বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ও গবেষক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট (বিআইআইটি)-এর প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চ্যান্সেলর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ একাডেমি অফ সায়েন্সেস (বিএএস)-এর সাবেক সভাপতি প্রফেসর এমিরেটাস ড. এম শমসের আলী ইন্তিকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

গত শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তিকাল করেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।

১৯৩৭ সালের ২১ নবেম্বর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় জন্ম নেওয়া প্রফেসর এম শমশের আলী ১৯৫৪ সালে যশোর জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ১৯৫৬ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে আইএসসি এবং ১৯৫৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে অনার্স ও ১৯৬০ সালে এমএসসি সম্পন্ন করেন। ১৯৬১ সালে ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবং ১৯৬৫ সালে তাত্ত্বিক নিউক্লিয়ার পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনে কর্মজীবন শুরু করেন এবং দেশে ফিরে এসে ঢাকা আণবিক শক্তি কেন্দ্রে সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার ও পরবর্তীতে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক অনারারি প্রফেসর হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৮২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ১৯৯২-১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ভিসি এবং ২০০২-২০১০ সালে সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪-২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির সভাপতি ছিলেন।

জামায়াতের শোক: বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী, গবেষক, লেখক, শিক্ষাবিদ প্রফেসর এমিরেটাস ড. এম. শমশের আলীর ইন্তিকালে গভীর শোক প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার গতকাল শোকবাণী দিয়েছেন।

প্রদত্ত শোকবাণীতে তিনি বলেন, বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী, গবেষক, লেখক ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর এমিরেটাস ড. এম. শমশের আলীর ইন্তিকালে আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি। তাঁর মৃত্যু দেশের বিজ্ঞান, শিক্ষা ও গবেষণাক্ষেত্রে এক অপূরণীয় ক্ষতি।

তিনি আরও বলেন, ড. এম শমশের আলী শুধু একজন বিজ্ঞানী নন, তিনি ছিলেন একজন আলোকবর্তিকা, যিনি তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানের দর্শন নিয়ে নিরলসভাবে গবেষণা করে গেছেন। দেশ-বিদেশে তাঁর অসংখ্য গবেষণা প্রবন্ধ গ্রন্থ পাঠক ও গবেষকদের আলোকিত করেছে। তিনি বিজ্ঞানকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার এক অনন্য পথিকৃৎ ছিলেন। তিনি বাস্তবজীবনে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলতেন।

বিআইআইটি’র শোক: বিআইআইটি’র প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মাহবুব আহমেদ এবং মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এম আবদুল আজিজ মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন এবং তাঁর মৃত্যুতে শোকসন্তপ্ত পরিবার ও স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জানিয়েছেন।

অধ্যাপক ড. এম আবদুল আজিজ বলেন, ‘প্রফেসর ড. এম শমসের আলীর অমূল্য অবদানকে জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে ও করবে। তিনি শুধু একজন যশস্বী বিজ্ঞানী ও শিক্ষকই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন ইসলামিক স্কলার ও দায়ী ইলাল্লাহ। তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ নেতা, আন্তরিক পরামর্শদাতা, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চাকারীদের অনুপ্রেরণা এবং গবেষকদের স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। শিক্ষা, বিজ্ঞান ও মানবতার প্রতি তাঁর অঙ্গীকার ছিল অটল। তাঁর জীবন ছিল জ্ঞানের দীপ্ত আলোকবর্তিকা- যেখানে বিজ্ঞান, আধ্যাত্মিকতা ও তাওহীদের বিশ্বাস মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল। তাঁর অনুপস্থিতি বিআইআইটি পরিবারের মাঝে গভীর শূন্যতার সৃষ্টি করেছে। তবে তিনি যে মূল্যবোধের শিক্ষা দিয়েছেন, সেই আদর্শ বুকে ধারণ করে তাঁর স্মৃতিকে সম্মান জানাতে আমরা আমাদের কাজ অব্যাহত রাখবো। আমরা মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করছি- আল্লাহ যেন তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনের সব উত্তম কাজ কবুল করেন, সব ভুলত্রুটি ক্ষমা করেন এবং তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসিব করেন। আমীন।’

তিনি বলেন, একজন শিক্ষাবিদ হিসেবে তিনি তাঁর ছাত্রদের মনে যে প্রেরণা ও আলোকের সঞ্চার করে গেছেন, তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি স্থায়ী অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। আমরা তাঁর রূহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজন, সহকর্মী এবং শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

ড. এম শমসের আলীর ইন্তিকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো: শামছুল আলম।

এ দিকে মর্ডাণ হরবাল গ্রুপের উপদেষ্টা ড. এম শমসের আলীর ইন্তিকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন, গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এমডি ডা. আলমগীর মতি। তিনি শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। উল্লেখ্য, ড. এম শমসের আলীর ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন ডা. আলমগীর মতি।