পিআর পদ্ধতির নির্বাচনেই জনগণের সরকার ও সংসদ গঠিত হয় উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, প্রচলিত নিয়মে কোন দল ৫১ শতাংশ ভোট পেয়ে সরকার গঠন করে। অপর দিকে অন্য দল ৪৯ শতাংশ ভোট পেলেও তার কোন মূল্যায়ন হয় না। কিন্তু পিআর পদ্ধতির নির্বাচনে প্রতিটি ভোটের মূল্যায়ন হয়। এজন্য জনগণের সরকার ও সংসদ গঠিত হয়। ফলে কোন দলই স্বৈরাচার হয়ে ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে পারবে না। ক্ষমতায় বসতে পারলে ফ্যাসিবাদ কায়েমের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয়ে কেউ কেউ পিআর পদ্ধতির নির্বাচনে যেতে রাজি হচ্ছে না। তিনি বলেন, সৎ উদ্দেশ্য থাকলে পিআর পদ্ধতির নির্বাচনে কারোরই আপত্তি থাকবে না।
গত রোববার পবিত্র আশূরা উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি আরো বলেন, আশূরার শিক্ষা হচ্ছে খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা। ইসলাম থাকলে জাতীয়তাবাদ থাকতে পারে না, জাতীয়তাবাদ থাকলে কখনো ইসলামের বিধান প্রতিষ্ঠা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতীয়তাবাদ হচ্ছে জাতিস্বত্তার উপর ভিত্তি করে বিচার করা। এর অর্থ হচ্ছে কেউ যদি জাতীয়তাবাদ স্বীকার করে, মেনে নেয় তাহলে সেই দলের ব্যক্তি অপরাধ করলেও তাকে শাস্তি দেওয়া হবে না। অথচ মহানবী (সা.) বলেছেন, আমার মেয়ে ফাতেমাও যদি চুরি করতো তবে আমি তার হাত কেটে দিতাম। এটাই ইসলামের বিধান। কারণ ইসলামের বিধান সব মানুষের জন্য সমান। ইসলাম ব্যতিত সকল ব্যবস্থায় বৈষম্য বিদ্যমান। কেবলমাত্র ইসলামী ব্যবস্থায় কোন বৈষম্য নেই।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দখলবাজ, নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে যুদ্ধ করতে হবে। কারা সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে জনগণ তা জানে। জুলাই চেতনা বিনষ্টের চেষ্টা করলে ছাত্র-জনতা আবারো রাস্তায় নামবে। ছাত্র-জনতা রাস্তায় নামলে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দখলবাজ, নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের সুযোগ থাকবে না। তাই মব সন্ত্রাস ছেড়ে নতুন বাংলাদেশ গড়তে তিনি সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানান।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ড. আব্দুল মান্নানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর, ঢাকা -৮ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি, ঢাকা -৯ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী কবির আহমেদ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মো. শামছুর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক নুর নবী মানিক, সৈয়দ সিরাজুল হক, শাহীন আহমেদ খান, সহকারী প্রচার সম্পাদক আবদুস সাত্তার সুমন, মহানগরীর সহকারী অফিস সেক্রেটারি মো. মুজিবুর রহমান, চকবাজার দক্ষিণ থানা আমীর মাওলানা আনিসুর রহমানসহ মহানগরীর ও বিভিন্ন থানা দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ইসলামী খেলাফত ব্যবস্থায় পরিবারতন্ত্র কিংবা রাজতন্ত্রের কোন সুযোগ নাই। পরিবারতন্ত্রের কারণেই স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও মানুষ শোষণের শিকার হয়েছে। রাসূল (সা:) বলেছেন, অত্যাচারী শাসকের সামনে সত্য বলা জেহাদ। ছাত্র-জনতা অত্যাচারী স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শাহাদাতের তামান্নায় রাস্তায় নেমে এসেছিল। ৩৬ জুলাইয়ের প্রতিদিনই লাখ-লাখ মানুষ রাস্তায় নেমেছিল। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে হাসিনা দলবল নিয়ে পালিয়ে গেছে। ছাত্র-জনতা শুধু একটি নির্বাচনের জন্য জীবন ও রক্ত দেয়নি। জুলাইয়ে চেতনা ছিল বৈষম্যহীন, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার একটি বাংলাদেশ। জুলাই চেতনা বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরের সংস্কার করতে হবে, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিটি খুন, গুম, হামলা-মামলা, জুলুম-নির্যাতনের সাথে জড়িতদের বিচার করতে হবে। আওয়ামী লীগের অপশাসনের ১৫ বছরের প্রতিদিনই কারবালা দিনের মতো ভয়াবহ ছিল।
তিনি আরো বলেন, সংস্কার ও গণহত্যার বিচারের পাশাপাশি জনদুর্ভোগ লাঘবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিতে হবে। এরপর অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের নির্ধারিত সময়ে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিয়ে ভোটের যথাযথ মূল্যায়ন করে জনগণের সরকার ও সংসদ গঠন করতে হবে। বিদ্যমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে নির্বাচনের কোন পরিবেশ নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, আইন শৃঙ্খলার অবনতির জন্য একটি দল সরাসরি দায়ি। তারা অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতার পরিবর্তে অপরাধীদের থানা থেকে ছিনিয়ে নেয়, থানা ভাঙচুর করে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে চরম নৈরাজ্যের সৃষ্টি করছে। অপরদিকে, ছাত্র-জনতার প্রত্যাশিত নতুন বাংলাদেশ গড়তে জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন শান্তিপ্রিয় রাজনৈতিক দল অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারকে সংস্কার কাজে সহযোগিতার চেষ্টা করছে। তারা নিজেদের মতো করে সংস্কার চায়। সংস্কারের নামে নিজেদের দলীয় কুসংস্কার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা পরিহার করে নতুন বাংলাদেশ গড়তে জনগণের প্রত্যাশিত রাজনীতি করতে তিনি সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহবান জানান। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।