হাদী'রা বছরে বছরে জন্ম নেয় না। হাদী'রা দুই যুগ/ পাঁচ যুগ/ শত বছর পর জন্ম নেওয়া বীর। ‘হাদী’ তিতুমীরের উত্তরসূরী,, জিয়াউর রহমানের উত্তরসূরী,, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর উত্তরসূরী। হাদীদের বিখ্যাত বাবা প্রয়োজন হয় না, খুব সাদামাটা পরিবার থেকে প্রচন্ড দেশ প্রেম এবং দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে জায়গা করে নেয় মানুষের অন্তর থেকে অন্তরে। জাতিকে জাগিয়ে তুলে অন্যায় বিরুদ্ধে। ওসমান হাদী সিঙ্গাপুর থেকে বেঁচে ফিরুক,মহাকাব্য রচনা করুক রাজনীতিতে" এটাই ছিল দেশবাসীর প্রত্যাশা। কিন্তু নাহ। পরম করুনাময়ের সিদ্ধান্ত তার পছন্দের শরীফ ওসমান হাদীকে শহীদের মর্যাদা দিবেন। তাই হয়েছে। সবাইকে এক সাগর আবেগে ভাসিয়ে পরপারে পারি জমিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত নামগুলোর একটি হয়ে উঠেছিলেন শরীফ ওসমান হাদি। নিজের বক্তব্য আর কর্মকা-ের মাধ্যমে তিনি সবার কাছে পরিচিতি পান তিনি। বিশেষ করে অল্প সময়েই সমর্থকদের কাছে জনপ্রিয় এই যুবক প্রতিপক্ষের কাছে হয়েছেন চক্ষুশূল। সামাজিক মাধ্যম কিংবা বিভিন্ন গণমাধ্যমের অনুষ্ঠান-আলোচনায় নিয়মিত মুখ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের বিভিন্ন রায় নিয়ে সোচ্চার ছিলেন ওসমান হাদি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুকে তার বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে অনেকবার।

ওসমান হাদি (১৯৯৩-১৮ ডিসেম্বর ২০২৫) ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলায় খাসমহল এলাকায় এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা একজন মাদ্রাসা শিক্ষক ও স্থানীয় ইমাম ছিলেন। ৬ ভাইবোনের মধ্যে হাদি সবার ছোট। ব্যক্তিগত জীবনে ওসমান হাদী ছিলেন বিবাহিত এবং এক সন্তানের জনক। তার এক বছরের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।

ঝালকাঠির এনএস কামিল মাদরাসায় হাদির শিক্ষাজীবনের শুরু। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। পরবর্তীকালে হাদি ঢাকার রামপুরা এলাকায় বসবাস করতে শুরু করেন। জুলাই আন্দোলনের সময় তিনি স্থানীয় সাংগঠনিক কর্মকা-ে জড়িত ছিলেন এবং রামপুরা এলাকার সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে হওয়া আন্দোলনে হাদিকে অন্যতম তরুণ নেতৃত্বদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

২০২৫ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ আন্দোলনে তাকে প্রধান নেতৃত্বের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং সেখানে ইনকিলাব মঞ্চকে “ন্যাশনাল অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট ইউনিটি” ব্যানারের অধীন থাকা সংগঠনগুলোর একটি হিসেবে দেখানো হয়। এরপর টকশো ছাড়াও ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে দেওয়া ঝাঁঝালো বক্তব্যে তিনি অনেকের কাছে হয়ে ওঠেন অনন্য এক সাহসী মুখের প্রতিচ্ছবি।

জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার লড়াইয়ে তিনি একসময় প্রাইভেট পড়িয়েছেন। পরে সাইফুরসসহ বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতাও করেন। সবশেষ ইউনিভার্সিটি অব স্কলারস নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ওসমান হাদি শিক্ষকতা করছিলেন। তিনি বরিশালের রহমতপুরে বিয়ে করেন।

শরিফ ওসমান হাদি বা ওসমান হাদি ছিলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র। তিনি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন। হাদি জুলাই শহিদদের অধিকার রক্ষা ও আওয়ামী লীগ নিষেধাজ্ঞা আন্দোলন এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী সক্রিয় রাজনীতির জন্য আলোচনায় আসেন।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতার অভিজ্ঞতা ও দাবির ভিত্তিতে গঠিত সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ইনকিলাব মঞ্চ শরিফ ওসমান হাদির হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয়। সংগঠনটির ঘোষিত লক্ষ্য হলো সমস্ত আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং “ইনসাফভিত্তিক” একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠন, যেখানে গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ ও ন্যায়বিচার প্রধান মূল্যবোধ হিসেবে থাকবে।

ইনকিলাব মঞ্চ গঠনের পর জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতি রক্ষা, অপরাধীদের বিচার, আহত-নিহত ব্যক্তিদের স্বীকৃতি এবং জুলাই চার্টার ঘোষণার দাবি তুলে সভা সমাবেশ শুরু করেন মি. হাদি। যা তাকে রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে আসে। "সমস্ত আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ"- ইনকিলাব মঞ্চের এই লক্ষ্য এবং এই প্ল্যাটফর্ম থেকে তার দেওয়া আওয়ামী লীগ ও ভারতবিরোধী নানা বক্তব্য তাকে তৈরি করে দেয় একটি সমর্থক গোষ্ঠী।

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির পরিবার আলেম পরিবার হিসেবে এলাকায় সুপরিচিত। এলাকার মানুষের ভাষ্য ছাত্রজীবন থেকেই হাদী ছিলেন অসম্ভব মেধাবী। সুবক্তার পাশাপাশি অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন ছাত্রজীবন থেকেই।