ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ের জন্যে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে ক্ষুদ্র ঋণ বিশেষজ্ঞ ও গবেষক মামুনুর রহমানের সামারি ফাইল প্রধান উপদেষ্টার অফিসে পাঠানো হয়। কিন্তু রহস্যজনকভাবে তার ফাইলে মুশফিকুর রহমানের নাম প্রতিস্থাপন হয়ে যায় এবং তার নাম এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনিত হয়ে আসে। এতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে রীতিমত চমক ও চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। বলা হচ্ছে এরকম ঘটনার পেছনে নিশ্চয় কোন কুটচাল কাজ করেছে। এঘটনার পিছনে অভিযোগের তীর একজন সাবেক আমলার দিকে। তার পদবি ছিল অতিরিক্ত সচিব মর্যাদার। তার বাড়ি উত্তরাঞ্চলে এবং স্বৈরাচার হাসিনার একজন প্রভাবশালী প্রতিমন্ত্রীর আত্মীয় বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, প্রথমে ওই অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব নিজে এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য তদবির করেন। কিন্তু তাতে ব্যর্থ হলে তার কাছের লোক হিসেবে মুশফিকুর রহমানকে বেছে নেন এবং এই কাজে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে কর্মরত থাকা তার কাছের কর্মকর্তাদের কাজে লাগান। মজার বিষয় হলো মুশফিকুর রহমানকে এসএমই ফাউন্ডেশনের নিয়োগ দেওয়ার জন্য দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ভাই বলে প্রচার করা হয় এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে লবিং করা হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মাহমুদুর রহমানের এই নামে কোন ভাই নাই।
জানা গেছে, স্বৈরাচারের হাসিনার পলায়নের পর অন্তর্বর্তী সরকারের সময় ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ইং তারিখ এসএমই খাতের আন্তর্জাতিক মানের বিশেষজ্ঞ ও গবেষক মামুনুর রহমানের ফাইল (স্মারক নং ৬৯) শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে ছামারি আকারে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে পাঠানো হয়। তার আগে মামুনুর রহমানের ফাইল শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) অফিসে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য পাঠানো হয়।
পুলিশ সূত্র বলছে তার ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে ইতিবাচক প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। কিন্তু মুশফিকুর রহমানের বিষয়টি পুলিশ ক্লিয়ান্সের জন্য পাঠানো-ই হয়নি বলে এই প্রতিবেদক জানতে পেরেছে।
মজার বিষয় হলো শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে ফাইল পাঠানোর ঠিক দুই মাস পর ২২ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার মিসর সফরের পর জানা গেল এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন শাহজালাল ব্যাংকের কর্মকর্তা মুশফিকুর রহমান। এতে আশ্চর্য্য হন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের কর্মকর্তারা। কারণ নিয়োগের জন্য মামুনুর রহমানের বিষয়ে সবকিছু প্রস্তুত করা হলো; আর নিয়োগ পেলেন মুশফিকুর রহমান!
অতীতে দেখা গেছে, এরকমের জালিয়াতি পূর্ণ ফাইলগুলোর চোখ ফাঁকি দিয়ে অনুমোদনের কৌশল হিসেবে বিদেশ গমনের আগের সময়টাকে বেছে নেওয়া হয়। কারণ তখন ব্যস্ততা এবং সময় স্বল্পতার কারণে তাড়াহুড়া করে এরকমের ফাইলগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখার সুযোগ থাকে না। ফলে জালিয়াত চক্র এভাবে পার পেয়ে যায়।
প্রসঙ্গত ১৮ই ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ১১তম ডি৮ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে দুই দিনের জন্য মিসরের রাজধানী কায়রোতে গমন করেন।
এদিকে এসএমই ফাউন্ডেশনের নতুন চেয়ারম্যান মুশফিকুর রহমানের নিয়োগের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিধি নিয়োগ বিধিমালার ব্যত্যয় দেখা গেছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, অন্য যেকোন পেশা, ব্যবসা কিংবা সরকারি, আধা সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান/ সংগঠন-এর সাথে কর্ম- সম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে যোগদানের তারিখ থেকে দুই বছর মেয়াদে এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন হিসেবে নির্দেশক্রমে মনোনয়ন প্রদান করা হলো। কিন্তু মিস্টার মুশফিকুর রহমান আগের পেশায় থেকেই এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান যোগদান করেছেন; যা তার নিয়োগ বিধির পরিপন্থী। তিনি অনলাইনে বিভিন্ন মিটিং করে থাকেন বলেও অভিযোগ আছে।
বিশেষ করে সম্প্রতি বিনিয়োগ সম্মেলনে এসএমই ফাউন্ডেশনের অনেক বেশি ভূমিকা থাকার কথা থাকলেও তিনি ছিলেন অনুপস্থিত। এতে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।