আজ বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে অনুষ্ঠিত চতুর্থ এফওসি বৈঠকে যোগদিতে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন তুরস্কের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী বেরিস একিনচি। গতকাল সোমবার তিনি ঢাকায় আসেন। বেরিস একিনচি দুদেশের মধ্যকার পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে ফরেন অফিস কনসালটেশনে (এফওসি) নেতৃত্ব দেবেন। আজ মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এই বৈঠকের আয়োজন করা হবে। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম। বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে তৃতীয় এফওসি হয়েছিল ২০১৯ সালে।

এফওসিতে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি বেরিস একিনচির সৌজন্য সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবীর খানের সঙ্গে। এ ছাড়া তিনি বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করবেন। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব নজরুল ইসলাম বলেন, উভয় দেশের সামগ্রিক সম্পর্ক নিয়ে পররাষ্ট্র সচিবদের বৈঠকে আলোচনা হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়ে জোর দেবে ঢাকা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুরস্কের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বেড়েছে। বৈঠকে এ বিষয়ের সঙ্গে জ্বালানি, কৃষি, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাত নিয়ে আলোচনা হবে।

কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরও ঢাকার সঙ্গে ভূরাজনৈতিক যোগ-বিয়োগে অংশীদারত্ব গভীর করতে আগ্রহী আঙ্কারা। অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সম্পর্ককে অনন্য উচ্চতায় নেওয়ার প্রত্যাশী দেশটি। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমে সমর্থন ও অবদান রাখার আগ্রহ দেখিয়েছে তুরস্ক। ইতোমধ্যে গণঅভ্যুত্থানে গুরুতর আহতদের চিকিৎসায় এগিয়ে এসেছে দেশটি।

জানা গেছে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি বদলেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভারতের প্রভাব কমেছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছে আঙ্কারা। তারা দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে আধিপত্যের পাশাপাশি মুসলিম রাষ্ট্রের বলয় সৃষ্টি করতে চায়। বিশেষ করে প্রতিরক্ষা খাতের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বিনিময়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে কৌশলগত অংশীদারত্বে নিতে চায় তুরস্ক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিরক্ষা খাতে সম্পর্ক বাড়াতে একটি ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি, বাংলাদেশে সামরিক ড্রোন বানানোর কারখানা স্থাপন ও প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং অন্যান্য সমরাস্ত্র তৈরির যৌথ উদ্যোগের বিষয়ে আগ্রহী ঢাকা। এ বিষয়ে দুদেশের রাজনৈতিক ঐকমত্যও রয়েছে। গণঅভুত্থ্যানের পর দুদেশের সম্পর্কে নতুন মোড় নিলেও গলার কাঁটা হয়ে আছে অবৈধভাবে ইউরোপ যাওয়ার পথে তুরস্কে আটকে পড়া বাংলাদেশিরা। তবে তাদের ফিরিয়ে নিতে দুদেশের মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) সইয়ের কথা ভাবছে ঢাকা। অন্যদিকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো ঢাকার তার্কিশ হোপ স্কুলের ব্যবস্থাপনা দেশটির মারিফ ফাউন্ডেশনের কাছে তুলে দেওয়া হোক– এমন শর্ত দিয়েছে আঙ্কারা।