মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির পথে সবচেয়ে বড় বাধা ইসরাইল

ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে চলমান সংঘাত ৯ দিনে গড়িয়েছে। এ সময়ে উভয় পক্ষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে দখলদারদের হামলায় ইরানের শতশত মানুষ নিহত ও আহত হয়েছেন। তবে ছেড়ে দিচ্ছে না বিশে^র অন্যতম শক্তিধর দেশ ইরানও। বিশেষ করে ইরানের ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ‘বিস্মিত’ হয়ে পড়েছে ইহুদিবাদি ইসরাইল। যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ সহায়তা না পেলে তারা ইরানে হামলা দীর্ঘ করতে পারবে কিনা এ নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে।

ইরানের দুটি ড্রোন ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে দেশটির উত্তরাঞ্চলে ও দক্ষিণাঞ্চলে পৃথক হামলা চালিয়েছে। যা অনেকটা অবাক করেছে ইসরাইলকে। হামলার বিষয়টি স্বীকার করে দেশটির সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এটি একটি বিরল ঘটনা, যেখানে ইরানের একমুখী আক্রমণাত্মক ড্রোন সফলভাবে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে।

এদিকে আরব দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইরানে ইসরাইলী আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। একইসঙ্গে দ্রুত সামরিক উত্তেজনা বন্ধেরও জোর আহ্বানও জানিয়েছেন তারা। তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলে ২১-২২ জুন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) ৫১তম পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক। বৈঠক থেকেই ইরানে ইসরাইলী হামলার তীব্র নিন্দা জানানো হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ বিবৃতি মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক মেরুকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

গতকাল শনিবার এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড। এ ছাড়া এ আগ্রাসনকে পুরো অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হিসেবেও আখ্যায়িত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। টিআরটি ওয়ার্ল্ড প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক যৌথ বিবৃতিতে আরব পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলেন, এই উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, তা নিশ্চিত করতে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে উদ্যোগ নিতে হবে এবং একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতির জন্য কাজ করতে হবে। ইরানের ওপর ইসরাইলের সামরিক হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দ্রুত এই উত্তেজনা থামানোরও আহ্বান জানিয়েছে আরব লীগ। গোষ্ঠীটি বলেছে, এ ধরনের হামলা জাতিসংঘের সদস্য একটি দেশের সার্বভৌমত্বের স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং পুরো অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি।

অন্যদিকে ইসরাইলকে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি স্থাপনের পথে সবচেয়ে বড় বাধা বলে মনে করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেব এরদোগান। পরমাণু প্রকল্প ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান সংলাপ ভন্ডুল করতে ইসরাইল ইরানে হামলা করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। গতকাল শনিবার তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে মুসলিম দেশগুলোর আন্তর্জাতিক সংস্থা অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি)-এর সম্মেলন শুরু হয়েছে। সেখানে দেওয়া বক্তব্যে এরদোগান ইরানে হামলার জন্য ইসরাইলের কড়া সমালোচনা করেন। ইসরাইলের হামলাকে ‘পুরোপুরি গুন্ডামি’ উল্লেখ করে এরদোগান বলেন, “ইরানে ইসরাইল যা করছে, তা পুরোপুরি গুন্ডামি। নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন সরকার চায় (পরমাণু প্রকল্প ইস্যুতে) যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের আলোচনা ভন্ডুল হোক, হামলার মূল কারণ এটাই। বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর প্রতি আমার অনুরোধ আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আপনারা ইসরাইলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের খবরে বলা হয়, গতকাল শনিবার ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে জর্ডান সীমান্তসংলগ্ন বেইত শেইন শহরে একটি ড্রোন আঘাত হানে। এতে একটি দুইতলা বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। জরুরি উদ্ধারকর্মীরা জানান, বিস্ফোরণে বাড়িটির পাশে বড় ধরনের গর্ত সৃষ্টি হয়েছে, জানালা ও দরজা উড়ে গেছে। ইসরাইলের জরুরি সেবা সংস্থা মাগেন ডেভিড আডম (এমডিএ) জানিয়েছে, তারা ধ্বংসস্তূপের ভেতর তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে। হতাহত কারও খোঁজ পায়নি। ইসরাইলী সামরিক বাহিনীর তথ্যমতে, ইরানের দ্বিতীয় ড্রোনটি ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলের একটি খোলা এলাকায় আঘাত হানে। এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ইসরাইল ইরানে হামলা শুরু করার পর থেকে ইরান যে বিপুলসংখ্যক ড্রোন ছুড়েছে, তার মধ্যে বেশির ভাগই লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছানোর আগেই প্রতিহত করা হয় বলে দাবি ইসরাইলী বাহিনীর। ইসরাইলী প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, ইরানের সর্বশেষ হামলায় অন্তত ছয়টি ড্রোন ছিল। এর মধ্যে কয়েকটি ড্রোন আরাভা মরুভূমি ও গোলান মালভূমিসহ অন্যান্য অঞ্চলে পৌঁছানোর আগেই ঠেকানো হয়।

আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে জাতিসঙ্ঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জানিয়েছে ‘ইসরাইল সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে’। এই কা-টি এমন এক সময় ঘটেছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র জাতিসঙ্ঘে ইসরাইলের পক্ষে সমর্থন জানাচ্ছে এবং ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডরোথি শিয়া। গতকাল শনিবার কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিয়া জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে এক বিবৃতিতে ভুল করে বলেছিলেন যে ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যে ‘বিশৃঙ্খলা, সন্ত্রাস ও দুর্ভোগ’ ছড়িয়েছে। এ সময় তিনি ইসরাইলের সাথে সঙ্ঘাতের জন্য ইরানকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, তেহরানের উচিত ছিল তার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি চুক্তিতে সম্মত হওয়া। এই কা-টি এমন এক সময় ঘটেছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র জাতিসঙ্ঘে ইসরাইলের পক্ষে সমর্থন জানাচ্ছে এবং ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। অবশ্য মার্কিন রাষ্ট্রদূত মুহূর্তের মধ্যেই নিজের বক্তব্য সংশোধন করে নেন।

৯ দিনের সংঘাতে এ পর্যন্ত ৪৩০ জন নিহত: ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে শনিবার বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানায়, গত ১৩ জুন ইসরাইলী হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ইরানে অন্তত ৪৩০ জন নিহত এবং তিন হাজার ৫০০ জন আহত হয়েছে। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস নিউজ এজেন্সির মতে, ইসরাইলী বিমান হামলায় ইরানে ৬৩৯ জন নিহত হয়েছে। এদিকে, ইসরাইল জানিয়েছে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে সেখানে ২৫ জন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে একজন হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন। আর আহত হয়েছেন দুই হাজার ৫১৭ জন।

নিরাপত্তাহীনতায় ইসরাইলের মুসলিমরা: ইসরাইলের তামরা শহর থেকে শুরু করে হাইফার অলিগলিতে এখন শুধু শোক আর উদ্বেগ। বৃহস্পতিবার তামরা শহরে এক পরিবার একই ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় চারজন সদস্যকে হারায়। সেখানকার মুসলিমরা বলছেন, ‘আমরাও এই দেশের নাগরিক। তবে আমাদের এলাকা কেন এত অসুরক্ষিত?’ ইরান ও ইসরাইলের মধ্যকার দ্বন্দ্ব নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরে উভয় দেশ একে অন্যকে শত্রু হিসেবে দেখে আসছে। ইরান এমন একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সমর্থন করে যাদের ইসরাইল তার নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে। যেমন, লেবাননের হিজবুল্লাহ, গাজা-ভিত্তিক হামাস ও ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় শুরু হওয়া ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ এ উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলে।

তবে এ দ্বন্দ্ব ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় রূপ নেয় নয় দিন আগেই। আর এর প্রভাব পড়তে শুরু করে ইসরাইলের প্রায় ১৭ লাখ ৮২ হাজার মুসলমানদের ওপর। এটি ইসরাইলের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৮ শতাংশ। অনেক দিন ধরেই ইসরাইলে অবস্থিত মুসলিম সম্প্রদায় দাবি করে আসছে, সরকার তাদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা দিচ্ছে না। ক্ষেপণাস্ত্র যখন হাইফা বা তেল আবিবে পড়ে, তখন সেখানে বাঙ্কার, নিরাপদ ঘর এবং উদ্ধারকারীদের দ্রুত সাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু রাহাত, তামরা, শেফা-আমর, আরবা, হাইফা, লদ আর রামাল্লাহের মতো মুসলিম শহরসহ অন্যান্য মুসলিম শহরে এসবের অভাব স্পষ্ট। গতকাল শনিবার হাইফার একটি মসজিদে ইরানের একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। মসজিদটির বড় ধরনের ক্ষতি না হলেও, এর প্রতি মানুষের অনুভূতির ক্ষতিটি বেশ গভীর। একজন ইমাম বলেন, ‘এটা শুধু একটা দালান নয়, এটা আমাদের পবিত্র স্থান। এ ঘটনার পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বহু মানুষ কষ্ট আর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

কেউ কেউ বলছেন, আমাদের মসজিদ রক্ষা পায় না, আমাদের ঘরও না। তাহলে আমরা কোথায় যাব? একজন বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের পাশের এলাকায় নিরাপত্তার আধুনিক ব্যবস্থা আছে। কিন্তু আমরা শুধু প্রার্থনা করি বেঁচে থাকার জন্য।’ এক গবেষণায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ ইসরাইলী মুসলমান ধর্মভীরু বা ঐতিহ্যবাহী। মাত্র ১৭ শতাংশ নিজেকে সেক্যুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ বলেন। তাই মসজিদ ও ধর্মীয় স্থানগুলোর নিরাপত্তা তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিকভাবে ইসরাইলের মুসলমানদের ভিন্ন ভিন্ন মত আছে। কেউ কেউ দেশের পাশে দাঁড়ান, আবার কেউ কেউ সরকারের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তারা বলছেন, শুধু এখন নয়, অনেকদিন ধরেই তারা বৈষম্যের শিকার। এ পরিস্থিতিতে অনেক মুসলিম নেতা দাবি তুলেছেন, মুসলিম শহরগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র বাড়াতে হবে, ধর্মীয় স্থানগুলোকে নিরাপত্তা দিতে হবে এবং সবাইকে সমানভাবে রক্ষা করতে হবে। একজন সামাজিক কর্মী বলেন, ‘আমাদের দাবি খুব সহজ। আমাদের দেখে রাখা হোক, আমাদের কথাও শোনা হোক, এবং আমাদেরও সুরক্ষা দেওয়া হোক, যেমন অন্য নাগরিকদের দেওয়া হয়।’

দক্ষিণ-পশ্চিম ইরানে ইসরাইলের হামলা: ইসরাইলী সেনাবাহিনী আরো হামলা চালানোর খবর নিশ্চিত করার পরই দক্ষিণ-পশ্চিম ইরানে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র আভিচায় আদরাই সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, ‘বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমানগুলো বর্তমানে দক্ষিণ-পশ্চিম ইরানে সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে অভিযান চালাচ্ছে।’ তবে তিনি এ নিয়ে আর বিস্তারিত কিছু জানাননি। ইরানি গণমাধ্যম জানিয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম ইরানের খুজেস্তান প্রদেশের আহভাজ এবং বন্দর-ই মাহশাহরে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।

ফিরতে শুরু করেছে ইন্টারনেট সংযোগ: ইরানে ধীরে ধীরে ইন্টারনেট সংযোগ ফিরতে শুরু করেছে। এর ফলে দেশটির বহু মানুষ কয়েক দিনের মধ্যে প্রথমবারের মতো তাদের পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করার সুযোগ পাচ্ছেন। ইরানের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রীর বরাত দিয়ে তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, রাত ৮টার মধ্যে সারাদেশে ‘আন্তর্জাতিক’ ইন্টারনেট সম্পূর্ণভাবে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে ইন্টারনেট ফিরতে শুরু করায় দেশের বাইরে থাকা ইরানিরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানাচ্ছেন, তারা ফেসটাইম ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, যাদের নিয়ে তারা কয়েক দিন ধরে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। সপ্তাহের শুরুতে সরকার ৯ কোটিরও বেশি জনগণের ফোন ও অনলাইন সেবা বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তখন সরকার ইসরাইল থেকে আসা সাইবার নিরাপত্তার হুমকির কথা উল্লেখ করে। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষ জানতে পারছিল না ইসরাইলের পরবর্তী হামলা কখন বা কোথায় হতে পারে।

নেতানিয়াহুকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য ক্লিনটনের: আরব নিউজের খবরে বলা হয়েছে ইরানে ইসরাইলের হামলা ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ‘খায়েশ’ নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। তিনি বলেছেন, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরেই ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ চাচ্ছেন-কারণ এর মাধ্যমে তিনি “চিরকাল” ক্ষমতায় টিকে থাকতে চান। তার ভাষায়, নেতানিয়াহু বহু বছর ধরেই ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাইছেন, কারণ তাতে তিনি আজীবনের জন্য ক্ষমতায় থাকতে পারবেন। তিনি গত ২০ বছরের বেশির ভাগ সময়ই ক্ষমতায় ছিলেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় টেলিভিশন অনুষ্ঠান ‘দ্য ডেইলি শো’-তে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্লিনটন এসব কথা বলেন। চলমান ইরান-ইসরাইল উত্তেজনা প্রশমিত করতে তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলেও জানান তিনি। ক্লিনটন বলেন, আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অনুরোধ করেছি যেন এই সংঘর্ষ প্রশমিত করার চেষ্টা করেন এবং বেসামরিক নাগরিকদের ওপর যে লাগাতার হত্যাকা- চলছে, সেটার অবসান ঘটান। তবে সাবেক এই প্রেসিডেন্টের মতে, নেতানিয়াহু বা ট্রাম্প কেউই সম্পূর্ণ আকারের আঞ্চলিক যুদ্ধ চান না। যদিও এ অবস্থায়ও তারা এমন এক দুঃসাহসিক পথ বেছে নিচ্ছেন, যেখানে মূল শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ক্লিনটন বলেন, ‘আমরা অবশ্যই আমাদের মিত্রদের পাশে থাকব, তাদের রক্ষা করব-এটা গুরুত্বপূর্ণ।তবে গোপন বা অনানুষ্ঠানিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া, যেখানে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়- এমন নিরীহ বেসামরিক মানুষজনই প্রধান ভুক্তভোগীÍএটা কোনো সমাধান হতে পারে না। সাবেক এই প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল হওয়া উচিত সংঘর্ষ নিরসন এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানকে উৎসাহ দেওয়া।

উল্লেখ্য, গত ১৩ জুন রাতে হঠাৎ ইরানে হামলা শুরু করে ইসরাইল। ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামের এই অভিযানে রাজধানী তেহরানসহ ইরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা, পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র ও আবাসিক স্থাপনায় হামলা চালায় ইহুদিবাদী সেনারা। হামলায় ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, দেশটির ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) প্রধান কমান্ডার হোসেইন সালামি, খাতাম আল-আনবিয়া সদরদপ্তরের কমান্ডার ও বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মেজর জেনারেল গোলাম আলি রশিদ ও ছয়জন পরমাণু বিজ্ঞানীর মৃত্যু হয়েছে। ইসরাইলের হামলার পর পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে শুক্রবার রাতে ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩ নামে’ অভিযান শুরু করে ইরান। তেহরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলের উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ভেদ করে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানছে। এতে হতাহত কম হলেও ইসরাইলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। ইরানের হামলার ভয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন ইহুদিবাদীরা। দুই দেশের মধ্যে সংঘাত এখনও চলমান রয়েছে।