তোফাজ্জল হোসাইন কামাল : রাজধানীর বনশ্রী ও আফতাবনগর দুটি জনবহুল আবাসিক এলাকা। এই দুই এলাকাকে ভাগ করেছে নড়াই নদী, যেটি রামপুরা খাল নামেই চেনেন এবং জানেন সবাই। এই খাল বা নদীর ওপর বনশ্রী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে মেরাদিয়া পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে চারটি বাঁশের সাঁকো। সময় ও প্রয়োজনের সাথে বনশ্রী ও আফতাবনগরকে দুই ভাগ করে বয়ে চলা রামপুরা খালটির দুই পাশের নগরজীবনের বড় পরিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু নির্বিঘœ যোগাযোগ স্থাপিত হয়নি গত দেড় দশকেরও বেশি সময়। ফলে বনশ্রী ও আফতাবনগরের মানুষের যোগাযোগের একমাত্র অবলম্বন চারটি বাঁশের সাঁকো। অবশেষে সাঁকো মাড়িয়ে চলা লাখো মানুষের কষ্ট লাগবে নির্মিত হচ্ছে দুটি নড়াই সেতু। নির্মান করবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন-ডিএনসিসি।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, বনশ্রী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে মেরাদিয়া পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটারের মধ্যে চারটি বাঁশের সাঁকো রয়েছে। এসব সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ দুই পাশে যাতায়াত করে। বনশ্রী ও আফতাবনগরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের জন্য অনেক শিক্ষার্থী এই সাঁকো ব্যবহার করেন। বনশ্রী ও আফতাবনগরে ছোট-বড়ো মিলিয়ে প্রায় অর্ধশত স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এ ছাড়া অন্তত ২০টি ছোট-বড় হাসপাতাল ও ক্লিনিক আছে। বনশ্রীতে বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল থাকায় আফতাবনগরের বাসিন্দাদের এপারে আসতে হয়।
এদিকে, সাঁকোগুলো নড়বড়ে হওয়ায় প্রায়ই ঘটে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। সঙ্গে কিছুদিন পরপর সাঁকো মেরামতের কাজ হলে কিংবা ঝড়বৃষ্টিতে দুই পাশের মানুষের যাতায়াতে নেমে আসে অসহনীয় ভোগান্তি। যদিও দেড় দশক ধরে এসব সাঁকোর পরিবর্তে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে বনশ্রী ও আফতাবনগরের মানুষ।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সিটি করপোরেশন কিংবা সরকারের অন্য কোনো পক্ষ থেকে এর আগে কখনো সাঁকোগুলো মেরামত বা নির্মাণের কাজ হয়নি। সাঁকো ভেঙে গেলে বা মেরামতের প্রয়োজন হলে তা আফতাবনগর জহুরুল ইসলাম সোসাইটির উদ্যোগে করা হয়।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, আফতাবনগরের বাসিন্দারা কেউ গাড়ি বা রিকশা নিয়ে বনশ্রীর দিকে যেতে চাইলে রামপুরা ব্রিজ ঘুরে যেতে হয়। বাঁশের সাঁকোতে মানুষ হাঁটলেও সেটি নড়তে থাকে। বেশি আতঙ্কে থাকে শিশু ও বৃদ্ধরা। যদিও বাসিন্দারা দেড় দশক ধরে বাঁশের সাঁকোর পরিবর্তে কংক্রিটের সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন।
এবার দাবি পূরনে দুটি সেতু নির্মাণ করবে ডিএনসিসি
এবার এই দুই আবাসিক এলাকার মানুষের দাবি পূরনের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। এখন তাঁদের স্বপ্ন পূরনের পালা। ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেছেন, আফতাবনগর থেকে বনশ্রী যাওয়া-আসার প্রধান সড়ক ছাড়া বিকল্প কোনো মাধ্যম নেই। এলাকাবাসীর সুবিধার্থে এই নড়াই নদীর উপর কমপক্ষে দু’টি সেতু নির্মাণ করা হবে যা এই দুই আবাসিক এলাকার মধ্যে সহজ ও সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবে। গতকাল শনিবার বনশ্রীতে ডিএনসিসির সার্বিক সহযোগিতায় এবং সমমনা পরিষদ, বনশ্রীর উদ্যোগে বনশ্রী খালপাড় (নড়াই নদী) এলাকায় ময়লা পরিষ্কার ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। এসময় প্রশাসক জানান প্রস্তাবিত এ সেতুর নাম হবে নড়াই সেতু। তিনি বলেন, যে খালটিকে আমরা বনশ্রী খাল নামে চিনি, আশির দশকেও এটি ছিল প্রবাহমান নড়াই নদী। অবৈধ দখলের মাধ্যমে নদীর প্রবাহ রুদ্ধ করে একে খালে রূপান্তর করা হয়। আমাদের উদ্যোগে পানি উন্নয়ন বোর্ড ইতোমধ্যে একে পুনরায় নড়াই নদী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। তিনি আরো বলেন, এই নদী রক্ষা করতে পারলে ভবিষ্যতে রামপুরা থেকে নৌপথে শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী ও বালু নদী হয়ে সদরঘাট ও মিরপুর পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন চালু করার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
জানতে চাইলে ডিএনসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফারুক হাসান মো. আল মাসুদ বলেন, মানুষের কষ্ট দূর করতে সিটি করপোরেশন থেকে তিনটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুটি হবে সেতু। যেগুলোয় গাড়ি চলাচলের পাশাপাশি ফুটপাতে মানুষ হাঁটতে পারবে। একটি ফুটওভার ব্রিজও (পদচারী সেতু) হবে। তিন থেকে চার মাসের মধ্যে এগুলোর কাজ শুরু হওয়ার কথা।