আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বিপণিবিতানগুলোতে চলছে জমজমাট কেনাকাটা। বিশেষ করে নামিদামি ব্র্যান্ডের পোশাকের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ ও কেনার প্রবণতা বেশি। তবে সাধ ও সাধ্যের মধ্যে ঈদের কেনাকাটা করছে সবাই। রমযানের আগে থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন শপিংমল ও বিপণিবিতানগুলোতে বাহারি পোশাকের পসরা সাজিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে, ঈদের কেনাকাটা রোজা শুরুর পর থেকে ধীরে ধীরে জমতে শুরু করেছে।

অন্য সময়ের মতো এবারও দেশি তাঁতে বোনা শাড়ি, জামদানি প্রিন্টের হাফ সিল্ক শাড়ি, সুতি শাড়ির প্রাধান্য থাকছে। হালকা সবুজ, আকাশি, ঘিয়ে, ধূসর, হালকা গোলাপি রং দেখা যাচ্ছে বেশি। এক হাজার টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকার মধ্যে ক্রেতারা পেয়ে যাচ্ছেন হাফ সিল্ক, তাতের শাড়ি। সিল্ক, মসলিন বা জর্জেটের শাড়িতে এমব্রয়ডারি, কাটওয়ার্ক, পুঁতি ও জরির কাজ করা শাড়িগুলো দেড় হাজার থেকে ১২ হাজার টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। ঈদের কেনাকাটায় মেয়েদের পোশাকের চাহিদা বরাবরের মতোই বেশি। শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, বোরকা, কুর্তির প্রতি বেশি আগ্রহ দেখা গেছে। পুরুষদের পাঞ্জাবির দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ছেলেদের পোশাকের মধ্যে পাঞ্জাবিই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। অনেক দোকানে ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ছাড় থাকায় ক্রেতারা সেই সুযোগ নিচ্ছেন। শহরের নামকরা ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতেই ভিড় বেশি লক্ষ্য করা গেছে। বসুন্ধরা শপিংমলে আড়ং, এমব্রেলা, টুয়েলভ, জেন্টল পার্ক, আর্ট, ইনফিনিটি, রিচম্যান, স্টাইলিশ আবিয়া বোরকা, মনেরেখো শাড়িজ, শালিমার, আড়ন ক্লোথিং, নগর শাড়ি, বাটা, লোটো, এ্যাপেক্স, এমন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দোকানে ক্রেতাদের আনাগোনা বেশি দেখা গেছে।

রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ছোটদের পোশাক দিয়ে কেনাকাটা শুরু করছেন বাবা-মায়েরা। আর সে জন্য ছোটদের পোশাকের পসরা আগে সাজিয়ে রাখেন ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো। ছোট-বড় সব ব্র্যান্ডই ছোটদের জন্য জমকালো নকশা আর বৈচিত্র্যময় ডিজাইনের পোশাক নিয়ে এসেছে। হাজারো ডিজাইন ও কালারের মাঝে নিজের পছন্দ অনুযায়ী পোশাক বেছে নিচ্ছে শিশুরা। চাহিদার সঙ্গে পছন্দমতো বাচ্চাদের জন্য পাঞ্জাবি ও শার্ট কিনছেন অভিভাবকরা। ঈদ বাজারে এবার শিশুদের পণ্যে দখল করে রেখেছে পাঞ্জাবি, শার্ট, ফতুয়া, টিশার্ট, প্যান্ট, কাবলি সেট। তবে, ঈদ এবার গরমে হওয়ায় সুতি কাপড়ের পোশাকের চাহিদা একটু বেশি। সুতির পাশাপাশি লিলেন, কটন, সিল্ক, অ্যান্ডি সিল্ক কাপড়ে তৈরি বিভিন্ন পোশাকও রয়েছে। শিশুদের কাপড়ের দাম এবার বেশি বলে অভিযোগ করছেন ক্রেতারা। এদিকে, মেয়েদের পোশাকের মতো ছেলেদের পোশাকের ডিজাইনেও এসেছে পরিবর্তন। আর পণ্যের ভিন্নতায় দামের মাত্রায়ও রয়েছে কম-বেশি।

অনেকেই জানান, ঈদের কেনাকাটায় মূল ব্যয় হয় পোশাকের জন্য। নতুন পোশাকের পাশাপাশি জুতা, বেল্ট, অর্নামেন্টস, প্রসাধনী, ঘর সাজানোর পণ্য এবং আসবাবপত্রও কেনেন কেউ কেউ। নতুন পোশাক কিনতে আসা কয়েকজন ব্যক্তি জানান, ঈদ উপলক্ষে তারা শুধু নতুন পোশাক কিনছেন। বাকিরা নতুন পোশাকের পাশাপাশি কিনেছেন জুতা, অর্নামেন্টস, প্রসাধনী প্রভৃতি। নতুন পোশাক, জুতা, অর্নামেন্টস, প্রসাধনী- সবগুলো পণ্য কেনার কথা বলেছেন অন্তত ২১ জন। নতুন পোশাকের পাশাপাশি যারা অন্য পণ্য কিনেছেন, তাদের অধিকাংশই জানান পোশাকের জন্যই ব্যয় হয়েছে ৭০-৮০ শতাংশ অর্থ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের বাজারে মূল বিক্রি হয় নতুন পোশাক। পাশাপাশি জুতা, অর্নামেন্টস, প্রসাধনী, ঘর সাজানোর জিনিস এবং কিছু আসবাবপত্রও বিক্রি হয়। তবে ঈদকেন্দ্রিক ক্রেতারা যে অর্থ ব্যয় করেন তার ৮০ শতাংশই যায় পোশাকের জন্য। বাকি ২০ শতাংশ অর্থ অন্য পণ্যে ব্যয় হয়। নিউমার্কেটে কথা হয় ক্রেতা জুলিয়া আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, এবারের ঈদে আমার কেনাকাটার জন্য আব্বু পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছেন। এই টাকা দিয়েই ঈদের কেনাকাটা শেষ করবো। চার হাজার টাকার মধ্যে দুটি থ্রি-পিস কিনবো। বাকি টাকা দিয়ে এক জোড়া জুতা ও কিছু অর্নামেন্টস কিনবো। তেজগাঁও থেকে নিউমার্কেটে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ঈদের জন্য একটা জিন্স প্যান্ট এবং একটি টি-শার্ট কিনতে এসেছি। এর বাইরে এবারের ঈদে আর কিছু কেনার ইচ্ছা নেই। আমার জুতা, বেল্ট সবকিছু আছে।

বসুন্ধরা শপিংমলে পরিবার নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে আসেন চাকরিজীবী রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ে এবং ওদের মাকে নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছি। সবাই নিজের পছন্দ অনুযায়ী কেনাকাটা করবো। কেউ কেউ বলছেন, নতুন পোশাকের পাশাপাশি সবার জন্য নতুন জুতা কেনার ইচ্ছা আছে। নতুন পোশাকের পাশাপাশি জুতা, বেল্ট, প্রসাধনী ও ঘরের সৌন্দর্যবর্ধক কিছু পণ্যও কেনা হয়, তবে তার জন্য খুব বেশি অর্থ ব্যয় হয় না। রাজধানী সুপার মার্কেটে যাত্রাবাড়ী থেকে আসা নাদিয়া ইসলাম বলেন, ঈদের কেনাকাটা বলতে আমি মূলত বুঝি নতুন পোশাক কেনা। প্রতিবছরই ঈদে নতুন পোশাক কিনি, এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। আব্বু টাকা দিয়েছেন, আমি আমার পছন্দ মতো থ্রি-পিস কিনবো। থ্রি-পিসের সঙ্গে মিলিয়ে এক জোড়া কানের দুল কেনার ইচ্ছা আছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকার ব্যবসা হচ্ছে। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে এক লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকার মতো ব্যবসা হয়। তার আগের বছর ২০২৩ সালে ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসা হয় এক লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকা। ১০ বছর আগে ২০১৫ সালে ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসা ছিল এক লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকার মতো। এবার ঈদকেন্দ্রিক আড়াই লাখ কোটি টাকার ব্যবসা হবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন জানান, এবারের ঈদকেন্দ্রিক বিক্রি পরিস্থিতি বেশ ভালো। তবে মূল বিক্রি এখনো শুরু হয়নি। চাকরিজীবীরা কেবল বোনাস পাচ্ছেন। আমরা আশা করছি, এখন থেকে সামনের দিনগুলোতে বিক্রি পরিস্থিতি ভালো হবে এবং আমরা যে প্রত্যাশা করছি বিক্রি তার কাছাকাছি থাকবে। এবছর ঈদে কত টাকা বিক্রি হতে পারে এ বিষয়ে তিনি বলেন, এবার পণ্যের দাম কিছুটা বাড়তি। অবশ্য আমরা আশাবাদী আড়াই লাখ কোটি টাকার ব্যবসা না হলেও বিক্রি পরিস্থিতি আমাদের প্রত্যাশার কাছাকাছিই থাকবে।