জুলাই যোদ্ধা মাওলানা কে এম মামুনুর রশীদকে তুলে নেয়া হয়েছিল। রাজধানীর তুরাগ থেকে নিখোঁজ হওয়ার পাঁচ দিন পর নারায়ণগঞ্জের পূর্বাচল থেকে গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর পূর্বাচল ১ নম্বর মসজিদ থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। গত রোববার ভোরে রাজধানীর তুরাগের হানিফ আলী মোড় এলাকার বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন মাওলানা মামুনুর রশীদ। ওই সময় থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইলফোনটি বন্ধ ছিল। তিনি তুরাগ থানা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানে উত্তরার রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। এ ঘটনায় এদিন তুরাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন মাওলানা মামুনের স্ত্রী খাদিজা।

এ বিষয়ে তুরাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাদিক রহমান বলেন, আমাদের কাছে খবর আসে মাওলানা মামুনুর রশীদ ৩০০ ফিটের নীলা মার্কেট এলাকার একটি মসজিদে রয়েছেন। খবর পেয়েই আমরা সেখানে ছুটে যাই। পরে তাকে পূর্বাচল জামে মসজিদ থেকে বেলা ২টার দিকে তাকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করি। এসআই সাদিক রহমান বলেন, বর্তমানে মামুনুর রশীদ কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার পরিবারের সদস্যরাও ইতোমধ্যে হাসপাতালে পৌঁছেছেন।

যেভাবে তুলে নেয়া হয়: রাজধানীর তুরাগ থেকে নিখোঁজের ১০৪ ঘণ্টা পর পূর্বাচল থেকে পাওয়া জুলাই যোদ্ধা মাওলানা মামুনুর রশীদকে প্রথমে রিকশা ও পরে মাইক্রোবাসে করে তুলে নেওয়া হয়। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন মাওলানা মামুনের সাথে কথা বললে তিনি এসব কথা বলেন। তুলে নেওয়ার বিবরণ দিয়ে মাওলানা মামুন বলেন, প্রতিদিনের ন্যায় আমি সকালে ফজরের পর হাঁটতে বের হই। হঠাৎ রিকশায় তিন জন ব্যক্তি আমাকে বলে ভাই আমরা প্রতিদিন কাচা বাজারে গিয়ে চাঁদাবাজির শিকার হই। আমাদের সাথে একটু আসেন। আমি যেতে চাচ্ছিলাম না। তবুও বলা যায় কথার রিকুয়েষ্টের জেরে আমাকে নিয়ে যায়। আমিও ভাবলাম কী হবে যাই। এরপর কামারপাড়া স্ট্যান্ড পার হওয়ার আগেই রিকশা ভাড়া দিয়ে দেয় ওরা। কাঁচাবাজারের সামনে রিকশা থামতেই একটা হাইস (মাইক্রোবাস) আসে। সেটাতে ভেতরে তিনজন ছিল। বাহিরে থাকা তিন জন আমাকে ধাক্কা দিয়ে উঠিয়ে ফেলে। এরপর আমাকে সাব্বিরের ছবি দেখায়। আমি হ্যাঁ চিনি উত্তর দিতেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। সম্ভবত চেতনা নাশক কিছু ছিল। এরপর আর কিছু বলতে পারি না। উদ্ধারের বিষয়ে তিনি বলেন, পরে যখন জ্ঞান ফিরে সেখানে আমাকে সম্পূর্ণ সময় একটা চেয়ারেই বসিয়ে রাখা হয়। পুরো সময়টা চেয়ারেই ছিলাম। কখন ঘুমালাম কখন কী সেটা জানি না। আজকে হঠাৎ করে মুখে পানি ছিটালেন কয়েকজন। পরে দেখি আমি পূর্বাচলের ওই মসজিদের ওখানে।

শাহবাগে মানববন্ধন: মাওলানা মামুনুর রশীদের সন্ধান চেয়ে শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন করে তার পরিবার। মানবন্ধনে মামুনুর রশীদের পিতা মো: শফিকুল ইসলাম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আমরা গ্রামে থাকি বাবা। পোলারে ঢাকায় লেখা-পড়া করতে পাঠাইছিলাম। পোলা পড়ালেখা করে ঢাকায় থাকতো। শুনছি সে আন্দোলন করছে। গ্রামের মানুষ কইত তোমার পোলা আন্দোলন করে। আমি কইছি বাবা আমরা নিরিহ মানুষ। আন্দোলন করা লাগবে না। বাবা আমরা রাজনীতি বুঝি না, আমার ছেলেরে ফেরত চাই’। মানববন্ধনে তার পিতা-মাতা, স্ত্রী, সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। মামুনের স্ত্রী খাদিজা বেগম বলেন, প্রতিদিনের মতো ২২ তারিখ সকালে আমার স্বামী ফজর নামাজ পড়ে হাটাহাটি করতে বের হয়। এর পর থেকে আর তাকে খুঁজে পাচ্ছি না। অনেক চেষ্টা করেও তাকে না পেয়ে তুরাগ থানায় জিডি করি। পুলিশসহ প্রশাসনের লোকজন মাঝেমধ্যে বিভিন্ন তথ্য নেন। কিন্তু তার সন্ধান দিতে পারে না, আমি কিছু বুঝিনা আমি আমার স্বামীকে আমি ফেরত চাই। আজ আমি শাহবাগে আপনাদের সামনে এসেছি শুধু আমার স্বামীকে ফেরত পেতে। দয়া করে আমাদেরকে সাহায্য করেন। আমার সন্তানদের পিতাকে তাদের বাবার ভালোবাসা ও স্নেহ থেকে বঞ্চিত করবেন না। যে কোন মূল্যে আমি আমার স্বামীকে ফেরত চাই। জুলাই বিপ্লবের সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় একজন জুলাই যোদ্ধা গুম হবে, এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। অবিলম্বে আমার স্বামীকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিন। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, জুলাই যোদ্ধা মাওলানা মামুনুর রশীদ নিখোঁজ। অথচ বিপ্লবের নেতারা নিরব। এই নিরবতার কারণ আমরা জানতে চাই? পুলিশ এখন পর্যন্ত কতজনকে গ্রেফতার কিংবা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, কয়টি সিসিটিভি ফুটেজ কালেক্ট করেছে, তার আলোকে কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে তা আমরা জানতে চাই? এছাড়াও মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামী তুরাগ মধ্য থানা নায়েবে আমীর কামরুল হাসান, মামুনের মা রোশন আক্তার, ভায়রা ভাই মাও:ইব্রাহিম খলিল, চাচাতো ভাই মাওলানা শরীফ, ছোট শ্যালক: হাসনাইন আহমেদ ও তার সহযোদ্ধা মাওলানা মাসুম বিল্লাহ প্রমূখ।