দীর্ঘদিন পর নির্বাচন হওয়া ডাকসুতে কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি হয়েছিল। যার প্রভাব পড়েছে ভোটের ফলাফলে। তবে ফলাফল যা-ই হোক না কেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বিজয়ীদের আমি অভিনন্দন জানাই। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে এভাবেই নিজের অভিব্যক্তি জানালেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ। গতকাল বুধবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় ডাকসু নির্বাচন বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নিজের তরফ থেকে এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
সালাহউদ্দিন বলেন, গণমাধ্যমগুলো জানতে চাইছে.. ডাকসু নির্বাচন হলো এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদগুলোর নির্বাচন হবে এই নির্বাচনগুলোর ট্রেন্ড কি এবং এই নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে আপনাদের মন্তব্য কি? জবাবে তিনি বলেন, যারা আজকে জয়ী হয়েছেন তাদের প্যানেলটা ছিল ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট। সেই ব্যানারে যারা জয়ী হয়েছেন আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদেরকে অভিনন্দন জানাই... এটাই গণতন্ত্রের রীতি।
সালাহ উদ্দিন বলেন, পত্রিকায় দেখলাম ছাত্র শিবিরের প্যানেল জয়ী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আমার জানা মতে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির এই ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি, এই নামে এই ব্যানারে কোন প্যানেল প্রদান করা হয়েছে কি? না। তো পত্রিকায় বিভিন্ন মিডিয়াতে এভাবে আসছে কেন প্রশ্ন সেখানেই?
সালাহ উদ্দিন বলেন, একটা বিষয় লক্ষ্যনীয়, ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল নিজের দলীয় ব্যানারে ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। আর অন্যান্য কয়েকটি দল এমনকি ইসলামী ছাত্র আন্দোলন নামে একটি দল নামে করেছে। কেউ কেউ স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য নামে করেছে, কেউ সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদ নামে করেছে, বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ নামে করেছে, অপরাজেয় একাত্তর অদম্য ’২৪ নামে করেছে। যারা স্বনামে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায়নি তার একটা উদ্দেশ্য তো অবশ্যই আছে?
কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের মুক্তিযোদ্ধা হলে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৮ সালেরন ৯ সেপ্টেম্বর শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে মহিলা দল প্রতিষ্ঠা করেন।
রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলের সংগ্রাম করতে হবে মন্তব্য করে সালাহ উদ্দিন বলেন, ২৪’র ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমাদের সবচাইতে বড় সংগ্রামের নাম হচ্ছে বাংলাদেশের নতুন যাত্রায় রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের সংগ্রাম। আমাদের এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের সংগ্রাম চালু রাখতে হবে, নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারা প্রচলন করতে হবে। সেই সংস্কৃতি কি? গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি, সহনশীলতার সংস্কৃতি, সহমর্মিতার সংস্কৃতি এবং সহনশীলতা- সহমর্মিতার মধ্য দিয়ে আমরা পরস্পর রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে প্রতিযোগিতা করব, রাজনৈতিক চর্চা করব।
তিনি বলেন, যদি আমরা ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান না চাই, ব্যক্তি স্বৈরতান্ত্রিক পদ্ধতি অথবা দলীয় স্বৈরতান্ত্রিক পদ্ধতির উত্থান না চাই, সংসদীয় একায়কতন্ত্র না চাই এবং একদলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা কামনা না করি তাহলে আমাদেরকে নতুন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে, চর্চা করতে হবে লালন করতে হবে। এইভাবেই আমরা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চার মধ্য দিয়ে আমরা বিগত দিনের ফ্যাসিবাদী অগণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অপসংস্কৃতিকে বিলুপ্ত করতে পারবো, অপসারিত করতে পারব। ভালো রাজনৈতিক প্রচলনের মধ্য দিয়ে আমরা অপরাজনীতির বিলুপ্তি ঘটাতে পারব সেই রাজনৈতিক চর্চা আমাদেরকে করতে হবে।
রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা থাকবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে। কিন্তু দিনশেষে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আমরা সবাই সবাইকে অভিনন্দন জানাবো এটাই আমাদের নীতি হবে। সালাহ উদ্দিন বলেন, ডাকসুর ফলাফল কি জাতীয় রাজনীতিতে কোন প্রভাব রাখবে ? আমি বলতে চাই, ডাকসু, রাকসু, জাগসু, চাকসুসহ বিভিন্ন ছাত্র সংসদ নির্বাচন, অতীতে যারা ডাকসুতে নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় রাজনীতিতে তারা কাজ করছেন। আবার অনেকেই ডাকসুতে ভিপি-জিএস হয়েছেন অনেক নেতা জাতীয় রাজনীতিতে আছেন, কেউবা হারিয়ে গিয়েছেন। তাদের মধ্যে যারা বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন তাদের কেউ কেউ জাতীয় সংসদে এসছেন। বাকিরা এখনো পর্যন্ত লড়াই করছেন, সংগ্রাম করছেন আসার জন্য। এটা হচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতি এবং ছাত্র রাজনীতির একটা পোস্টমর্টেম.. বিশ্লেষণ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতিরএবং স্বাধীনতার শুরু বা পূর্ববর্তী ইতিহাস, এখন পর্যন্ত দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন যা কিছুই হয়েছে, সামাজিক পরিবর্তন হয়েছে সেটা ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সেটা হয়েছে অথবা ছাত্র রাজনীতির মধ্য দিয়ে সেটা হয়েছে। সেই রাজনীতির সুতিকাগার এবং ছাত্র আন্দোলনের সুতিকাগার, রাষ্ট্রীয় পরিবর্তনের সুতিকাগার সেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাত্র রাজনৈতিক চর্চা থাকতেই হবে। যারা ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে বলেন বা ছাত্র রাজনীতি বন্ধের কথা বলেন আমি তাদের বিরুদ্ধে। কারণ রাজনীতির চর্চা শিক্ষাঙ্গন, পাঠশালা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়। সেখান থেকে জাতীয় রাজনীতির নেতৃত্ব উঠে আসে ক্রমবিকাশের মধ্য দিয়ে।
সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘‘রাজনীতির শিক্ষা শুরু হতে হবে ছাত্র রাজনীতি দিয়ে। তবে এমন ছাত্র রাজনীতি চাই না যেই ছাত্র রাজনীতির ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর অতীত নজির স্থাপন করে দিয়েছে। আমাদেরই অঙ্গীকার আমরা এমন রাষ্ট্রব্যবস্থা, সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাই সামনের জীবনে যার মূল ভিত্তি হবে এই দেশের সমাজের রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে জনগণের কাছে জবাবদিহিতার রাজনীতি সৃষ্টি করা। সুশাসন নৈতিকতার রাজনীতি সৃষ্টি করা, সাম্য এবং মানবিক মর্যাদা ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠন করার রাজনীতি আমরা অব্যাহত রাখতে চাই।
মহিলা দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম তৃণমূল পর্যায় থেকে শক্তিশালী করার আহ্বানও জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের পরিচালনায় আলোচনা সভায় মহিলা নেত্রী হেলেন জেরিন খান, নেওয়াজ হালিমা আরলি, নিলোফার চৌধুরী মনি, শাম্মী আখতার, নাজমুন নাহার বেবী, নুরজাহান মাহবুব, ইয়াসমীন আরা হক, শাহানা আক্তার শানুসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।