রাসূল (সা.)-এর তারুণ্যদীপ্ত যৌবনকালও সর্বোত্তম আদর্শের নমুনা হিসেবে সমুজ্জ্বল। তারুণ্যের তাড়নায় যৌবনে নানা রকম উচ্ছৃংখলতার ছাপ পড়ে। সমাজে প্রবাহমান কোন না কোন খারাপ প্রভাব যুবদের চরিত্রে রেখাপাত করে থাকে। রাসূল (সা.)-এর যৌবনকাল ছিল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম, সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও নির্মল। তৎকালীন সমাজের কোনো অনাচার অনিয়ম ও অশ্লীলতার প্রভাব তার চরিত্রে পড়েনি। বরং তিনি সমাজের তখনকার খারাপ চিত্র দেখে চিন্তিত হয়ে পড়েন। মানুষ সমাজের কল্যাণ সেবা চিন্তায় অধীর হয়ে ওঠেন। তাই বিশ বছর বয়সে হযরত মুহাম্মদ (সা.) সেবামূলক সংস্থা হিলফুল ফুজুল প্রতিষ্ঠা করেন। এ সংস্থার মাধ্যমেই তিনি যুবকদের ঐক্যবদ্ধ করে সমাজে অসহায় এতিম বিধবাদের সহায়তা দান ও অন্যায় অবিচার থেকে রক্ষা করতে ব্রতী হন। অভাবী মানুষের অভাব পূরণ এবং সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সেবা করাই ছিল এ সংস্থার উদ্দেশ্য। বর্তমান বিশ্বের হতাশাগ্রস্ত অধঃপতিত যুব সমাজ রাসূল (সা.)-এর হিলফুল ফুযুল থেকে অবশ্যই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, পারে মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগের প্রেরণা গ্রহন করতে। আজকের যুব সমাজ সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে মাদকাসক্তি, ছিনতাই, রাহাজানি, সন্ত্রাসসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েছে। তরুণ সমাজ যদি রাসূল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করে তাহলে সকল অন্যায় ও পাপাচার থেকে মুক্ত হয়ে তাদের পক্ষে শান্তির সমাজ গড়া সম্ভব হবে। সুতরাং আমাদের যুব সমাজকে রাসূল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণে উব্দুদ্ধ করা সময়ের অপরিহার্য দাবি।

আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে জীবনের সর্বক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করা ও আত্মসংবরণশীল হওয়া এক মহৎ গুণ। ধৈর্যের মহত্ত্বতার দিকে লক্ষ্য রেখে আল্লাহ তায়ালা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদেশ প্রদান করে বলেন, অতএব, তুমি ধৈর্যধারণ কর, যেমন ধৈর্যধারণ করেছেন পূর্ববর্তী রাসূলগণ। (সূরা আহকাফ : ৩৫)।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর আদেশ যথাযথভাবে পালন করেছেন, এমনকি ধৈর্যধারণ তাঁর অনন্য ও সুমহান চরিত্রে মূর্তমান হয়েছে। তিনি রেসালতের দায়িত্ব পালনের স¡ার্থে দাওয়াতের কণ্টকাকীর্ণ পথে দীর্ঘ তেইশ বছর ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। নানা প্রতিকূলতার মুখাপেক্ষী হওয়া সত্ত্বেও তিনি বিচলিত কিংবা রাগের বশবর্তী হননি। যেমন কোরাইশ কর্তৃক তাঁকে প্রহার, তাঁর পিঠের উপর উটের নাড়িভুঁড়ি তুলে দেয়া, আবু তালেব উপত্যকায় তিন বছর পর্যন্ত তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখা; তাঁর প্রতি অধিকাংশ লোকের বৈরী আচরণ ; জাদুকর, গণক ও পাগল-ইত্যাদি অবমাননামূলক উপাধি দ্বারা আখ্যা দেয়া, হিজরতের রাতে হত্যার প্রয়াস, মদিনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবিদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দেয়ার লক্ষ্যে কোরাইশের সৈন্য-প্রস্তুতি, মদিনায় তাঁর বিরুদ্ধে ইহুদিদের ষড়যন্ত্র, পরস্পর সম্পাদিত চুক্তি ইহুদি কর্তৃক ভঙ্গ, রাসূলকে হত্যার জন্য ইহুদিদের চেষ্টা ও তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্তরের মানুষকে সংগঠিত করা।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে এবং তাঁর সাহাবিগণ ও পরিবার-বর্গ আহারের ক্ষেত্রেও ধৈর্যধারণ করেছেন। এমনকি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো একদিনে দুবেলা যবের রুটি পেট ভরে খেতে পারেননি। কখনো চুলায় আগুন জ্বলত না। অধিকাংশ সময় তাদের খাবার থাকতো খেজুর আর পানি।