রাজধানীর গুলিস্তানে অবস্থিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নতুন করে প্রাণ ফেরাতে শুরু হয়েছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম। প্রায় এক বছর ধরে পরিত্যক্ত ভবনটিতে ঝুলছে নতুন দুটি ব্যানার ‘আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট’ এবং জুলাইযোদ্ধার প্রধান কার্যালয়’। দীর্ঘদিন ময়লা-আবর্জনায় ভরে থাকা ১০ তলা ভবনটি ধীরে ধীরে আবার পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। বুধবার সকাল থেকেই ভবনের নিচতলা পরিষ্কারের কাজ শুরু হয়। বৃহস্পতিবার ভবনের দোতলা ও তৃতীয় তলায় ময়লা সরানোর দৃশ্য দেখা গেছে। এছাড়া গতকাল শুক্রবারও পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন অন্তত ১০-১২ জন শ্রমিক।

ভবনের আশপাশে অবস্থানরত ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, পুরো ভবনটিই ধাপে ধাপে পরিষ্কার করা হবে। এ সময় কারো কারো ভবনটির ছবি তুলতে দেখা গেছেÑ আবার কেউ আবার বিস্ময় নিয়ে পর্যবেক্ষণ করছেন ভবনটিতে কী হচ্ছে।

পরিষ্কারের কাজে নিয়োজিতরা জানান, ভবনটি পুরোপুরি পরিষ্কার করার পর তা হস্তান্তর করা হবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের কাছে। তারা বলেন, ভবনটির একটি অংশে “জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে” আহত ও শহীদ পরিবারদের জন্য অফিস গড়ে তোলা হবে। তবে ‘আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট’ সম্পর্কে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সরেজমিন দেখা যায়, তৃতীয় তলায় জমে থাকা ইটের খোয়া ও ময়লা-আবর্জনার স্তূপ পরিষ্কার করা হচ্ছে। দোতলায় জমে থাকা আবর্জনা ইতিমধ্যে পরিষ্কার করা হয়েছে। এর আগে নিচতলা পরিষ্কার করা হয়। ১০ থেকে ১২ জন ভবনটি পরিষ্কারের কাজ করছেন। তাঁরা বলেছেন, পুরো ভবন তারা পরিষ্কার করবেন। ভবনটির সামনে প্লাস্টিকের চেয়ারে বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে বসে থাকতে দেখা গেছে।

আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে ‘আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট’ নামের ব্যানার টাঙানের বিষয়ে জানতে চাইলে সেখানে অবস্থানরত ব্যক্তিরা জানান, পুরো ভবনটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যাঁরা যুক্ত ছিলেন, তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। এই ভবনে গত বছরের জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের অফিস, শহীদ পরিবারের অফিস করা হবে।

কার্যালয়ের সামনের দুজন দোকানি বলেন, পোড়া এই ভবনের নিচতলা এত দিন শৌচাগার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। মলমূত্র জমে থাকার কারণে উৎকট গন্ধ আশপাশে ছড়িয়ে পড়ত। ভবনটির সামনে দিয়ে চলতে গেলে নাক চেপে যেতে হতো।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের সময় বিকেলে আওয়ামী লীগের এই কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এরপর ভবনটি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত ছিল। আসবাবপত্র লুট, ধাতব সামগ্রী খুলে নেওয়া, ভবনের অভ্যন্তরকে ভাসমান মানুষের নেশার আস্তানা ও শৌচাগারে পরিণত করার ঘটনাও ঘটেছে। ভবনটির আশপাশে দীর্ঘদিন ধরে উৎকট গন্ধে চলাচল করাও কঠিন হয়ে পড়ে। এর আগে ভবনের সামনে ‘জুলাইযোদ্ধার প্রধান কার্যালয়’ ব্যানার টানানো হলেও ভবনটির কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি। এবার নতুন ব্যানার এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে ভবনটি পুনঃউদ্বোধনের আভাস মিলছে।

গুলিস্তান এলাকায় ১০ তলাবিশিষ্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি ২০১৮ সালের ২৩ জুন উদ্বোধন করেছিলেন দলের সভাপতি ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে সেখানে দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভবনটিতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এরপর আগস্ট মাসজুড়ে চলে লুটপাট। তখন থেকে এই ভবন অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল।