দেশের আরও ছয়টি রিক্রুটিং এজেন্সির ১১ জনের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা করার অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে সিন্ডিকেট করে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের মাধ্যমে প্রায় ৫২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে এসব মামলা করা হবে।
এ নিয়ে অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দুদক বলছে, অনিয়মে যুক্ত থাকা এসব রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের মেরিট ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের নামও রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে পাঁচগুণ পর্যন্ত অর্থ নিয়ে আত্মসাৎ করার তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি।
দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, ৩১ হাজার ৩৩১ জন কর্মীর কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকার পরিবর্তে গড়ে পাঁচগুণ বেশি অর্থ আদায় করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। ছয়টি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের আসামী করে মামলাগুলো করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। একটি মামলা হচ্ছে মেসার্স আমিন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের মালিক রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি ৭ হাজার ৪৩০ জন কর্মীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ১২৪ কোটি ৪৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা আদায় করেছেন। মামলা হচ্ছে মেরিট ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরনের বিরুদ্ধেও।
অভিযোগ রয়েছে, আসামির ৩ হাজার ৪৮৯ জনের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৫৮ কোটি ৪৪ লাখ ৭ হাজার ৫০০ টাকা নিয়েছেন। এ মামলায় কিরণের স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককেও আসামী করা হচ্ছে। একটি মামলাটি হচ্ছে সাদিয়া ইন্টারন্যাশনালের মালিক শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমানের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি ৩ হাজার ৩২১ জনের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৫৫ কোটি ৬২ লাখ ৬৭ হাজার ৫০০ টাকা নিয়েছেন। মামলা হচ্ছে ইমপেরিয়াল রিসোর্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. ইকবাল হোসাইন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিরুদ্ধেও।
দুদকের অভিযোগ, তারা ৮ হাজার ১০১ জনের কাছ থেকে অতিরিক্ত ১৩৫ কোটি ৬৯ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ টাকা আদায় করেছেন। একটি মামলায় আসামি হচ্ছেন আরআরসি হিউম্যান রিসোর্স সার্ভিস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ও এমডি মো. আলমগীর কবীর।
অভিযোগ অনুযায়ী, তারা ৫ হাজার ২০২ জনের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৮৭ কোটি ১৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। আরেকটি মামলা হচ্ছে থানেক্স ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের সাবেক এমডি আব্দুল্লাহ শাহেদ, পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীন নোমানী ও এমডি শমসের আহমেদের বিরুদ্ধে। দুদকের অভিযোগ, তারা ৩ হাজার ৭৮৮ জনের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৬৩ কোটি ৮৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা আদায় করেছেন।
এর আগে গত ১১ মার্চ ‘সিন্ডিকেট করে’ মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে ১ হাজার ১২৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে সাবেক অর্থমন্ত্রী আহম মোস্তফা কামালের প্রতিষ্ঠানসহ ১২ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এরপর গত ১৪ সেপ্টেম্বর ১ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১৩ রিক্রুটিং এজেন্সির শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। বিভিন্ন অনিয়ম ও সিন্ডিকেটের কারণে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নেয়া বন্ধ করে মালয়েশিয়া৷ ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর আবার বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রমিক নেয়ার চুক্তি করে দেশটি। ওই সময় শ্রমিক ভিসায় দেশটিতে যেতে সর্বোচ্চ ৭৮ হাজার ৫৪০ টাকা ফি নির্ধারণ করে সরকার। ২০২২ সালে এক অফিস আদেশে এ খরচ নির্ধারণ করেছিল প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশের সঙ্গে মালয়েশিয়া সরকারের চুক্তির আওতায় ২০১৬ সাল পর্যন্ত ১০টি নির্ধারিত রিক্রুটিং এজেন্সি দেশটিতে শ্রমিক পাঠাত। পরে ২০২১ সালে নতুন একটি সমঝোতা স্মারকে সই করে দুই দেশ। এতে রিক্রুটিং এজেন্সির সংখ্যা বাড়িয়ে ১০০টি করা হয়। তবে সেখানেও নতুন সিন্ডিকেট তৈরি হয় বলে অভিযোগ ওঠে। ১০০ এজেন্সির মধ্যে ২০-২৫টি এজেন্সির সিন্ডিকেটই নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে মালয়েশিয়ার কর্মী পাঠানোর পুরো প্রক্রিয়া।