বিভিন্ন পণ্যের ডিলারশিপ দেওয়া এবং চাকরির প্রলোভনে মোটা অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন (৫২) নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডির ঢাকা মেট্রো পূর্ব বিভাগ। মঙ্গলবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে সিআইডি সদর দফতর জানিয়েছে। জাহাঙ্গীর হোসেন কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ থানার রফিকুল ইসলামের ছেলে। বর্তমানে সে শেখেরটেক মোহাম্মদপুর এলাকায় বসবাস করে আসছিল।

সিআইডি জানায়, বিভিন্ন ব্যক্তির অভিযোগ ও সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে, গ্রেফতার ব্যক্তি বিভিন্ন ভুয়া কনজুমারস ফুড প্রোডাক্টস কোম্পানির নামে ডিলারশিপ দেওয়া এবং চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছে। প্রতারণার কৌশল হিসেবে সে প্রথমে বিভিন্ন জায়গায় অফিস ভাড়া নিতো এবং সেখানে বিভিন্ন কনজুমারস প্রোডাক্টস মজুত করতো। এ জন্য প্রথমে সে স্থানীয় খোলা বাজার থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য (যেমনÑ চিনি, ডাল ইত্যাদি) কিনতো এবং সেগুলো ভুয়া নামে প্যাকেটজাত করে বাজার দর থেকে তুলনামূলক কম দামে পাইকারি ক্রেতাদের কাছে বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দিতো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছাড়াও লিফলেট বিতরণ, ডিলারশিপের বিজ্ঞাপন প্রচার করে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতো। কেউ ডিলারশিপ নেওয়ার আগ্রহ দেখালে প্রথমে সে বাজার দর থেকে কম মূল্যে পণ্য সরবরাহ করতো। এভাবে কিছু দিন মালামাল সরবরাহ করে বিশ্বাস অর্জনের পরে আরও বড় ও সাশ্রয়ী অফার দিয়ে ডিলারদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা সংগ্রহ করে পণ্য না দিয়ে অফিস বন্ধ করে দিতো। সে অর্ধ যুগেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন স্থানে ১৫টিরও বেশি ভুয়া অফিস খুলে সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করছিল।

২৬ মামলার আসামি : তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি মতিঝিল থানায় রুজু হওয়া মামলা ছাড়া আরও ২৫টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। সবগুলো মামলা প্রায় একই রকম প্রতারণা কেন্দ্রিক। ঢাকা মেট্রোপলিটনের বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ ও নরসিংদী জেলায় এসব মামলা হয়।

চাকরির নামেও প্রতারণা : সিআইডি জানায়, শুধু ডিলারশিপ নয়, চাকরি দেওয়ার প্রলোভনেও প্রতারণা করতো সে। ভুয়া অফিসে বিভিন্ন পদে লোভনীয় বেতনে চাকরি দেওয়ার নামে জীবনবৃত্তান্ত ও অন্যান্য তথ্যের পাশাপাশি চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা নিতো। পরে বেতন দেওয়ার আগেই রাতের আঁধারে অফিস বন্ধ করে গাঢাকা দিতো।

শত শত ভুক্তভোগীর কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ : মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বিগত অর্ধ যুগেরও বেশি সময়ে অন্তত ৩০০ জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।

তার কাছ থেকে ডিলারশিপ নিয়োগে ভুক্তভোগীদের নাম ও ছবি সংবলিত আবেদনপত্র, কর্মী নিয়োগের ছবিসহ জীবনবৃত্তান্ত, ভিজিটিং কার্ড, পণ্যের ভুয়া মূল্য তালিকা, কোম্পানির পণ্যের নমুনা এবং প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার জব্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে আদালতে সোপর্দকরণ ও রিমান্ডের আবেদনসহ পরবর্তী আইনগত কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।