# হামিদের দেশত্যাগে জড়িতদের ধরা হবে, না হলে আমিই চলে যাব:স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
# দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে এক পুলিশ প্রত্যাহার, সাময়িক বরখাস্ত ২
# ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশত্যাগে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় তাকে ‘চিকিৎসার জন্য’ থাইল্যান্ডে যেতে দেওয়া হয়েছে
অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের নয় মাস পর দেশ ছাড়লেন দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করা সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। বুধবার দিবাগত রাত ৩টা ৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে তিনি দেশ ছাড়েন বলে পুলিশের বিশেষ শাখা-এসবি নিশ্চিত করেছে।
জানতে চাইলে এসবি প্রধান গোলাম রসুল গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, তিনি গত রাতে দেশের বাইরে গেছেন। আবদুল হামিদ বিমানবন্দরে যান রাত ১১টার দিকে। প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সেরে তিনি বিমানে চড়ে বসেন। দেশ ছাড়তে তাকে বাধা দেওয়া হয়নি।
ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, আবদুল হামিদের দেশত্যাগে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় তাকে ‘চিকিৎসার জন্য’ যেতে দেওয়া হয়েছে। দুজন আত্মীয় তার সঙ্গে ছিলেন।
ডেপুটি স্পিকার ও স্পিকার হিসাবে দায়িত্ব পালনের পর আওয়ামী লীগের সময়ে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার মেয়াদ শেষে ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন মো. সাহাবুদ্দিন। বঙ্গভবন ছাড়ার পর রাজধানীর নিকুঞ্জের বাসায় থাকছিলেন আবদুল হামিদ।
ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একাধিক সূত্র জানায়, আবদুল হামিদের দেশত্যাগে কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না। তিনি চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে গেছেন। এ সময় সঙ্গে ছিলেন তাঁর এক ছেলে ও শ্যালক। নিষেধাজ্ঞা না থাকায় তাঁকে দেশত্যাগে বাধা দেওয়া হয়নি।
আবদুল হামিদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তাঁর সঙ্গে শ্যালক ডা. নওশাদ খান ও ছোট ছেলে রিয়াদ আহমেদ আছেন। দেশের চিকিৎসকদের পরামর্শেই তিনি বিদেশে গেছেন।
ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও গুলি করার ঘটনায় কিশোরগঞ্জে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানা, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১২৪ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। গত ১৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ থানায় মামলাটি হয়।
দেশত্যাগে জড়িতদের ধরা হবে, না হলে আমিই চলে যাব: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে; না হলে নিজেই দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তিনি একথা বলেন।
জাহাঙ্গীর আলম কৃষি মন্ত্রণালয়েরও উপদেষ্টার দায়িত্বে আছেন। এদিন তিনি দিনাজপুরের বিরলে যান ধান কাটা উৎসবের উদ্বোধন করতে। সেখান থেকে ফিরে তিনি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সাবেক রষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগ অপ্রত্যাশিত ঘটনা। তার দেশত্যাগে যারা দায়ী তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
জাহাঙ্গীর আলম যখন সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রবেশ পথে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করছিলেন। তারা সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশ্যতাগের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে স্লোগান দিচ্ছিলেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ত্যাগ করার সময় বিক্ষোভের মুখে পড়েন। তিনি গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার কথা পুনঃব্যাক্ত করেন। এ সময় বিক্ষোভকারীদের মধ্যে একজন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দিকে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে মারেন, দায়ীদের আইনের আওতায় আনতে না পারলে কী করবেন? স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তৎক্ষণাৎ জবাব দেন, তা নাহলে আমিই চলে যাব। এর পর বিক্ষোভকারীরা শান্ত হয়ে পথ ছেড়ে দেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তার গাড়িতে উঠে চলে যান।
দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে এক পুলিশ প্রত্যাহার, সাময়িক বরখাস্ত ২
আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিনভর আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে রাত পৌনে ৮টায় পুলিশ সদর দফতর থেকে পাঠানো এক ক্ষুদে বার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
বার্তায় জানানো হয়, সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ইমিগ্রেশন পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার ও আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জের সদর থানায় দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং এসবির একজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে বরখাস্তকৃত তিন পুলিশ কর্মকর্তার নামপরিচয় প্রকাশ করেনি পুলিশ সদর দপ্তর।