বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত ও বিশ্ব শান্তির দিশারী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মভূমি পবিত্র মক্কা নগরীর কাবা শরীফে অযুত কন্ঠে লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাববাইক ধ্বনিত হওয়ার মাস পবিত্র জিলহজ্ব। এ মাসের চতুর্থ দিবস আজ। দিন যতই যাচ্ছে হজ্ব পালনেচ্ছুদের মধ্যে মহান প্রভুর দিদার ও নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর শাফায়াত লাভের বাসনা মনের গভীরে ততই তীব্র হচ্ছে।

পবিত্র হজে¦ বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের এক অনুপম দৃশ্য দৃশ্যমান হয়। সেখানে বিশ্বের ধনী-গরিব, আমির ফকির শেতাঙ্গ কৃষ্ণাঙ্গ সব একাকার। কোনো ধরনের ভেদাভেদ বা পার্থক্য সেখানে নেই। সবার পরণে একই ধরনের পরিচ্ছদ। একই নাম উচ্চারিত হয়। সবার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। মহান প্রভুর পরম করুণাময় রহমত ও সান্নিধ্য লাভ।

হজ্ব একটি ফরজ ইবাদাত হলেও নামায রোজার মতো সকলের জন্য ফরজ নয়। যে সব মুসলমানের পক্ষে পবিত্র কাবায় গিয়ে হজ্ব পালন করে ফিরে আসার মতো আর্থিক ও শারীরিক সার্মথ্য আছে, কেবল তাদের ওপর জীবনে একবার হজ্ব ফরজ করা হয়েছে। তবে ঐ ব্যক্তিকে স্বাধীন ও প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে। এর পাশাপাশি তার হজ্বে যাওয়ার পথ নিরাপদ হতে হবে। মহিলাদের হজ্ব করতে তার সাথে স্বামী বা মুহরিম ব্যক্তি সাথে থাকতে হবে। আর্থিক সামর্থ্য বলতে যা বুঝানো হয়ে থাকে তাহলো হজ্ব যাত্রা থেকে শুরু করে গৃহে ফিরে আসা পর্যন্ত পরিবারের প্রয়োজন পূরণের সামর্থ থাকা। আল্লাহ বলেছেন, আল্লাহর ঘর পর্যন্ত পৌঁছার মতো যার সামর্থ্য আছে তার ওপর হজ্ব করা আল্লাহর একটি অনিবার্য হক। অতএব যাদের উপর আল্লাহর নির্দেশিত এই হজ্ব ফরজ হয়েছে। তাদের ফরজ কর্ম সম্পাদনে সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে। কেননা মানুষের জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই। হাদীস শরীফে আছে, যে সকল ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্ব পালন করেনি, তারা ইহুদি খ্রিষ্টানদের মতো মৃত্যুবরণ করবে।

এই মহিমান্বিত হজ্বের তিনটি কাজ ফরজ। এগুলো হচ্ছে ইহরাম বাধা, উকুফে আরাফা বা আরাফার ময়দানে অবস্থান করা এবং তাওয়াফে জিয়ারত বা বায়তুল্লাহ শরীফ জিয়ারত করা। এর পাশাপাশি আরো কয়েকটি কাজ হজ্ব পালনকারীদের আমল করতে হয়। সেগুলো হলো মুজদালিফায় অবস্থান করা, সাফা মারওয়া পাহাড় দু’টির মধ্যে দৌড়ানো বা সায়ী করা। মাথার চুল মুন্ডানো বা ছাঁটা। নির্দ্দিষ্ট স্থানে কঙ্কর নিক্ষেপ এবং জিলহজ্ব মাসের দশ তারিখের পর দুই বা তিনদিন মিনায় অবস্থান করা।

ইহরাম অর্থ নিজের জন্য কোন কোন জিনিস ব্যবহার হারাম করা। মীকাত বা মীকাতের আগে তালবিয়া পাঠ করে হজ্বের নিয়ত করা এবং নির্ধারিত পোশাক পরিধানের মাধ্যমে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় কার্যাদি সম্পন্নের নাম ইহরাম। এর মাধ্যমে হজ্ব পালনকারী নিজের ওপর সাময়িকভাবে কতিপয় কাজ হারাম করে নেয়া। যেমনÑ স্ত্রী সহবাস, চুল, নখ কাটা, সুগন্ধী ব্যবহার করা, সেলাই কাপড় পরিধান করা, অশ্লীল কথা বলা, শিরক করা ইত্যাদি।

উল্লেখ্য, যে স্থান থেকে ইহরাম বাধতে হয় সে স্থানকে মীকাত বলে।