সংকেত প্রদান করতে হবে।
এছাড়া সড়ক-মহাসড়কে দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশ সদস্যদের প্রয়োজন অনুযায়ী নিরাপত্তা সরঞ্জাম হাই-ভিজিবিলিটি জ্যাকেট, রিফ্লেকটিভ ভেস্ট গ্লাভস ও হাত সুরক্ষা, প্রতিরক্ষামূলক বুট, সিগন্যাল লাইট বা ব্যাটন, শোল্ডার লাইট, মাস্ক ও চশমা (ধুলা বা ধোঁয়া রোধে), রেইন কোট বা আবহাওয়া উপযোগী পোশাক ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া চেকপোষ্টকালে বডিওর্ন ক্যামেরা, ভেহিক্যাল স্ক্যানার, হ্যান্ড হেল্ড ডিটেক্টর ব্যবহার করে চেকপোস্ট পরিচালনা, সড়কে গাড়ি থামানোর ক্ষেত্রে নিরাপদ দূরত্বে থেকে দৃশ্যমান হ্যান্ড সিগনাল (থামুন/স্টপ ইত্যাদি) দিয়ে গাড়ি থামাতে হবে। এছাড়া চেকপোস্টকালে স্পষ্ট সাইনবোর্ড, ব্যারিকেড, কোণ ও পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, পেশাগত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের জন্য পুলিশ সদস্যদেরকে আমরা সময়ে সময়ে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করে থাকি। আইনানুগ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরা যাতে নিজেরা দুর্ঘটনার সম্মুখীন না হন এবং সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে সেজন্য পরামর্শ প্রদান করা হয়ে থাকে। এটি আমাদের রুটিন কাজের অংশ।