বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ৯ম শাহাদাতবার্ষিকী আজ রোববার। ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকার সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে মিথ্যা অভিযোগ ও সাজানো সাক্ষীর ভিত্তিতে প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে এ দিন তাকে হত্যা করে। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ, মানবাধিকার সংগঠন, শীর্ষ ইসলামী ব্যক্তিত্ব, বিভিন্ন দেশের সমালোচনা ও ফাঁসি কার্যকর না করার অনুরোধ উপেক্ষা করে নির্মমভাবে ২০১৬ সালের এই দিনে তাঁকে হত্যা করে জুলুমবাজ সরকার। ফরমায়েশী তদন্ত, অসংলগ্নতা তথ্য উপাত্ত প্রদানও বেআইনীভাবে হত্যার আয়োজন চূড়ান্ত করা হয়।
শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ইতিহাসের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি ছিলেন একজন বিজ্ঞ আলেম, ইসলামী চিন্তাবিদ, সুলেখক, ইসলামপ্রিয় জনগণের রুহানি উস্তাদ ও বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম প্রাণপুরুষ। ২০১৫ সালে আমেরিকার বিখ্যাত সংস্থা “দ্য রয়েল ইসলামিক স্টাডিজ সেন্টার” প্রকাশিত তালিকায় বিশ্বের ৫০০ প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম।
আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ, সাক্ষ্য গ্রহন থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে ছিল নানা অসঙ্গতি। কোন ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা করা হয়নি।
মাওলানা নিজামীর সংক্ষিপ্ত জীবনী: মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ছিলেন বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের নেতা, দেশের গণমানুষের নেতা। দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামের অগ্রসেনানী তিনি। দেশ ও জাতির কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ তিনি। সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে গণমানুষের কল্যাণে নিবেদিত এই ব্যক্তিত্ব মুক্তিকামী ও মজলুম মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মাওলানা নিজামীর বলিষ্ঠ ভূমিকা বাংলাদেশের মর্যাদাকে বহির্বিশ্বের কাছে উজ্জ্বল ও উন্নত করেছে।
মাওলানা নিজামী দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে পর্যায়ক্রমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দু’টি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সফলভাবে পালন করে দেশের ইতিহাসে সৃষ্টি করেছেন এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত। মাওলানা নিজামী কৃষি ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। এ দায়িত্ব পালনকালে তিনি যে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছেন এবং মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমকে গতিশীল ও সার্থক করে তুলতে যে যোগ্যতা ও সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন তা এক অনন্য ও অনুসরণীয় অধ্যায়। মন্ত্রনালয় পরিচালনায় তার বিরুদ্ধে সামান্যতম দুর্নীতিও অভিযোগ উঠেনি।
মাওলানা নিজামী ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে পাবনার সাঁথিয়া-বেড়া এলাকার গণমানুষের প্রতিনিধি তথা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় ঐক্যজোটের প্রার্থী হিসেবে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ৩৭ হাজার ৮শ ৬৯ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে তিনি দ্বিতীয়বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদে যোগদান করেন।
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ১৯৪৩ সালের ৩১ মার্চ পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার মনমথপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম লুৎফর রহমান খান একজন আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ও খোদাভীরু লোক ছিলেন। ফলে বাল্যকাল থেকেই মাওলানা নিজামী ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শের আলোকে গড়ে ওঠার সুযোগ লাভ করেন।
১৯৬১ সালে ইসলামী ছাত্রসংঘের দাওয়াতে সাড়া দিয়ে তিনি ছাত্রআন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে থাকেন। ঐ সময় মাদরাসা-ছাত্ররা তাদের দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য আন্দোলন করছিল। ১৯৬২-৬৩ সালে এ-আন্দোলন ব্যাপকতা লাভ করে। কামিল শেষবর্ষের ছাত্র মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী মাদরাসা-ছাত্র হিসেবে মাদরাসা-ছাত্রদের ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এ-আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।
তিনি ১৯৬২-৬৬ সাল পর্যন্ত ইসলামী ছাত্রসংঘের কেন্দ্রীয় অফিস সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৬ সালে মাওলানা নিজামীর উপর পূর্বপাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতির দায়িত্ব অর্পিত হয়। এ-সময় দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ছিল সংঘাতমুখর। পরপর তিন বছর তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি তৎকালীন অবিভক্ত পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের কেন্দ্রীয় সভাপতি (নাজেমে আ’লা) নির্বাচিত হন। পর পর দু’বছর তিনি এ-দায়িত্বে অধিষ্ঠিত থাকেন।
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর নেতৃত্বে পরিচালিত শিক্ষা-আন্দোলন বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতিতে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। ১৯৬৭-৬৮ সালে ছাত্রদের উদ্যোগে শিক্ষাসপ্তাহ পালিত হয়। এ-উপলক্ষে ‘শিক্ষাসমস্যা-শিক্ষাসংকট’ ও ‘শিক্ষাব্যবস্থার পুনর্গঠন’ সংক্রান্ত দু’টি পুস্তিকা বের হয়। তাঁর নেতৃত্বাধীন গঠনমূলক এ-আন্দোলন সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। শিক্ষা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করায়, ছাত্রসংঘ ছাত্র-জনতার কাছে ক্রমে আরো প্রিয় সংগঠনে পরিণত হতে থাকে।
জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান: ছাত্রজীবন শেষে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ১৯৭১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন। তিনি পর্যায়ক্রমে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর আমীর ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য হিসেবে ১৯৭৯-১৯৮২ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৩ সালে তিনি সংগঠনের এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল মনোনীত হন এবং ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত এ-দায়িত্বে অধিষ্ঠিত থাকেন। ১৯৮৮ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত একটানা ১২ বছর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০০০ সালের ১৯ নবেম্বর তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর নির্বাচিত হন। ২০০১-২০০৩, ২০০৪-২০০৬, ২০০৭-২০০৯ সেশনে আমীরের দায়িত্ব পালনের পর ২০১০-২০১২ সেশনের জন্য তিনি পুনরায় আমীর নির্বাচিত হন। আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায়ই ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেফতার হন তিনি।
গণআন্দোলনে মাওলানা নিজামী: স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের প্রতিটি গণআন্দোলনে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮২-৯০ সাল পর্যন্ত তদানীন্তন স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে যে-প্রচন্ড গণআন্দোলন গড়ে ওঠে, এ-আন্দোলনে তিনি বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেন। ফলে একাধিকবার তিনি স্বৈরশাসকের আক্রোশের শিকার হন। তাঁর সাহসী নেতৃত্বের কারণে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে প্রচন্ড গণপ্রতিরোধ গড়ে ওঠে এবং ১৯৯০ সালে জাতি অপশাসনের হাত থেকে মুক্তি লাভ করে। ১৯৯১ সালে জামায়াতে ইসলামী প্রদত্ত ফর্মুলা অনুযায়ী নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচন বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে প্রশংসিত হয়। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের এই ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে কেয়ারটেকার সরকারের বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য জামায়াতে ইসলামীর সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে সংসদে মাওলানা নিজামী বিল উত্থাপন করেন। পরবর্তীতে সংসদের ভিতরে ও বাইরে জামায়াতে ইসলামীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে কেয়ারটেকার সরকারের বিধান সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে মাওলানা নিজামীর সংগ্রামী ভূমিকা জাতির মধ্যে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে। তাঁর নিরলস প্রচেষ্টায় দেশের ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী শক্তিসমূহ আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়। ১/১১ জরুরি সরকারের সময়েও তিনি এর বিরুদ্ধে জোরালো ভূমিকা পালন করেন। তিনিই প্রথম এ ধরনের সরকারের বিরুদ্ধে রাজনীতিবিদদের মধ্যে প্রথম কথা বলেন। টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে দেশব্যাপী গড়ে উঠা আন্দোলনেও নেতৃত্ব দেন মাওলানা নিজামী।
বিশ্বরাজনীতিতে মাওলানা নিজামী: জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমীর এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে বিশ্বরাজনীতির সাথে মাওলানা নিজামীর রয়েছে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। নানান গুরুত্বপূর্ণ আর্ন্তজাতিক রাজনৈতিক ইস্যুতে তার ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে।
২০০২ সালের ২৭ মার্চ মুসলিম দুনিয়ার বিখ্যাত চিন্তাবিদ ও দার্শনিক ডক্টর ইউসুফ আল কারযাভীর নেতৃত্বে মধ্যপ্রাচ্যের দশজন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা নিজামীর সাথে সাক্ষাৎ করেন।
২০০২ এর ১১ এপ্রিল তিনি রাবেতা আল আলম আল ইসলামীর সম্মেলনে যোগদান করেন এবং সৌদি গেজেট পত্রিকায় সাক্ষাৎকার প্রদান করেন। এসময় মাওলানা নিজামীসহ মুসলিম বিশ্বের ৫২ জন বিশিষ্টি চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবী আরব ও মুসলিম বিশ্বের জনগণের প্রতি ইসরাইলী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সম্মিলিত আহ্বান জানান।
২০০৩ সালের ১৫-১৭ অক্টোবর চীনে অনুষ্ঠিত ঝঁংঃধরহবফ ঊষরসরহধঃরড়হ ড়ভ ওড়ফরহব উবভরপরবহপু উরংড়ৎফবৎ শীর্ষক সম্মেলনের তৃতীয় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী।
২০০৬ সালে তিনি ইংল্যান্ডের শীর্ষ বৈদেশিক ও কূটনৈতিক নীতিনির্ধারণী বিশেষজ্ঞ ফোরাম চেথম হাউজের আমন্ত্রণে ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ইসলামী রাজনৈতিক দলসমূহ : জামায়াতের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে তিনি এ-সংক্রান্ত একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ বৈঠকে বৃটেনের বিশিষ্ট নীতিনির্ধারক বুদ্ধিজীবী, কূটনৈতিকবৃন্দ, পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। মাওলানা নিজামী উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
উল্লেখ্য যে, চেথম হাউজ বৃটেনের অন্যতম শীর্ষ নীতিনির্ধারণী বিশেষজ্ঞ ফোরাম, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রেখে থাকেন। মাওলানা নিজামী প্রথম বাংলাদেশী নেতা, যিনি চেথম হাউজের আমন্ত্রণে সেখানে বক্তব্য রাখেন।
২০০৬ সালে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত রাবেতা আল আলম আল ইসলামী কর্তৃক আয়োজিত আন্তর্জাতিক ওলামা সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়ে যোগদান করেন। তিনি মুসলিম ওয়াল্ড লীগ (রাবেতা), সেন্ট্রাল কো-অর্ডিনেশন কমিটির স্থায়ী সদস্য। মুসলিম উম্মায় তার গুরুত্বপূর্ন অবদানের ২০০৯ সালের ইউএসএ ভিত্তিক “দ্যা রয়েল ইসলামিক ষ্টেটিজিক ষ্টাডিজ সেন্টার কর্তৃক বিশ্বের শীর্ষ ৫০জন ব্যক্তিত্বের মধ্যে মাওলানা নিজামীকে নির্বাচন করেন।
পারিবারিক জীবন: ১৯৭৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর শামসুন্নাহারের সাথে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী। শামসুন্নাহার নিজামী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগ থেকে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনিও ছাত্রজীবন থেকে ইসলামী আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মহিলা বিভাগের সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ৪ ছেলে ও ২ কন্যা।
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়নের আহ্বান: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলেমে দ্বীন, সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর অবদানকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান গতকাল বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী বাংলাদেশের জনগণের নিকট অতি পরিচিত একটি নাম, একজন আলেমে দ্বীন ও ইসলামী চিন্তাবিদ। সততা, যোগ্যতা, উদারতা, বিনয় ও নম্রতা তাঁকে অনন্য মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। মহান আল্লাহ প্রদত্ত যোগ্যতা বলে বাল্যকাল থেকেই তিনি তাঁর সমসাময়িক প্রতিটি স্তরে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি তাঁর ছাত্র জীবনের শুরু থেকে ইসলামী আদর্শ প্রচার, প্রসার ও প্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন। ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় তিনি নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ইসলামের সুমহান আদর্শ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি ইসলামী কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে জোরালো ভূমিকা পালন করেছেন।
তিনি তাঁর নিজ এলাকা থেকে ১৯৯১ ও ২০০১ সালে বিপুল ভোটে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জাতীয় সংসদে তাঁর গঠনমূলক ভূমিকা জাতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। বিভিন্ন ইস্যুতে জাতীয় সংসদে তাঁর বক্তব্য ছিল দিক-নির্দেশনামূলক। ইসলামী শিক্ষার প্রসারে তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। কওমী মাদ্রাসার শিক্ষাকে সরকারি স্বীকৃতি দেয়ার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল স্মরণীয়।
তিনি সততা, যোগ্যতা, দক্ষতার সাথে কৃষি ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় শিল্পখাত একটি লাভজনক খাতে পরিণত হয়।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁর ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা ছিল। ২০০৬ সালে এক বৈশ্বিক জরিপে বিশ্বের প্রভাবশালী ৫০০ ব্যক্তির মধ্যে মাওলানা নিজামীকে তালিকাভূক্ত করা হয়। ২০০৯ সালে অপর এক বৈশ্বিক জরিপে বিশ্বের প্রভাবশালী ৫০ মুসলিম ব্যক্তির মধ্যে তিনি অন্যতম বলে বিবেচিত হন।
তিনি অনেকগুলো মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছেন- যা মানুষের আত্মগঠন, পরিবার ও সমাজ গঠনে আলোর দিশা দিবে। দেশে-বিদেশে অসংখ্য সেমিনার, সভা ও সমাবেশে তাঁর দাওয়াতি বক্তব্য মানুষের চিন্তার জগতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। তাঁকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। ২০১৬ সালের ১০ মে দিবাগত রাত ১২টা ১০ মিনিটে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
আমি গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে সাবেক আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর অবদানকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। মহান আল্লাহ তাআলার নিকট দোয়া করছি তিনি তাঁর শাহাদাতকে কবুল করুন এবং তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউসে উচ্চ মর্যাদায় আসীন করুন।
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়ন এবং বাংলাদেশকে একটি ইসলামী কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলনে শরীক হওয়ার জন্য আমরা দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।