যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে বলে দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল শনিবার বাংলাদেশ সময় সন্ধা ৬টায় ট্রাম্প তার ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্লাটফর্ম ট্রুথ স্যোশালে শেয়ার করা এক পোস্টে এমন দাবি করেন। এদিকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার চলমান যুদ্ধ দুই দেশকেই বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে ফেলেছে। চার সপ্তাহের সামরিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, যুদ্ধের মোট ব্যয় ৫০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। পাকিস্তান-ভারত উভয় দেশই সীমান্তে সেনা মোতায়েন বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। সেই সঙ্গে উভয় দেশের বিরুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করারও অভিযোগ করা হয়েছে। এদিকে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে দেশটির পাঞ্জাবের আদমপুরে ‘বুনইয়ানুম মারসুস’ নামে একটি বৃহত্তর সামরিক অভিযান চালিয়েছে পাকিস্তান। এই অভিযানে ভারতের এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে বলে দাবি করেছে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী। সীমান্ত উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের দিকে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে ভারত এমনটি দাবি করেছে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ। পাকিস্তানের হামলার আতঙ্কে ভারতের ৩২ বিমানবন্দর ১৫ মে পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে সব ধরনের ফ্লাইটের জন্য আজ রোববার (১১ মে) দুপুর ১২টা পর্যন্ত পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ থাকবে। পাকিস্তান বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ (পিএএ) এ ঘোষণা দিয়েছে। গতকাল শনিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানী সংবাদমাধ্যম দ্য ডন। গতকাল শনিবার ভিন্ন প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে জিও নিউজ, আল জাজিরা, দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল, ডন, এনডিটিভি, রয়টার্স, দ্য টেলিগ্রাফ, দ্যা ওয়্যার। এছাড়াও ভারতকে উপযুক্ত জবাব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। দেশটির রাষ্ট্রপতি আসিফ আলী জারদারি, পিটিআই চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার গোহর এবং অন্যান্য দলের নেতাদের সঙ্গে টেলিফোনে কথোপকথনের সময় শাহবাজ শরিফ এই মতামত প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী শরিফ বলেন, ভারত পাকিস্তানের উপর ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালিয়েছে, কিন্তু এই আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ সত্ত্বেও, পাকিস্তান চরম সংযম দেখিয়েছে।

যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে ভারত-পাকিস্তান: পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দীর্ঘ রাত ধরে আলোচনার পর, আমি আনন্দের সাথে ঘোষণা করছি যে ভারত ও পাকিস্তান একটি পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। ট্রাম্প আরও বলেন, ‘সাধারণ বুদ্ধিমত্তা ও অসাধারণ বিচক্ষণতার পরিচয় দেওয়ার জন্য উভয় দেশকে আমি অভিনন্দন জানাই। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার জন্য আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ!

ভারতের সামরিক ব্যয়: ভারতীয় বিমানবাহিনী (আইএএফ) প্রতিদিন প্রায় ১০০টি যুদ্ধাভিযান পরিচালনা করছে, যেখানে রাফাল, মিরাজ ২০০০, সু-৩০এমকেআই ও তেজসের মতো যুদ্ধবিমান ব্যবহার হচ্ছে। প্রতিটি অভিযানের গড় ব্যয় প্রায় ৮০ হাজার ডলার, আর ৩০-৪০টি নির্ভুল নির্দেশিত অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে মাসব্যাপী ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার। ড্রোন অভিযানে প্রতিদিন প্রায় ৩০টি হরপ, হারন, সার্চারসহ নজরদারি ও ইলেকট্রনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম ব্যবহারে ব্যয় হচ্ছে দৈনিক ১০০ মিলিয়ন ডলার, যা চার সপ্তাহে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার। প্রতিদিন ১০টি ব্রাহ্মোস এবং ১০-২০টি প্রলয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বা নির্ভুল এমএলআরএস ব্যবহারে খরচ হচ্ছে প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ডলার, মাস শেষে মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার। উচ্চমাত্রার সামরিক প্রস্তুতি বজায় রাখতে প্রতিদিন সেনা মবিলাইজেশন, জ্বালানি, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (এস-৪০০, আকাশ, বারাক-৮), এবং নৌবাহিনীর তৎপরতার জন্য প্রায় ১১০ মিলিয়ন ডলার খরচ হচ্ছে, চার সপ্তাহে যা পৌঁছেছে ৫.৪ বিলিয়ন ডলারে। ভারতের পরোক্ষ অর্থনৈতিক ক্ষতি: জিডিপি ক্ষতি: ১৫০ বিলিয়ন ডলার। আর্থিক বাজারের অস্থিরতা ও মুদ্রার অবমূল্যায়ন: ৯০ বিলিয়ন ডলার। বাণিজ্য ও সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্ন: ৮০ বিলিয়ন ডলার। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) হ্রাস: ১০০ বিলিয়ন ডলার।

পাকিস্তানের সামরিক ব্যয়: পাকিস্তান বিমান বাহিনীর হামলা ও আকাশ প্রতিরক্ষা টহলে দৈনিক ব্যয় প্রায় ২৫ মিলিয়ন ডলার, যা মোট ১ বিলিয়ন ডলার। বায়রাকতার ড্রোন ও রাআদ ও হাতফ-৭ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অতিরিক্ত ব্যয় ৪৫০ মিলিয়ন ডলার। সীমান্ত সতর্কতা, রাডার, সাম, গোয়েন্দা ও সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্স কার্যক্রমের জন্য প্রতিদিন খরচ হচ্ছে ১৫ মিলিয়ন ডলার, যা চার সপ্তাহে দাঁড়িয়েছে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার। পাকিস্তানের পরোক্ষ অর্থনৈতিক ক্ষতি: জিডিপি ক্ষতি: ২৫ বিলিয়ন ডলার। আর্থিক বাজার ও মুদ্রা অস্থিরতা: ১৫ বিলিয়ন ডলার। বাণিজ্য ও সরবরাহ ব্যাঘাত: ১২ বিলিয়ন ডলার। এফডিআই ও আইএমএফ সহায়তা ক্ষতি: ৫ বিলিয়ন ডলার। মোট ক্ষতি: দুই দেশের সম্মিলিত সামরিক ও অর্থনৈতিক ব্যয় চার সপ্তাহে দাঁড়িয়েছে ৫০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

ভারতের এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘ধ্বংস’, দিল্লির জন্য কতবড় ধাক্কা?: দেশটির নিরাপত্তা সূত্রের মতে, জেএফ-১৭ থান্ডার বিমান থেকে নিক্ষেপ করা হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ১.৫ বিলিয়ন ডলারের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে এবং ধ্বংস করা হয়েছে। রাশিয়ার তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০, বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে উন্নত দূরপাল্লার ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র (এসএএম) ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত হয়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির মতে, এই ব্যবস্থাটি বিমান, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি প্রতিহত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এই বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় তিনটি উপাদান রয়েছে-ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার, একটি শক্তিশালী রাডার এবং একটি কমান্ড সেন্টার। এটি বিমান, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং মধ্যবর্তী-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রকে আক্রমণ করতে সক্ষম।

ভারতের হামলায় আজাদ কাশ্মীরে ১২ ঘণ্টায় ১৩ জন নিহত: পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরে ভারতের হামলায় ১২ ঘণ্টায় অন্তত ১৩ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। অঞ্চলটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ শনিবার দুপুরে এ তথ্য জানিয়েছে। কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, এ সময়ে ৫০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

করাচির দিকে ভারতের যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন, আরব সাগরে উত্তেজনা: পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে কয়েকদিন ধরে চলা সীমান্ত উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের দিকে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে ভারত এমনটি দাবি করেছে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ। পত্রিকাটি জানায়, ভারতীয় প্রতিরক্ষা সূত্রের বরাতে জানা গেছে, নয়াদিল্লি তার পশ্চিমাঞ্চলীয় নৌবহরকে উত্তর আরব সাগরের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে, যা করাচি উপকূল থেকে মাত্র ৩০০-৪০০ মাইল দূরে অবস্থান করছে। এই স্ট্রাইক গ্রুপে রয়েছে একটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার, ডেস্ট্রয়ার, ফ্রিগেট ও সাবমেরিন বিধ্বংসী জাহাজ। এর কিছু জাহাজে রাশিয়ার সহায়তায় নির্মিত ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যার গতি ম্যাক ৩ পর্যন্ত এবং এটি ৫০০ মাইল দূরের লক্ষ্যবস্তুতে ৩০০ কেজির ওয়ারহেড নিক্ষেপে সক্ষম।

পাকিস্তানের হামলা, ভারতের ৩২ বিমানবন্দর ১৫ মে পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা: পাকিস্তানের ড্রোন হামলার পর ৩২টি বেসামরিক বিমানবন্দরে বিমান চলাচল বন্ধ করেছে ভারত। গতকাল শনিবার ভোরে এ ঘোষণা দিয়েছে। ভারতের বেসামরিক বিমানবন্দর বিষয়ক কর্তৃপক্ষ দ্য এয়ারপোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়া (এএআই) এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন (ডিজিএসি)। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আগামী ১৫ মে পর্যন্ত এই ৩২টি বিমানবন্দরে সব ধরনের বিমানের উড্ডয়ন ও অবতরণ বন্ধ থাকবে।

৩৬টি স্থানে পাকিস্তানের ৪০০ ড্রোন হামলা, স্বীকার করল ভারত: ৮ ও ৯ মে’র মাঝরাতে ৩৬টি স্থানে প্রায় ৩০০-৪০০টি ড্রোন ব্যবহার করে লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি) ডিঙিয়ে ভারতীয় আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে পাকিস্তান। গত শুক্রবার এমন অভিযোগ করেছে ভারত। গত শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে দ্য ওয়ায়ার। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব ড্রোনের মাধ্যমে সামরিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা এবং বেসামরিক বিমানকে ঢাল হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রী, সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এবং বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার ভূমিকা সিংহ এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জানান, পাকিস্তানের এই ড্রোন অনুপ্রবেশের সম্ভাব্য উদ্দেশ্য ছিল ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পরীক্ষা করা। ভারতের হাতে ধরা পড়া ড্রোনগুলোর ধ্বংসাবশেষ প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সেগুলো তুরস্কের আসিসগার্ড সংগার ড্রোন।