বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তায় বিশেষ বাহিনী গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দেশে বিদ্যমান ৪ টি আর্ন্তজাতিক ও ৮ টি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে পরামর্শ পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এই বিশেষ বাহিনী গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয় বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র মতে, বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তায় ‘এয়ার গার্ড অব বাংলাদেশ’ (এজিবি) নামে বিশেষ বাহিনী গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে সম্ভাব্যতা যাচাইসহ সুপারিশ প্রণয়ন করতে গত ৩১ আগষ্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি আন্ত:মন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করেছে। ১৪ সদস্যের এই কমিটির প্রধান করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন ও অর্থ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ আতাউর রহমান খানকে। কমিটিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধি রাখা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তায় ‘এয়ার গার্ড অব বাংলাদেশ’ নামে বিশেষ বাহিনী করতে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অনুরোধ করে বিমান বাহিনী। এরপরই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিশেষ এই বাহিনীর প্রধান কোন বাহিনী থেকে আসবে, কতজন সদস্য থাকবে, তাদের কাজের পরিধি কী হবে, কোন কোন বাহিনীর সদস্যরা বিশেষ এই বাহিনীতে যুক্ত হবেন তা কমিটির সুপারিশে উল্লেখ থাকবে। এরপরই এজিবি গঠনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশের ৪টি আন্তর্জাতিক ও ৮ টি আভ্যন্তরীন বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মী রয়েছে। এছাড়া বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তায় আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), বিমান বাহিনীর সদস্য এবং আনসার বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করে আসছে ‘এভসেক’ এর ব্যানারে। কিন্তু নিরাপত্তার এই দায়িত্ব পালনকালে অধিকাংশ সময় এক বাহিনীর সদস্যের সঙ্গে আরেক বাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ের ঘাটতি দেখা দেয়। দায়িত্ব পালন নিয়ে পারস্পারিক দ্বন্দ্বের ঘটনাও বিভিন্ন সময় সামনে এসেছে, অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটারও খবর পাওয়া যায়। কিন্তু বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তায় বিশেষ বাহিনী গঠিত হলে তখন বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা এজিবি’র সদস্য হয়ে দায়িত্ব পালন করবেন। তখন নতুন এই বাহিনীর সাংগাঠনিক কাঠামো (অর্গানোগ্রাম) থাকবে। তাদের যানবাহনসহ অন্যান্য লজিষ্টিক সাপোর্টের বিষয় একটি কাঠামোর আওতায় থাকবে। এই বাহিনীকে তখন নিয়ন্ত্রণ করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনকালে ‘চেইন অব কমান্ড’ প্রতিষ্ঠা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তায় বেবিচক কর্তৃপক্ষ চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশ এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি ফোর্স (বিএএসএফ) গঠনের উদ্যোগ নেয়। এতে বিমান বাহিনী, পুলিশ, আনসার বাহিনীসহ অন্যান্য সংস্থার ১০ হাজার ৬৩২ সদস্য রাখারও প্রস্তাব প্রস্তুত করা হয়। এমনকী বিশাল এ জনবলের ব্যয় মেটাতে তিন ধাপে ৩৯৭ কোটি টাকা আর্থিক সংশ্লেষের বিষয়ও তুলে ধরা হয় ওই প্রস্তাবে। এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশের বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তায় ‘এয়ার গার্ড অব বাংলাদেশ’ নামে বাহিনী গঠনের উদ্যোগের ফলে বেবিচকের বিশেষ বাহিনী গঠনের উদ্যোগ কি বাতিল হবে নাকি সেটাও গঠিত হবে এ নিয়ে বেবিচকের একাধিক কর্মকর্তা নানা প্রশ্ন করছেন।

‘বাংলাশে এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি ফোর্স’ নামে বেবিচকের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী গঠনের উদ্যোগ নেওয়ার খবরে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরে মধ্যে। তারা বিশেষ বাহিনী গঠন বন্ধের দাবিতে গত ১৭ মার্চ বেবিচকের সদর দপ্তরে বিক্ষোভ কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সভা করে। পরে এই উদ্যোগে ভাটা পড়ে। তখন বিক্ষুদ্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেছিলেন বেবিচকের নিজস্ব শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো থাকা সত্ত্বেও তাদের সঙ্গে পরামর্শ না করেই বিশেষ বাহিনী গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ধরনের প্রস্তাব আইসিএওসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও প্রচলনের পরিপন্থি। এরপরই বেবিচক বিশেষ বাহিনী গঠনের উদ্যোগ থেকে সরে আসে। এমন অবস্থার মধ্যেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘এয়ার গার্ড অব বাংলাশে’ (এজিবি) নামে বিশেষ বাহিনী গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে কমিটির প্রধান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও অর্থ) মো: আতাউর রহমান খান বৃহস্পতিবার দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, কমিটির কাজ শুরু হয়নি। কমিটির প্রধান হিসেবে সংশ্লিষ্টদের কাছে তাঁদের প্রতিনিধি মনোনয়ন দেয়ার জন্য চিঠি দিয়েছি। যথাযথ প্রতিনিধি পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে সভা করে কমিটির কার্যক্রম শুরু করবো। এই কমিটির কোন মেয়াদ নেই উল্লেখ করে অতিরিক্ত সচিব আতাউর রহমান জানান, এই বিশেষ বাহিনীটি নতুন করে হবে। এটার গঠন (ফর্মেশন) কোন পর্যায়ের হবে, কিভাবে কাজ করবে এই বাহিনীটি, ব্যাক গ্রাউন্ড কি হবে-এসব দিকগুলো নিয়ে কমিটি কাজ করবে, সচিব পর্যায়ের বৈঠক করতে হবে। সব কিছু যাচাই বাছাই করে আমরা দেখবো, তারপর পরামর্শ ও সুপারিশ প্রনয়ন করে তা পেশ করা হবে। এরপরই সরকার এজিবি গঠনের দিকে এগিয়ে যাবে।