বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যা মামলায় ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছেন ৯ আসামী। এছাড়াও একজন যাবজ্জীবন সাজার বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। গত শনিবার এই আপিল করেন তাদের আইনজীবীরা। এর আগে গত ১৯ মে আবরার ফাহাদকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামী মো. মোর্শেদ ওরফে মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম আপিল বিভাগে আবেদন করেন।

গত ১৬ মার্চ আবরার ফাহাদকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের দেয়া ২০ জনের মৃত্যুদ- ও পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদ- বহাল রেখেছিলেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট এ বেঞ্চ রায় দেন।

এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পাওয়ার পর অমত্য ইসলামের পক্ষে আপিল করা হয়। আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু জানান, ১০ যুক্তিতে এ আপিল করা হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, তাকে কোনো বিশেষজ্ঞ সাক্ষী শনাক্ত করেননি। ফলে মামলার ঘটনাস্থলে তার উপস্থিতি সুনিশ্চিত নয় বরং সন্দেহ পূর্ণ ও অজানা। হাইকোর্ট বিভাগ আসামী মোর্শেদকে দোষ স্বীকারোক্তি প্রদানকারী আসামী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অথচ মামলায় তিনি কোনো দোষ স্বীকার করেননি।

২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি এ মামলার ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে এসে পৌঁছায়। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদ- দেয়া হলে তা অনুমোদনের জন্য মামলার যাবতীয় কার্যক্রম উচ্চ আদালতে পাঠাতে হয়। পরে কারাবন্দি আসামীরা জেল আপিল করেন। পাশাপাশি অনেকে ফৌজদারি আপিলও করেছেন।

২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদ- ও পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদ- দেন আদালত। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান ওই রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামীরা হলেন- মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনিক সরকার ওরফে অপু, মেহেদী হাসান রবিন ওরফে শান্ত, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মনিরুজ্জামান মনির, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ, মো. মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, খন্দকার তাবাকারুল ইসলাম ওরফে তানভির, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মো. শামীম বিল্লাহ, মো. সাদাত এ এস এম নাজমুস সাদাত, মুনতাসির আল জেমী, মো. মিজানুর রহমান মিজান, এস এম মাহমুদ সেতু, সামসুল আরেফিন রাফাত, মো. মোর্শেদ ওরফে মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, এহতেশামুল রাব্বি অরফে তানিম, মোহাম্মদ মোর্শেদ উজ্জামান ম-ল প্রকাশ জিসান, মুজতবা রাফিদ।

এছাড়া রায়ে যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্ত আসামীরা হলেন- অমিত সাহা, ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না, মো. আকাশ হোসেন, মুহতাসিম ফুয়াদ ও মো. মোয়াজ ওরফে মোয়াজ আবু হোরায়রা।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অসম চুক্তি এবং পানি আগ্রাসন নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের জেরে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নৃশংস কায়দায় পিটিয়ে হত্যা করে সংগঠনটির ক্যাডাররা। পরে রাত ৩টার দিকে শেরে বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামী করে পরদিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ। মাত্র ৩৭ দিনে তদন্ত শেষ করে একই বছরের ১৩ নবেম্বর চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি)।