একজন সফল উদ্যোক্তা, সমাজসেবক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শহীদ মীর কাসেম আলী। সৃজনশীল উদ্যমী মানুষের প্রতিচ্ছবি শহীদ মীর কাসেম আলী। নিজ হাতে গড়ে তুলেছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দাতব্য প্রতিষ্ঠান, মিডিয়া। সাহিত্য সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ছড়িয়েছেন আলোর দ্যুতি। পাশে দাড়িয়েছেন অসহায়, দরিদ্র মানুষের পাশে। কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছেন হাজার হাজার বেকার মানুষের। তিনি আজ নেই। কিন্তু রয়েছে তার কাজ, তার গড়া প্রতিষ্ঠান। দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য সেবা দিয়ে যাবে অবিরাম।

ব্যক্তি পরিচয়: মীর কাসেম আলী ১৯৫২ সালের ৩১ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর থানার সূতালরী গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মীর তৈয়ব আলী সড়ক জনপথে বিভাগের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা ছিলেন। তার চাচা মীর মোশাররফ হোসেন সূতালরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। মাতা মৃত রাবেয়া আখতার (ডলি বেগম)। নানা আবদুল হামিদ ভূইয়া ও দাদা মীর রহমত আলী। মীর তৈয়ব আলীর ৪ ছেলে ও ১ মেয়ে। মীর কাসেম আলীর ২ ছেলে ও ৩ মেয়ে। তিনি ১৯৭৯ সালে খোন্দকার আয়েশা খাতুনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

শিক্ষা জীবন: পিতার চাক-রর সুবাধে বিভিন্ন জেলার থাকতে হয়েছে মীর কাসেম আলীকে। প্রাথমিক স্তরে পড়াশুনা করেছেন বরিশাল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এরপর ফরিদপুর জেলা হাইস্কুল। ১৯৬৭ সালে এসএসসি পাস করেছেন চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে। তিনি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ১৫তম স্থান অধিকার করেন। ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এম এ ডিগ্রি অর্জন করেন।

রাজনীতি: মীর কাসেম আলীর রাজনীতি ছিল সমাজসেবা। গরীব-দুখী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ব্যাংক, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে গ্রাম, চরাঞ্চল ও পাহাড়ি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে তিনি সারাদেশে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছেন। পিছিয়ে পড়া চর ও পাহাড়ের জনগোষ্ঠীর মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করেছেন। গড়েছেন মেডিক্যাল কলেজ, নার্সিং ট্রেনিং স্কুল ও কলেজ।

১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে ইসলামী ছাত্রশিবিরের যাত্রা শুরু হয়। মীর কাসেম আলী শিবিরের প্রতিষ্ঠাতা কেন্দ্রীয় সভাপতি।

১৯৭৯ সালে তিনি জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান। তিনি কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা, কর্মপরিষদ ও নির্বাহী পরিষদ সদস্য। এ ছাড়াও তিনি ঢাকা মহানগরীর নায়েবে আমীরের দায়িত্ব পালন করেছেন।

কর্মজীবন : ১৯৭৮ সালে আর্ন্তজাতিক সংস্থা রাবিতা আলম আল ইসলামীর কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে তিনি কর্ম জীবন শুরু করেন। একে একে গড়ে তুলেন শিল্প প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মিডিয়া। তিনি দেশের বিত্তবান সমাজসেবী ও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সমাজসেবী বিত্তবান মুসলিম ব্যক্তিদের সহযোগিতায় ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনা ট্রাস্ট ও ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিকালস প্রতিষ্ঠা করেন। এ ছাড়া তিনি দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের চেয়ারম্যান, ইবনে সিনা ট্রাস্টের অন্যতম সদস্য ছিলেন। এক কথায় বলা যায় একজন সফল শিল্প উদ্যোক্তা মীর কাসেম আলী স্বাস্থ্য সেবায় হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা ও পরিকল্পনা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা, সাহিত্য সেবা- প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, সাংস্কৃতিক অঙ্গন, মিডিয়া, প্রিন্টিং এবং অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন ও পরিচালনায় অসামান্য ভূমিকা রেখে গেছেন। তার গড়া প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার বেকার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক: মীর কাসেম আলী জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। এক্ষেত্রে অন্যতম নীতিনির্ধারক ছিলেন তিনি। তিনি বিভিন্ন সময়ে সফরকালে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সিনিয়র পলিসি এনালিষ্টদের সাথে সাক্ষাত করেছেন। বাংলাদেশের গনতন্ত্র, নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য মার্কিন কংগ্রেস ও সিনেটের সদস্যদের সাথে বৈঠক করেছেন। এনডিআই, আইআরআইসহ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য থিংকট্যাকের কর্তা ব্যক্তিদের সাথেও সাক্ষাত হয়েছে মীর কাসেম আলীর। তিনি জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে অনেকবার যুক্তরাজ্য ও ইউরোপ সফর করেছেন।

বিদেশ সফর: মীর কাসেম আলী যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা, সোমালিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, চীন, হংকং, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, লেবানন, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালী, জার্মান, সুইডেন, নেদারল্যান্ড প্রভৃতি দেশে সফর করেন।

ভাষা: মাতৃভাষা ছাড়াও তিনি ইংরেজী, হিন্দী, উর্দু এবং আরবী ভাষা জানতেন।

গ্রেফতার: ২০১২ সালের ১৭ জুন মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে গ্রেফতার পরওয়ানা জারি করে আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই দিনই তাকে গ্রেফতার করে আইন শৃংখলা বাহিনী বিকাল সোয়া চারটায় ট্রাইব্যুনালে হাজির করে।

হয়রানী: ২০১০ সালের ২৫ মার্চ মীর কাসেম আলী সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান তার ব্যবসায়িক কাজে। তখন গণমাধ্যমে প্রচার হয় তিনি আর ফিরবেন না। কিন্তু মে মাসেই তিনি দেশে ফিরে আসেন। ২০১০ সালের ৩০ মার্চ মীর কাসেম আলী ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক একাউন্ট ‘ফ্রিজ’ করে রাখা হয়। তিনি গ্রেফতারের পর একাধিকবার তার বাসায় তল্লাশী চালায় পুলিশ।

মীর কাসেম আলীর দ্বিতীয় ছেলে ব্যারিষ্টার মীর আহমদ বিন কাসেম। গত ৯ আগস্ট দিবাগত রাত ১১টায় রাজধানীর মিরপুরের ডিওএইচএস এর বাসা হতে সাদা পোশাক পরিহিত আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তুলে নিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত কার কোন খবর জানে তার পরিবারের সদস্যরা। আইন শৃংখলা বাহিনীর পক্ষ থেকেও তাকে আটকের খবর অস্বীকার করা হচ্ছে।

ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাসেম (আরমান) হাইকোর্টের একজন নিয়মিত প্র্যাকটিশনার। তিনি লিংকস ইন থেকে ২০০৭ সালে ব্যারিস্টার সনদ অর্জন করেছেন। এর আগে তিনি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে ২০০৫ সালে এলএলবি (অনার্স) পাস করেন। পড়াশুনা শেষে দেশে ফিরে ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাসেম (আরমান) একজন এডভোকেট হিসেবে ২০১০ সালের ৩০ ডিসেম্বর সনদপ্রাপ্ত হন। ২০১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্যপদ লাভ করেন। তিনি ইংল্যান্ড বারেরও একজন সদস্য।