ঢাকায় হাইকোর্টের সামনে প্লাস্টিকের ড্রামের ভেতর থেকে আশরাফুল হক নামে এক যুবকের খণ্ডিত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার আশরাফুলের বোন আনজিনা বেগম রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করেন। এজাহারে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।

হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনায় নিহতের বন্ধু জরেজ মিয়া নামে একজনকে প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে দেখছে পুলিশ। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালানোর কথা তুলে ধরে শাহবাগ থানার ওসি মো. খালিদ মনসুর বলেন, আমরা ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ভিডিও, অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে জড়িতদের শনাক্তে কাজ করছি। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি প্রধান সন্দেহভাজনসহ জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হব।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাই কোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেইটের কাছে নীল ড্রাম থেকে খণ্ড-বিখণ্ড লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ২৬ টুকরো লাশের প্রথমে পরিচয় পাওয়া না গেলেও আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেইজ থেকে পরিচয় শনাক্ত করা হয়। পুলিশ বলছে, লাশটি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজলার গোপালপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের আশরাফুল হকের। লাশ উদ্ধারের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শুক্রবার ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। এরপর পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করার কথা জানিয়েছেন ওসি খালিদ মনসুর।

ঢাকা মেডিকেলের মর্গে আনজিনা বেগম বলেন, আশরাফুলের কারও সঙ্গে ব্যক্তিগত শত্রুতা ছিল না। গত মঙ্গলবার তার বন্ধু জরেজের সঙ্গে ঢাকায় আসেন। বুধবার বিকালে আশরাফুলের সঙ্গে তার (আনজিনা) সবশেষ কথা হয়েছে। এরপর কয়েকবার ফোন দিলে জরেজ ফোন ধরে জানায় আশরাফুল ব্যস্ত আছে। এরপর বৃহস্পতিবার আশরাফুলের লাশ উদ্ধারের খবর পান বোন আনজিনা। ভাইয়ের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন তিনি। পুলিশ বলছে, কাঁচামাল ব্যবসায়ী আশরাফুল ভারত ও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আর আলু আমদানি করতেন। পণ্য আমদানির জন্য তার সরকারি লাইসেন্সও রয়েছে। লাশের পরিচয় মেলার পর বদরগঞ্জের গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শামছুল আলম বলেন, আশরাফুল আগে হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা করতেন। কয়েক বছর ধরে গ্রামেই থাকতেন। গত সোমবার এসে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওয়ারিশান সার্টিফিকেট নিয়ে গেছে। খুব ভালো ছেলেটা, এরকম কেন হল কে জানে। গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মাহফুজার রহমান বলেন, ও এখন জমিজমা কেনাবেচা করত। দুইটা ছেলে-মেয়ে আছে, গ্রামেই থাকে। সোমবার পরিষদে আসছিল, ওয়ারিশান সার্টিফিকেট নিয়ে গেল। ঢাকায় ও গেল কবে তাও তো জানি না।

শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রায়ের তারিখ ঘোষণার দিন ছিল বৃহস্পতিবার। এদিন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ‘লকডাউন কর্মসূচি’ ঘোষণা করে। ফলে এদিন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ঢাকাজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। হাই কোর্টের সামনে ও পুরো এলাকাতে অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দিনভর কড়া নজরদারির মধ্যেই লাশের ড্রাম হাইকোর্ট এলাকাতে পড়েছিল, দুপুরেও স্থানীয় লোকজন সেটি পড়ে থাকতে দেখেন। পরে সন্দেহ হলে তারা পুলিশ ডাকেন। সন্ধ্যায় ড্রাম খুলতেই বেরিয়ে আসে লাশের ২৬ টুকরা।